প্রত্যাবর্তন: হেড কোচ হিসেবে ফের বিরাট সংসারে শাস্ত্রী। ফাইল চিত্র
প্রশ্ন: কোচ হিসেবে প্রত্যাবর্তনের পরের দিনটা কী ভাবে কাটল?
রবি শাস্ত্রী: উইম্বলডন দেখে কাটল। রজার ফেডেরারের দুর্দান্ত জয়। ফ্যাব ফোরের বাকি তিন জন চলে গিয়েছে। ফেডেরার অক্ষত।
প্র: তার মধ্যেই কি ক্রিকেট প্ল্যানিং শুরু হয়ে গিয়েছে হেড কোচের?
শাস্ত্রী: আরে, না, না, রিল্যাক্স। এ রকম তাড়াহুড়ো করে প্ল্যানিং হয় নাকি? আগে দেশে ফিরে বোর্ডের সঙ্গে বসি। টিমের সঙ্গে বসি। তার পর না হয় যা করার করব।
প্র: বিরাট কোহালির সঙ্গে কথা হল?
শাস্ত্রী: হ্যাঁ, কাল রাতেই এক বার হয়েছে। তবে সেটা খুব সামান্য কথাবার্তা। শ্রীলঙ্কা যাওয়ার আগে বিস্তারিত ভাবে কথা বলব।
প্র: কী ভাবে জানলেন কোচ হওয়ার খবর?
শাস্ত্রী: বোর্ডের সিইও (চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার) রাহুল জোহরি ফোন করলেন। বললেন, কনগ্র্যাচুলেশন্স, ইউ আর দ্য কোচ।
প্র: ক’টা বাজে তখন?
শাস্ত্রী: (কিছুক্ষণ ভেবে) ভারতীয় সময় ন’টা নাগাদ হবে।
প্র: অত দেরি করে? এখানে তো খবর ছড়িয়ে গিয়েছিল দুপুরেই।
শাস্ত্রী: সে আমি জানি না। আমার কাছে ওই সময়েই ফোন আসে।
আরও পড়ুন: শাস্ত্রীর সহকারী নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন বাড়ছে
প্র: ইংল্যান্ডে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এই দলটাকে গড়ে তুলেছিলেন। আর কয়েক দিন পরে ফের সেই ড্রেসিংরুমে ঢুকবেন, এটা ভেবে কী রকম অনুভূতি হচ্ছে?
শাস্ত্রী: কালই আপনাকে বলছিলাম, আমি খুব উত্তেজিত এই পুনর্মিলনটা নিয়ে। এখনও আমার উত্তেজনা কমছে না। মনে হয় শ্রীলঙ্কা যাওয়া পর্যন্ত এ রকমই থাকবে। উনিশ মাস এই দলটার সঙ্গে থাকার সময় দুর্দান্ত সব অভিজ্ঞতা হয়েছে। সেগুলো মনে পড়লে আরও ভাল লাগছে যে, ওদের সকলের সঙ্গে আবার দেখা হবে।
প্র: অনেকে বলছেন, রবি শাস্ত্রী হল ভারতীয় ক্রিকেটের ক্রাইসিস ম্যান। যখনই দল বিপদে পড়েছে, আপনাকে কোচ করে আনা হয়েছে।
শাস্ত্রী: (থামিয়ে দিয়ে) অলওয়েজ। শুধু কোচ বলে নয়, যখন ক্রিকেট খেলতাম তখনও। আপনি বোধ হয় আমার অভিষেক টেস্টে ডাক পেয়ে উড়ে যাওয়াটা ভুলে যাচ্ছেন। আমি সব সময় চ্যালেঞ্জের জন্য তৈরি।
প্র: নতুন ইনিংসে প্রথম সফর শ্রীলঙ্কা। যেখানে আপনার এবং কোহালির জুটি ইতিহাস তৈরি করল শেষ বার।
শাস্ত্রী: বললাম না, আমি চ্যালেঞ্জের জন্য তৈরি থাকি সব সময়। এ বারও তৈরি। গত বারের ভাল স্মৃতি আছে, ইয়েস। বাইশ বছর পর শ্রীলঙ্কায় টেস্ট সিরিজ জিতেছিলাম আমরা। কিন্তু নতুন প্ল্যানিং দরকার। শ্রীলঙ্কা নিজেদের দেশে ভয়ঙ্কর প্রতিপক্ষ হতে পারে। ওদের হাল্কা ভাবে নেওয়া যাবে না। কাউকেই হাল্কা ভাবে নেব না।
প্র: এর মধ্যে ভারতীয় দলে অনেক বিতর্কও কিন্তু হয়ে গিয়েছে।
শাস্ত্রী: (থামিয়ে দিয়ে) শুনুন, ও সব ভুলে যান। বিতর্ক-ফিতর্ক কিছু আর হবে না। আমরা এখন শুধু ক্রিকেটই খেলব। অন্য কোনও দিকে ফোকাস যাওয়ার ব্যাপারই নেই।
প্র: তবু ড্রেসিংরুমের শান্তি ফেরানোর কথা উঠছে। আপনি তো সংহতির উপর জোর দিতেন সব চেয়ে বেশি। সেটাই কি প্রথম কাজ?
শাস্ত্রী: আমার মনে হয় না খুব বেশি কিছু করার দরকার আছে। ড্রেসিংরুমের সংহতি ঠিকই থাকবে। শুনুন, এই ছেলেদের সঙ্গে আমি আঠেরো-উনিশ মাস (২০১৪ অগস্ট থেকে ২০১৬ এপ্রিল) থেকেছি। ওরা নিজেরাও জানে দলগত সংহতি একটা বড় ফ্যাক্টর। আমার মনে করিয়ে দেওয়ার দরকার নেই।
প্র: এই খোলামেলা ড্রেসিংরুম পরিবেশ গড়ে তোলার প্রক্রিয়াটা আপনার আমলেই শুরু হয়েছিল। তাতে প্রধান উপাদান কী ছিল?
শাস্ত্রী: ‘ট্রাস্ট ফ্যাক্টর’। আসল হল বিশ্বাস। টিম হল পরিবারের মতো। পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস না থাকলে সম্পর্কটা দাঁড়াবেই না।
প্র: ডিরেক্টর থাকাকালীন এটাই কি মনে করিয়ে দিতেন?
শাস্ত্রী: ইয়েস। এটাই আমাদের লক্ষ্য ছিল। আমি একা নই, মিলিত ভাবে দলের সকলের লক্ষ্য ছিল সুখী সংসার গড়ে তোলার। আর সেটা করার জন্য ওই শব্দটা হয়ে উঠেছিল সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ— বিশ্বাস।
প্র: এক বছর পরে কোহালিদের ড্রেসিংরুমে ঢুকে যদি দেখেন, বিশ্বাসের সেই বাতাবরণ নেই?
শাস্ত্রী: দাঁড়ান, দাঁড়ান। এ রকম দেখতে হবে কেন?
প্র: মাঝে তো আপনি ছিলেন না। নানা বিতর্ক হয়েছে। নানা ড্রেসিংরুম কাহিনি বাজারে ঘুরছে।
শাস্ত্রী: ধুর, ধুর। বললাম না বিতর্ক ভুলে যান। এ রকম কিছুই হবে না। আমি নিশ্চিত ছেলেরা সব ঠিকই আছে। দারুণ সব ছেলে আছে এই টিমে। ওরা পারফর্ম করতে চায়। ভাল খেলতে চায়। ওদের ওই তাগিদটা দেখি বলেই আমি মনে করি, এই টিম বিশ্বের সেরা হওয়ার ক্ষমতা রাখে। সমস্ত ফর্ম্যাটে সেরা হতে পারে।
প্র: গত বছর যখন ডিরেক্টরের পদ ছেড়ে চলে যেতে হল আপনি মেনে নিতে পেরেছিলেন? সত্যি বলুন।
শাস্ত্রী: মিথ্যা বলা হবে যদি বলি, আমাকে গত বছরের ওই দিনটা আঘাত করেনি। অবশ্যই আঘাত করেছিল কারণ, আমার মনে হয়েছিল আমি সমস্ত পরিশ্রমটা করে টিমটাকে একটা ভিতের উপর দাঁড় করাতে পেরেছি। টিমটা ছুটছে। আমি তখন স্বপ্ন দেখছি, আরও উচ্চ মহাকাশে ওদের নিয়ে যাব। সেই সময় আমাকে সরিয়ে দেওয়া হল। আমি বুঝতে পারিনি কেন সরানো হল। পারফরম্যান্স সকলের চোখের সামনেই রয়েছে। টিম কি খারাপ করছিল? আমার তো মনে হয় না।
প্র: তা হলে খুবই আঘাত পেয়েছিলেন বলতে হবে।
শাস্ত্রী: হ্যাঁ, পেয়েছিলাম। আমি যতই ঠিকঠাক থাকার চেষ্টা করি, যে কোনও মানুষই আঘাত পেত আমার জায়গায় থাকলে। তবে এটাও ঠিক যে, সেই খারাপ লাগার অধ্যায়টা থেকে আমি বেরিয়েও গিয়েছিলাম। ক্রিকেটের মধ্যেই আমি ডুবে ছিলাম। গত এক বছরে প্রায় ২০০ দিনের লাইভ টিভি কভারেজ করেছি আমি। কমেন্ট্রি বক্সে এত ব্যস্ত কখনও থাকিনি। ভারতীয় দলের ড্রেসিংরুমে না থাকলেও ক্রিকেটের মধ্যে ছিলাম বলে খারাপ লাগাটা কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলাম খুব তাড়াতাড়ি। কমেন্ট্রির কাজ আমি উপভোগ করি। চুটিয়ে কমেন্ট্রি করেছিল গত এক বছরে।
প্র: প্রথমে যখন কোচের পদের জন্য আবেদন চাওয়া হল, আপনি অ্যাপ্লাই করেননি। পরে আবার খোলার পরে করলেন। এটা কেন?
শাস্ত্রী: তার কারণ, দ্বিতীয় বার উইন্ডো ওপেন হওয়ার পরে আমার মনে হয়েছিল, দলটা কোনও সমস্যায় পড়েছে। এই ছেলেদের সঙ্গে আমি প্রায় দু’বছর ছিলাম। মনে হয়েছিল, ওদের এই সমস্যার সময় আমি চুপচাপ বাইরে বসে থাকব না। আমি নিজেকে অফার করব। সেটা ভেবেই নতুন করে আবেদন করি।
প্র: আর মঙ্গলবার সিইও যখন ফোন করলেন, কী বলতে ইচ্ছে করছিল?
শাস্ত্রী: আকাশের দিকে তাকিয়ে শুধু বললাম, গড ইজ গ্রেট!