তিরন্দাজি প্রতিভা বাদ পড়ায় চাঞ্চল্য

বাংলার এক প্রতিভাবান মেয়ে খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে বত্রিশ জন মেয়ের নজিরবিহীন অভিযোগের চিঠি নিয়ে চাঞ্চল্য পড়ে গিয়েছে ময়দানে।

Advertisement

রতন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৭ ০৩:৪০
Share:

বাংলার এক প্রতিভাবান মেয়ে খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে বত্রিশ জন মেয়ের নজিরবিহীন অভিযোগের চিঠি নিয়ে চাঞ্চল্য পড়ে গিয়েছে ময়দানে।

Advertisement

বাংলার প্রতিশ্রুতিমান তিরন্দাজ দিরা বসাকের বিরুদ্ধে তাঁর সতীর্থরা গুরুতর অভিযোগ করেছেন ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭-তে লেখা একটি চিঠিতে। রাজ্য সংস্থা হয়ে সেটি কয়েকদিন আগে পৌঁছয় বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের দফতরে। চিঠিতে লেখা হয়েছে ‘২০১৬-তে পাতিয়ালায় আন্ত: বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতায় খেলতে গিয়ে দিরা সাইবার অপরাধ করেছেন। সতীর্থ তিরন্দাজদের সম্পর্কে তাঁর বয়ফ্রেন্ডকে (নাম গোপন রাখা হল) কুরুচিকর বার্তা বিলি করেছেন হোয়াটসঅ্যাপে। এরকম খেলোয়াড়ের সঙ্গে আমরা কোনও প্রতিযোগিতায় যেতে রাজি নই। কোনও ট্রায়ালেও নামতে রাজি নই।’

চিঠির তলায় রয়েছে ৩২ জন মেয়ে তিরন্দাজের সই। খেলার মাঠের এরকম নজিরবিহীন ঘটনা নিয়ে হইচই পড়ে গিয়েছে বাংলার ক্রীড়া মহলে। সবাই বিস্ময়ে প্রশ্ন করছেন, এরকম অশ্লীলতার অভিযোগ এত জন মেয়ে মিলে একটি মেয়ের বিরুদ্ধে করছে কেন? এর পিছনে কি রয়েছে কোনও অন্য খেলা? চিঠি পাওয়ার পরই বাংলা দলের ট্রায়াল থেকে বিদ্যাসাগর কলেজের স্নাতক বিভাগের বছর কুড়ির মেয়েটিকে ছেঁটে ফেলেন রাজ্য তিরন্দাজি সংস্থার কর্তারা। যে শিবির এখনও চলছে। কেন তাঁকে ছেঁটে ফেলা হল? সংস্থার সচিব রূপেশ কর প্রথমে ‘নো কমেন্টস’ বলে এড়িয়ে গেলেও পরে আনন্দবাজারের হাতে থাকা চিঠির কপির কথা শুনে মুখ খোলেন। বললেন, ‘‘আমাদের একটি বিশেষ কমিটি পুরো ঘটনার তদন্ত করেছে। সেখানে দিরা দোষী প্রমানিত হয়েছে। তাই ওকে বাংলার ট্রায়ালে নামতে দেওয়া হয়নি।’’ চিঠির বয়ানে লেখা না হলেও দিরার বিরুদ্ধে সই করা মেয়েরা নাকি মৌখিক অভিযোগও করেছেন যে, দিরা নাকি সতীর্থদের অসতর্ক মুহূর্তের ব্যক্তিগত ছবি এবং ‘আপত্তিকর’ কথাবার্তা তাঁর বন্ধুকে মোবাইলে মেসেজ করেছিলেন।

Advertisement

স্কুল গেমসে সোনা-সহ নানা প্রতিযোগিতায় পদক জেতা দিরা কী বলছেন? বৃহস্পতিবার বিকেলে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তিনি এসেছিলেন বাবা-মা-কে সঙ্গে নিয়ে। বিওএ প্রেসিডেন্ট অজিত বন্দ্যোপাধ্যায় ও সচিব স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনে কাঁদতে কাঁদতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত হয়েছে। আমার মোবাইল থেকে সতীর্থদের কোনও অশ্লীল ছবি বা অন্য কিছু কাউকে পোস্ট করিনি। আমি রাজনীতির শিকার। চক্রান্ত করে আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। আমাকে বাংলার হয়ে নামার ব্যবস্থা করুন। আমি খেলতে চাই। বড় হতে চাই।’’ ক্যারাটের ব্ল্যাক বেল্ট দিরা বলছিলেন, ‘‘ঘটনা সত্যি হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই তো আমার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতেন। কিন্তু এরপরেও আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা প্রতিযোগিতায় নেমেছি। তা হলে বাংলার হয়ে নামতে পারব না কেন? আর যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে সেটা তো ১৪ মাস আগের।’’

দিরার বক্তব্য শোনার পরে বিওএ প্রেসিডেন্ট অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়ও বেশ অস্বস্তিতে। বলছিলেন, ‘‘বহু দিন ময়দানে আছি। এরকম ঘটনা কখনও শুনিনি। ও আমার মেয়ের চেয়ে ছোট। খেলার এত ইচ্ছে। দেখে খারাপ লাগছে। ওকে ওর নিজের ক্লাবের সঙ্গে কথা বলতে বলেছি। নিয়মের বাইরে যাই কী করে? সত্যতা প্রমাণ করতে হলে তো পুলিশের কাছে যেতে হয়।’’

সিনেমা বা সিরিয়ালের চিত্রনাট্যের মতো খেলার মাঠে ঘটে যাওয়া এই ঘটনায় কারও কারও মনে প্রশ্ন জাগছে, দিরা খেলার মাঠের রাজনীতির শিকার নয় তো? এমনিতে রাজ্যের তিরন্দাজির যা হাল, তাতে একসঙ্গে ৩২ জন মেয়ে একসঙ্গে পাওয়াই কঠিন। তা হলে ৩২ জনের সই কোথা থেকে চলে এল? কারা সংগঠিত করল পুরো ব্যাপারটি? দিরা বিওএ অফিসে বসে বলছিলেন, ‘‘যাদের সই দেখছি, তাদের অনেককেই তো চিনি না।’’

দিরার এই ঘটনা নিয়ে প্রথম তোলপাড় হয় গত বছরের জানুয়ারিতে। যিনি পুরো ব্যাপারটি প্রথম যাচাই করেছিলেন তিনি দিরার প্রাক্তন ক্লাব ক্যালকাটা আর্চারির সচিব সঞ্জীব কুমার দে। তিনি বললেন, ‘‘যেটা চিঠিতে লেখা হয়েছে বলে শুনছি সেটা ঠিক নয়। ও ওঁর পরিচিত কাউকে কিছু কথা লিখেছিল। আমাদের ক্লাবে তখন ও খেলত। জানিয়েছিল, মেরে-ধরে ওর থেকে মোবাইল কেড়ে নিয়ে এসব লেখা হয়েছে। ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছিল। ও এমন কিছু করেনি যে বাংলা দলের ট্রায়ালে নামতে দেওয়া হবে না। এটা অন্যায়। মেয়েটা ভাল প্রতিভা।’’ প্রায় চোদ্দো মাস আগের ঘটনা টেনে এনে কেন তাঁকে বাংলা দলের ট্রায়ালে নামতে দেওয়া হচ্ছে না, সেই প্রশ্নও উঠছে। কিন্তু প্রশ্ন হল, দিরা না তাঁর প্রতিপক্ষ সতীর্থরা, কে ঠিক সেই রহস্যের জট খুলবে কে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন