মুম্বইয়ের কাছে হারটা একটা বিশ্রী হার। টানা দুটো ম্যাচে এ রকম খারাপ ক্রিকেট খেললাম আমরা।
টানা দু’টো বললাম এই কারণে যে, গত শনিবার কিঙ্গস ইলেভেন পঞ্জাবকে হারালেও আমরা আরও ভাল ক্রিকেট খেলতে পারতাম সে দিন। ইডেনে সে দিন ম্যাচের পর সাংবাদিক বৈঠকেও এই কথাগুলো বলেছিলাম আমরা। কোনও রকমে ম্যাচটা সে দিন বার করে নিয়েছিলাম। বৃহস্পতিবার ওয়াংখেড়ের ম্যাচেও সে রকমই হবে বলে আশা করেছিলাম। কিন্তু বোধহয় একটু বেশিই চাওয়া হয়ে গিয়েছিল। ম্যাচের শেষে যা পেলাম, সেটাই আমাদের প্রাপ্য ছিল। বলতে চাইছি, ভাল ক্রিকেট না খেলে জেতার আশা করাটা ঠিক নয়।
হারের জন্য পীযূষ চাওলাকে দোষ দেওয়াও ঠিক না। জানি, পীযূষের হাতে শট আছে। ও-ই কিঙ্গস ইলেভেন ম্যাচটা বার করে দিয়েছিল। গত বারের ফাইনালেও তো এই ভূমিকাটা নিয়েছিল। কিন্তু শুধু ওকে দোষ দেওয়াটা একেবারেই ঠিক নয়। প্রথম এবং সবচেয়ে বড় দোষ তো আমার। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ব্যাট করে ২৯ বলে ৩৮ তোলার পর ওদের বাঁ হাতি স্পিনার সুচিথকে একটা বাজে শট নিই। কভারের উপর দিয়ে বলটা ওড়াতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সোজা ওর মাথার উপর দিয়ে মারা উচিত ছিল বলটা। নয়তো ওই বলে একটা খুচরো রানও নেওয়া যেত। ওই ওভারে তো ১৪ রান তুলেই ফেলেছিলাম আমরা। ১১ ওভারে ৮৮ তোলার পর ইউসুফ পাঠান যদি আরও ৪-৫ ওভার টিকে থাকতে পারত, তা হলে ম্যাচটা হয়তো আমাদের পকেটেই আসত।
আমাদের ব্যাটসম্যানরা বোধহয় বড্ড বেশি স্ট্রোক খেলার প্রবণতা নিয়ে ব্যাট করছিল। খুচরো রান আর মাঝে মাঝে বাউন্ডারি নিয়েই যেখানে চলত, সেখানে অনর্থক বড় শটে না যাওয়াই ভাল। ইউসুফ ক্রিজে এসে সেটাই দেখাল। এ বার আইপিএলে দেখছি, ও কিন্তু ভেবেচিন্তে ব্যাট করছে। বল দেখে খেলছে। যেটা ওড়ানোর, সেটাই মাথার উপর দিয়ে ওড়াচ্ছে। পুশ, ড্রাইভ সবই থাকছে ওর ইনিংসে। অনেকে হয়তো বলছেন, মণীশ পান্ডেকে বসিয়ে দেওয়া হোক। আমি কিন্তু ওর উপর আস্থা রাখার পক্ষে। দলের সবার উপরই আস্থা রাখতে চাই আমি। মণীশের হয়তো সে দিন আরও ভাল খেলা উচিত ছিল। কিন্তু অল্পেতেই সূর্য, মণীশদের মতো প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের উপর থেকে আস্থা হারানোটা ঠিক নয়। একটা ছেলেকে দল থেকে বাদ দেওয়া তো খুব সোজা কাজ। কিন্তু তার পাশে দাঁড়িয়ে ফর্মে ফেরানোটাই তো আসল চ্যালেঞ্জ।
শনিবার রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে আসলে আমাদের স্নায়ুর পরীক্ষা। ওরা অসাধারণ দল। প্রতিভাবান ব্যাটসম্যানে ঠাসা। ভাল অলরাউন্ডারও রয়েছে। আমাদেরও ওদের জন্য ভাল বোলার রয়েছে। আশা করি আজ ম্যাজিক দেখাবে কেকেআর। এই মরণ-বাঁচন লড়াইটা জিতেই সিসিআই থেকে হাসি মুখে বেরোব আমরা।
শুক্রবার সারা দিনটা আগের দিনের হার নিয়ে ভেবেই কেটে গেল। আমার স্ত্রী নাতাশা অবশ্য সারা দিন ধরেই আমাকে মানসিক ভাবে চাঙ্গা রাখার চেষ্টা করে গেল। এই মন বড় মজাদার খেলা খেলে। নিজের অজান্তেই কখন যে ভাবনার সমুদ্রে টেনে নিয়ে যাবে আপনাকে, তা বুঝতেই পারবেন না। এটা আমার একদম পছন্দ নয়।
আজিনের যেমন ওর নতুন দুধের খাবারটা একদম পছন্দের নয়। এতে নাকি কলার ভাগটা বেশি। যাতে দুধের ভাগ বেশি থাকে, ওর আবার সেটাই বেশি পছন্দ। লেখাটা শেষ করে ওকে নিয়ে একটু মেরিন ড্রাইভে বেড়াতে যাব ভাবছি। বাবা ও মেয়ে— দু’জনেরই অন্য রকম কিছু দরকার এখন। নিজেদের সমস্যা থেকে বার করে আনার জন্য।