স্কুল ক্রিকেটে ট্রিপল সেঞ্চুরি

বৃহস্পতিবার অনূর্ধ্ব ১৫ মেয়রস কাপে পাঠভবনের বিরুদ্ধে ১৯২ বলে ৩০০ রানের ইনিংস উপহার দিয়ে সেন্ট জেমস স্কুলের বছর পনেরোর আনাস আলি খান যেন সেই স্বপ্নের পথেই এক ধাপ এগিয়ে গেল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:১০
Share:

চমক: মেয়রস কাপে ১৯২ বলে ৩০০ করে নায়ক আনাস। নিজস্ব চিত্র

মাসখানেক আগের ঘটনা। কালীঘাট মাঠে ঝকঝকে ১৪৬ রান করে ম্যাচের সেরার পুরস্কার নিয়ে ফেরার পরে বাবার প্রশ্ন ছিল, ‘‘কী ভাবে গড়তে চাও জীবনকে? ক্রিকেটার হিসেবে, না কি আর পাঁচ জন ছেলের মতো পড়াশোনা করে চাকরির পরীক্ষা দিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে?’’ ছেলের দৃপ্ত জবাব ছিল, ‘‘পড়াশোনা করব অবশ্যই। কিন্তু ক্রিকেটার হিসেবেই নিজের জীবনকে তৈরি করতে চাই।’’

Advertisement

বৃহস্পতিবার অনূর্ধ্ব ১৫ মেয়রস কাপে পাঠভবনের বিরুদ্ধে ১৯২ বলে ৩০০ রানের ইনিংস উপহার দিয়ে সেন্ট জেমস স্কুলের বছর পনেরোর আনাস আলি খান যেন সেই স্বপ্নের পথেই এক ধাপ এগিয়ে গেল। ফোনে আনন্দবাজারের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে আনাসের গলায় উচ্ছ্বাস, ‘‘ক্রিকেট ছাড়া অন্য কিছু ভাবতেই পারি না। নিজেকে এ ভাবেই প্রতিষ্ঠিত করে পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে চাই।’’ বাবা আসলাম আলি খান বলছেন, ‘‘২২ ফেব্রুয়ারি থেকে বোর্ডের পরীক্ষা। তার জন্য পড়াশোনা করতে হচ্ছে। তারই সঙ্গে চলছে ক্রিকেট। ওর স্বপ্নের পথে আমি বাধা হয়ে দাঁড়াতে চাই না।’’

পোদ্দার কোর্টের মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে আনাসের ক্রিকেটের প্রতি প্রেম চার বছর বয়স থেকেই। বাবা আসলামের কথায়, ‘‘আমরা তো সেই সময়ে কোনও অনুষ্ঠানে যেতেও অস্বস্তি বোধ করতাম। যেখানেই যাক, আনাসের হাতে প্লাস্টিকের ব্যাট এবং বল থাকবেই।’’ ক্রিকেটের প্রতি সেই অমোঘ আকর্ষণ দেখেই আনাসকে তিনি ভর্তি করে দেন বিএনআর ক্লাবে। সেখানে তখন কোচিং করাতেন বিবেক সিংহের বাবা বীরেন্দ্র সিংহ। ক্রিকেটের আনুষ্ঠানিক হাতেখড়ি তাঁর কাছেই। এখন অবশ্য কোচ পাল্টে গিয়েছে। বর্তমানে বিএনআর-এর কোচ হেমেন বসুর কাছে সময় পেলেই ট্রেনিং করে আনাস।

Advertisement

২০১৬-১৭ মরসুমে অনূর্ধ্ব ১৪ অম্বর রায় ক্রিকেটই বদলে দিয়েছিল আনাসের জীবন। ছয় ম্যাচে ৫৫৭ রান। ছিল ২০৬ রানের ঝলমলে ইনিংস। বল হাতে (অফস্পিনার) ১৩ উইকেট। তার পরেই আনাস নজরে চলে আসে বাংলা অনূর্ধ্ব ১৬ দলের কোচ প্রণব রায়ের। বিরাট কোহালির অন্ধ ভক্ত জানিয়ে দিতে ভুলছে না, বাংলা দলের সেই প্রস্তুতি শিবিরে ‘প্রণব স্যর’ই কাটিয়ে দিয়েছে যাবতীয় জড়তা। আনাসের কথায়, ‘‘আগে ৩০-৪০ করার পরে মনে হত, অনেক রান করে ফেলেছি। প্রণব স্যর আমাকে বুঝিয়েছেন, ওই রানের কোনও মূল্যই নেই। উইকেটে সাহস নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে রানকে তিন অঙ্কে না নিয়ে যেতে পারলে কেউ গুরুত্ব দেবে না। সেই মন্ত্র আমার মানসিকতা পাল্টে দিয়েছে। এখন তো সেঞ্চুরি করেও তৃপ্তি পাই না। মনে হয়, আরও রান করতে হবে।’’ পাশাপাশি ফুটওয়ার্ক নিয়ে এবং টেকনিকের দিক থেকে আনাসকে পরিশীলিত করে দিয়েছেন প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার। তারই প্রতিফলন এ দিনের ইনিংসে।

১৯২ বলে ৩০০ রান। ইনিংসে রয়েছে ৩২টি বাউন্ডারি, ২১টি ছয়। আনাস বলছে, ‘‘স্যর একটা কথা আমার মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছেন। ভাল বলের বিরুদ্ধে ডিফেন্স করো। খারাপ বলকে সটান মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দাও। অহেতুক রক্ষণাত্মক হওয়া অর্থহীন। সেই পরামর্শ কাজে লাগিয়ে আজ ব্যাটিং করেছি।’’ চলতি মেয়রস কাপেও দারুণ ফর্মে রয়েছে সে। প্রথম রাউন্ডে তিন ম্যাচে সেঞ্চুরি ছিল একটি। দ্বিতীয় রাউন্ডের প্রথম ম্যাচে ৮২ রানের পরে এ দিনের ৩০০। আনাস বলছে, ‘‘এ ভাবেই টানা রান করে যেতে চাই। বাংলার বয়সভিত্তিক দলে জায়গা পাকা করতে হবে। খেলতে চাই বাংলা সিনিয়র দলে। ক্রিকেট ছাড়া অন্য কিছু ভাবতেই পারি না। এটাই আমার ধ্যানজ্ঞান।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন