সনির গোলেও জয় সেই অধরা

সনি নর্দে জাদুতে আপ্লুত হয়েও উৎসবে মেতে ওঠা হল না সবুজ-মেরুন ভক্তদের। ম্যাচের শেষ মিনিটে বিশ্বমানের একটা গোল থামিয়ে দিল মোহনবাগানের সব উৎসব। কেড়ে নিল দীপাবলির আনন্দও।

Advertisement

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:৪০
Share:

উচ্ছ্বাস: গোলের পরে সনিকে অভিনন্দন ডিকার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

মোহনবাগান ২ • আইজল ২

Advertisement

সনি নর্দে জাদুতে আপ্লুত হয়েও উৎসবে মেতে ওঠা হল না সবুজ-মেরুন ভক্তদের। ম্যাচের শেষ মিনিটে বিশ্বমানের একটা গোল থামিয়ে দিল মোহনবাগানের সব উৎসব। কেড়ে নিল দীপাবলির আনন্দও।

সবুজ-মেরুন জনতার ‘হার্টথ্রব’ কখন মাঠে নামবেন তা নিয়ে শনিবার সন্ধেতে প্রহর গুনছিলেন সদস্য, সমর্থকরা। বিরতির পর রিজার্ভ বেঞ্চ ছেড়ে সনি যখন উঠে দাঁড়ালেন, তখনই উত্তাল হল গ্যালারি। শুরু হয়ে গেল তাঁর নামে স্লোগান। শঙ্করলাল চক্রবর্তীর দল তখন ১-১ করে জয়ের অক্সিজেন পেতে মরিয়া। ঠিক ৬১ মিনিটে ৫০ নম্বর জার্সি পরে মাঠে নামলেন সনি। টানা পঞ্চম মরসুমে মোহনবাগান জার্সি পরে প্রথম ম্যাচে খেলতে নামার দিনে সম্মান জানাতে তৈরি ছিল সনির দলও। কিংসলে ওবুমেনেমে অধিনায়কের আর্মব্যান্ড খুলে দিলেন হাইতি মিডিয়োকে। সতীর্থদের কাছ থেকে এ রকম একটা অভিবাদন পাওয়ার পর যা করা উচিত তাই করলেন সনি।

Advertisement

মাঠে নামার আট মিনিটের মধ্যে পঁচিশ গজের আগুনে দৌড় শেষে দুর্দান্ত একটি গোল করে দলকে এগিয়ে দিলেন। প্রতিপক্ষ আইজলকে ছিন্নভিন্ন করার জন্য তাঁর সেই বিখ্যাত দৌড় আর চকিতে ঘুরে দাঁড়িয়ে সতীর্থকে পাস দেওয়ার পুরনো স্মৃতি ফেরালেন। দুটি গোলের সুযোগ তৈরি করে দিলেন দিপান্দা ডিকাকে। দেখে কে বলবে এই ফুটবলার সাড়ে দশ মাস পর কোনও টুর্নামেন্টে খেলছেন! কে বলবে অস্ত্রোপচারের পরে নয় মাস রিহ্যাব করে সদ্য ফিরেছেন মাঠে? সেই চেনা ছন্দ, সেই চেনা গতি! যা সাড়ে তিন বছর শতাব্দীপ্রাচীন ক্লাবকে বহু ম্যাচ জিতিয়েছে।

এত কিছু করার পরেও খেলার শেষে তাঁর চোখেমুখে দেখা গেল বিষন্নতা। ‘‘নিজের খেলায় আমি খুশি। গোল পেয়েছি। যদি ম্যাচটা জিততে পারতাম তা হলে বলতাম, গত চার বছরের চেয়েও এ বারের শুরুটা ভাল হল আমার।’’ এতদিনের যন্ত্রণা, সমালোচনা সরিয়ে মাঠে নামার সময় কী মনে হয়েছিল? ‘‘চেয়েছিলাম ডিকা বা হেনরিকে দিয়ে গোল করিয়ে ম্যাচটা জিতে ফিরব। ঈশ্বর করুণাময়। তাই গোলটা পেয়েছি।’’

সনির স্মরণীয় প্রত্যাবর্তনটা তেতো করে দিলেন যিনি, আইজলের সেই ডেভিড লালরিনমুয়ানাও এ দিন নেমেছিলেন পরিবর্ত হিসাবে। সনির মতোই। আরও বড় চমক হল মোহনবাগান সমর্থকদের উৎসব থামিয়ে দেওয়ার নায়কের ধাত্রীগৃহ আসলে কিন্তু মোহনবাগানই। দূর্গাপুরে মোহনবাগান অ্যাকাডেমি থেকেই উত্থান এই মিজো ফুটবলারের। ছোটবেলা থেকেই ফ্রি-কিকে গোল করায় দক্ষ। সেটাই শনিবার আছড়ে পড়ল মোহনবাগান গোলে। অতিরিক্ত সময়ের শেষ মিনিটে সবুজ-মেরুন সমর্থকরা যখন আবির খেলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তখনই বক্সের বাইরে থেকে ডেভিডের শট বাঁক খেয়ে পোস্টে লেগে গোলে ঢুকল। সামনে কিংগসলেদের চার-পাঁচ জনের মানবপ্রাচীর টপকে তা গোলে ঢোকার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই রেফারি খেলা শেষের বাঁশি বাজালেন।

পাঁচ বিদেশি নিয়ে নেমেছিল মোহনবাগান। জাপানি ইউতা কিনওয়াকিকে রক্ষণের ব্লকার হিসাবে নামানো হয়েছিল। তা সত্ত্বেও শুরুতেই গোল খেল মোহনবাগান। এবং সেটা পুরোপুরি রক্ষণের দোষে। আইজলের অ্যালবার্ট যখন বলটা দিলেন লালখাউমাউয়াকে (মাপুইয়া) তখন তাঁর সামনে চার জনের মোহনবাগান রক্ষণ। বল পেয়ে একটা হাফ টার্ন নিয়েই শট করলেন মাপুইয়া। গোলকিপার শঙ্কর রায় অনেক পরে ঝাঁপালেন। যেটা খারাপ দেখাল তা হল, মাপুইয়ার সবচেয়ে কাছে থাকা রাইট ব্যাক অরিজিৎ বাগুই বল কাড়ার জন্য তেড়ে না গিয়ে পিছন ফিরলেন। ১-০ পিছিয়ে থেকে মোহনবাগান সমতা ফিরিয়েছিল বিরতির দু’মিনিট আগে। পিন্টু মাহাতোর কর্ণার থেকে কিম কিমার দুর্দান্ত হেডে।

দিপান্দা ডিকা-হেনরি কিসেক্কা- সনিকে নিয়ে তৈরি মোহনবাগান আক্রমণ ভাগকে এ বার ধরা হচ্ছে আই লিগের অন্যতম সেরা। খাতায়-কলমে সেটা হয়তো ঠিক। কিন্তু টুনার্মেন্টের পরপর দু’ম্যাচ কিংগসলে-কিম কিমাদের ড্র দেখার পর যে ছবি ফুটে উঠছে তা কিন্তু আশঙ্কার। এই রক্ষণ নিয়ে আই লিগের খেতাব জয়ের স্বপ্ন কতটা সফল হবে তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। কোচ শঙ্করলাল অবশ্য বললেন, ‘‘শুধু রক্ষণকে দোষ দেব কেন? মাঝমাঠও তো দায়ী। এটা একটা বড় শিক্ষা। তবে আমি চিন্তিত নই। ১০ ম্যাচ এগিয়ে থেকেও লিগ জিতিনি। আট পয়েন্ট পিছিয়ে থেকে জিতেছি। আমাদের আরও সতর্ক হতে হবে।’’ কোচ তাঁর ব্যাখ্যা দিতেই পারেন। কিন্তু পরিস্থিতি যা, দু’ম্যাচে দু’পয়েন্ট পাওয়া পালতোলা নৌকায় রক্ষণে কোনও বিদেশি না উঠলে চ্যাম্পিয়ন হওয়া কঠিন।

মোহনবাগান: শঙ্কর রায়, অরিজিৎ বাগুই, কিম কিমা, কিংগসলে ওবুমেনেমে, অভিষেক আম্বেকর, পিন্টু মাহাতো (আজহারউদ্দিন), ইউতা কিনওয়াকি, ওমর এলউসেইনি, ব্রিটো পি এম (সৌরভ দাশ), দিপান্দা ডিকা, হেনরি কিসেক্কা।

আইজল: গুরপ্রীত সিংহ, হিমিংথন মাওয়িয়া, গোবিন সিংহ, করিম নুইরিন (লালচুনাইমুইয়া ভারতে), ভানলালডুয়াটসাংগা, বেকতুর টালগাটুলু (ডেভিড লালরিনমুয়ানা), অ্যালবার্ট জোহোমিনাগুইয়া, আলফ্রেড জারিয়ান, লালরিনফেলা (ডোডোজ), লালখেমপুয়ালা, আনসুমানা ক্রোমা।

আই লিগে দক্ষিণের ডার্বি: দ্বিতীয় রাউন্ডের পরে আই লিগের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চেন্নাই সিটি এফসি। অন্য দিকে, এখনও জয়ের মুখ না দেখা কেরলের গোকুলম এফসি রয়েছে ছয় নম্বরে। তাদের পয়েন্ট দুই। এই পরিস্থিতিতে রবিবার আই লিগের দক্ষিণ ভারতীয় ডার্বিতে গোকুলমের প্রতিপক্ষ চেন্নাই সিটি। চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে নামার আগে আত্মবিশ্বাসী গোকুলম কোচ বিনো জর্জ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন