শেষ অলিম্পিক্স চাপে ফেলে দিল আমার অর্জুনকে

২০১২ লন্ডন অলিম্পিক্সে শ্যুটিংয়ে রুপোজয়ী। অভিনব বিন্দ্রাকে নিয়ে লিখলেন একমাত্র আনন্দবাজারে। সন্ধে থেকে মোবাইল বন্ধ করে টিভির সামনে বসেছিলাম। বন্ধুদের সঙ্গে বাজি ধরেছিলাম অভিনব নিয়ে। ধরেই নিয়েছিলাম, ওর হাত ধরে রিওতে ভারতের প্রথম পদক আসছে। কিন্তু ওর একটাই শট সব স্বপ্ন চুরমার করে দিল। ওর নিজের। সঙ্গে আমার মতো সমস্ত ভারতবাসীর।

Advertisement

বিজয় কুমার

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৬ ০৪:২৩
Share:

সন্ধে থেকে মোবাইল বন্ধ করে টিভির সামনে বসেছিলাম। বন্ধুদের সঙ্গে বাজি ধরেছিলাম অভিনব নিয়ে। ধরেই নিয়েছিলাম, ওর হাত ধরে রিওতে ভারতের প্রথম পদক আসছে। কিন্তু ওর একটাই শট সব স্বপ্ন চুরমার করে দিল। ওর নিজের। সঙ্গে আমার মতো সমস্ত ভারতবাসীর।

Advertisement

তবে আর পাঁচজন সাধারণ গড়পড়তা ভারতীয় যা হয়তো জানেন না, আমার মতো এ দেশের একজন শ্যুটার সেটা জানি। সেটা হল, অভিনব নিজেও এ বার খুব আশা করেছিল, কেরিয়ারের শেষ অলিম্পিক্স থেকে একটা না একটা পদক নিয়ে ফিরবেই।

এত দূরে বসে ঠিক জানি না কী করে ওর মতো ধীর-স্থির, বরফের মতো ঠান্ডা মাথার ছেলের ফাইনালের মোক্ষম সময় মনঃসংযোগ নষ্ট হয়ে গেল! অভিনবকে আমি দীর্ঘ দিন খুব সামনে থেকে দেখেছি। তাই জানি, ও কতটা ঠান্ডা মাথার ছেলে। শ্যুটিং রেঞ্জে যে কোনও কঠিন পরিস্থিতিতে নিজেকে কী করে সম্পূর্ণ শান্ত, স্বাভাবিক, টেনশনহীন রাখা যায়, সে সব ওর থেকেই তো শিখেছি। স্কিলের পাশপাশি যে মানসিকতার জোরে আমিও অলিম্পিক্সে একটা মে়ডেল পেয়েছি গত বার লন্ডনে। অভিনব একটা কথা সব সময় বলে, ‘‘শ্যুটার হওয়ার প্রথম শর্তই হল, মনকে পুরোপুরি শান্ত রাখতে হবে। বাইরের সব কিছু ভুলে একেবারে অর্জুনের মতো নিজের লক্ষ্যে মনঃসংযোগ করতে হবে। ও রকমই কেবল মাছের চোখটার মতো নিজের টার্গেটকে দেখতে হবে।’’ কিন্তু আমার অর্জুন যে সোমবার অল্পের জন্য লক্ষ্যচ্যূত হল!

Advertisement

অলিম্পিক্সের মতো সর্বোচ্চ মঞ্চে চাপ অসম্ভব বেশি থাকে। তবে সেটা নতুন নয় অভিনবের কাছে। আসলে এ দিন ওর পারফরম্যান্স দেখে আমার মনে হয়েছে, শেষ অলিম্পিক্স বলেই হয়তো একটু বেশি চাপ নিয়ে ফেলেছিল। হয়তো ফাইনালে ভাবছিল এটাই তো অন্তিম সুযোগ আমার! তবে এই দিনটার জন্যই তো নিজেকে তিলে তিলে তৈরি করেছিল অভিনব। সারাক্ষণ অনুশীলনে ডুবে থাকত। সকাল থেকে শুরু করত। চলত দুপুর পর্যন্ত। ১০০-১২০টা শট টানা মেরে যেত। বারবার। যতক্ষণ না নিখুঁত হচ্ছে। ভীষণ খুঁতখুঁতে ও। পারফেকশনিস্টের আদর্শ উদাহরণ।

অনেকেই জানেন না, একটা সময় ওর অনিদ্রা রোগ ছিল। এমনও গিয়েছে, যখন টানা চার-পাঁচ দিন না ঘুমিয়ে কাটিয়েছে। মনঃসংযোগে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটার কথা। আশ্চর্যজনক ভাবে অভিনব কিন্তু সেই সমস্যাও সামলে ট্রেনিং করে যেত। ওর জীবনে সব কিছুই আসলে শ্যুটিং ঘিরে। অনেকটা সেই বিজ্ঞাপনের মতো— ‘ইট শ্যুটিং, ড্রিঙ্ক শ্যুটিং, স্লিপ শ্যুটিং।’ সেই ছেলেকে এক চুলের জন্য চতুর্থ হয়ে ফিরতে হচ্ছে জীবনের শেষ অলিম্পিক্সে ভাবতেই খারাপ লাগছে।

ফাইনালের প্রথম দিকে ও একটু অস্বস্তিতে ছিল বলে আমার মনে হয়েছে। কিন্তু পরের দিকে নিজের পুরো ছন্দে ফিরে এসেছিল। তবে স্পোর্টসে কখন যে কী ঘটে, আগেভাগে বোঝা কঠিন। নয়তো ওর মতো ছেলেও বেশি চাপ নিয়ে ভুল করে বসে!

বিদায়ী অলিম্পিক্স হয়তো ভারতের সোনার ছেলের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকল না। কিন্তু অভিনবের কৃতিত্ব আমাদের দেশের খেলাধুলোয় চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন