অবিনাশ রুইদাস।
চুক্তি বিতর্কে জডিয়ে পড়া ইস্টবেঙ্গলের মিডিও অবিনাশ রুইদাসকে নিয়ে নাটক পঞ্চমাঙ্কে পৌঁছলো! কলকাতা থেকে দিল্লি হয়ে তা আছড়ে পড়ল বানিজ্য শহরেও।
আজ রবিবার মুম্বইয়ের পাঁচ তারা হোটেলে নিলামের জন্য মোট ২০৫ জন ফুটবলারের পূর্ণাঙ্গ তালিকা শনিবার প্রকাশ করেছেন ইন্ডিয়ান সুপার লিগের সংগঠকরা। সেখানে কোটি টাকার তারকা থেকে পাঁচ লাখের অনূর্ধ্ব-২১ ফুটবলার সবাই আছেন। কিন্তু আনাস-লিংডো-সুব্রত-প্রীতমদের মতো তারকাদের পিছনে হঠাৎ-ই নিলাম মঞ্চের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছেন অবিনাশ।
বজবজের চর্মকার পরিবারের তরুণ সবেমাত্র শুরু করেছেন ভাল খেলতে। প্রতিশ্রুতিমান ফুটবলার হিসাবে নজরও কেড়েছিলেন গতবার আইএসএলে কলকাতার জার্সিতে। কিন্তু সেই অবিনাশকে নিয়েই চরম নাটক হচ্ছে এখানে! এ দিন নীতা অম্বানির সংস্থার ব্যস্ত কর্তারা অনেকটা সময় ব্যয় করলেন তাঁর জন্য। তাঁকে নিয়ে হঠাৎ-ই যুদ্ধংদেহী মনোভাব আইএসএল কর্তাদের। এতটাই যে, ইস্টবেঙ্গল তাঁদের সঙ্গে অবিনাশের দু’বছরের চুক্তিপত্রের যে কপি জমা দিয়েছে ফেডারেশনে, তা তাঁরা পাঠাতে পারেন ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য। আইএমজিআরের এক কর্তা বললেন, ‘‘চুক্তি মিথ্যা প্রমাণিত হলে আমরা আইনের পথে যাব। কারণ ও বলছে ওকে ইস্টবেঙ্গলের পক্ষ থেকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’’ শেষ পর্যন্ত যদি অবিনাশের সঙ্গে লাল-হলুদের চুক্তিপত্রের ফরেন্সিক পরীক্ষা হয় তবে সেটা ভারতীয় ফুটবলে একটা বড় ঘটনা হবে সন্দেহ নেই। তা সে ফুটবলারটি যেই হোন।
কলকাতার এক ফুটবলারের বিষয়টি হঠাৎ এরকমভাবে সামনে চলে আসার কারণ তালিকায় ১৮০ নম্বরে অবিনাশ নাম প্রকাশিত হওয়ায়। তাঁর দর আঠারো লাখ টাকা দেখে কেরল, দিল্লি এবং গোয়ার কর্তারা তাঁদের ‘ইচ্ছের তালিকায়’ রাখতে চাইছেন অবিনাশকে। নিলামে কিনলে সমস্যায় পড়বেন কী না এটা আইএসএল কর্তৃপক্ষের কাছে এ দিন দুপুরে জানতে চান তাঁরা। সেখানেই ঠিক হয়, ফ্র্যাঞ্চাইজিদের মধ্যে যেই কিনুক তাদের পাশে থাকবে নীতা অম্বানির সংস্থা। অবিনাশ নিজে অবশ্য এ ব্যাপারে মুখ খুলছেন না। বললেন, ‘‘আমার এজেন্ট যা বলার বলবেন।’’ ইস্টবেঙ্গলও এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে নারাজ। তবে অবিনাশের মতো ফুটবলারকে পাওয়ার জন্য হুমকি দেওয়ার গল্প শুনে তাঁরা অবাক।
অবিনাশের মতো একজন জুনিয়রকে নিয়েই এই নাটক তা হলে আজ তারকা ফুটবলারদের নিয়ে কী হবে নিলামে? শনিবার দুপুরে কলকাতায় এটিকের নতুন কোচ টেডি শেরিংহ্যাম যখন সাংবাদিক সম্মেলন করছেন তখন মুম্বইয়ে পৌঁছে গিয়েছেন তাঁর টিমের গোলকিপার দেবজিৎ মজুমদার। সঙ্গে জেজে লালপেখলুয়া, মন্দার রাও দেশাইরা। রাতে আসার কথা সুনীল ছেত্রীর। সুনীল-জেজেদের টেনশন নেই। কারণ তাঁরা ইতিমধ্যেই চুক্তিবদ্ধ। অনুষ্ঠানের আডম্বর বাড়াতে এসেছেন। কিন্ত যাঁরা বিক্রি হননি? সেই সুব্রত পাল, ইউজেনসেন লিংডো, প্রীতম কোটাল বা অরিন্দম ভট্টাচার্যদের মধ্যে কিছুটা হলেও চাপা টেনশন।
পঁচাত্তর থেকে এক কোটি দাম যাঁদের সেই সুব্রত লিংডো-প্রীতম-অরিন্দমদের মতো জনা বারোকে ডেকে আনা হয়েছে মুম্বইতে। নিলামের সময় মূল হলের বাইরে একটি ঘরে বসে ওঁরা সরাসরি দেখবেন কে তাঁদের কিনছে!
জাতীয় ও ক্লাব দলের অন্যতম সফল সাইড ব্যাক গরীব ঘরের ছেলে প্রীতম কোটালের দাম উঠেছে পৌনে এক কোটি। বলছিলেন, ‘‘অনেকেই কথা বলেছে। বিক্রি হয়ে যাব হয়তো। কিন্তু যতক্ষণ না হচ্ছে ততক্ষণ তো একটা চাপা টেনশন থাকেই। দরাদরি হচ্ছে দেখব। অদ্ভুত একটা অনুভূতি হচ্ছে। জীবনে কোনও দিন তো এরকম হয়নি।’’ আর জাতীয় দলের অন্যতম সেরা মিডিও লিংডোর মন্তব্য, ‘‘এক কোটি দশ লাখ এ বার দর আমার। এর চেয়ে বেশি টাকা আগে পেয়েছি। এ বার তো সব ক্লাবের বাজেট কম। তাই টেনশন হচ্ছে।’’
ডোপ কলঙ্ক থেকে মুক্ত সুব্রত পাল বা দেশের আর এক নামী গোলকিপার অরিম্দম ভট্টাচার্যের অবশ্য টেনশন তুলনায় অনেক কম। কারণ এ বার দু’জন করে দেশী গোলকিপার টিমে রাখা বাধ্যতামূলক। বিদেশি গোলকিপার নিয়ে কোটা নষ্ট করতে চাইছে না কেউ। ফলে ৮৭ লাখের সুব্রত বা ৬৪ লাখের অরিন্দম বুঝে গিয়েছেন বিক্রি হবেনই। বিভিন্ন দলের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে মনে হল, ভাল গোলকিপারের চাহিদা বেশি। সুব্রতও বললেন, ‘‘কেউ না কেউ নেবেই। টেনশন তাই অন্যদের চেয়ে কম।’’ একই বক্তব্য অরিন্দমের। ‘‘সব দলেরই গোলকিপার চাই। আগে অভিজ্ঞ গোলকিপারই খুঁজবে সবাই। ঠিক বিক্রি হব।’’
দশ ফ্র্যাঞ্চাইজির মধ্যে পাঁচ ক্লাব গোলকিপার নিয়েছে। দরকার আরও পনেরো। নিলামের তালিকায় আছে তিরিশ জনের নাম। দেখার যে সুব্রত-অরিন্দমদের বাইরে কারা কারা বিক্রি হন?