ইন্ডিয়া ক্যাপ? আমার ট্রেন তো মনে হয় গাজিয়াবাদ পৌঁছে গিয়েছে

বক্তার বয়স একুশ। ছোট শহর থেকে ক্রিকেটের বড় মঞ্চে উদিত হওয়ার সময় গড়পরতা ক্রিকেট-প্রতিভার শুরুতে যে বিনীত ভাব থাকে, তা এঁরও রয়েছে। সেই স্থির সংকল্পও যে, ইন্ডিয়া না খেললে এই আইপিএল-টাইপিএল কিছুরই মানে হয় না।

Advertisement

গৌতম ভট্টাচার্য

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৬ ০৪:০১
Share:

কোটলায় দুরন্ত কুলদীপ।

বক্তার বয়স একুশ। ছোট শহর থেকে ক্রিকেটের বড় মঞ্চে উদিত হওয়ার সময় গড়পরতা ক্রিকেট-প্রতিভার শুরুতে যে বিনীত ভাব থাকে, তা এঁরও রয়েছে। সেই স্থির সংকল্পও যে, ইন্ডিয়া না খেললে এই আইপিএল-টাইপিএল কিছুরই মানে হয় না। তিনি কেকেআরের রহস্য-স্পিনার। ইডেনের পর কোটলারও নায়ক কুলদীপ যাদব। দুপুরে টিমরুমে বসে এক্সক্লুসিভ ইন্টারভিউ দিলেন এবিপি-কে।

Advertisement

প্রশ্ন: আইপিএলে এই যে সারাক্ষণ মাঠে গান চলে, একবার দম মারো দম। পরমুহূর্তেই দাবাং। তার পর হয়তো স্টেইং অ্যালাইভ। কনসেনট্রেট করতে অসুবিধে হয় না বল করার সময়?

কুলদীপ: অসুবিধে আগে হত। এখন সুইচ অন-সুইচ অফ শিখে গেছি। মনটা সরিয়ে নিতে পারি।

Advertisement

প্র: সেটা শিখলেন কী করে?

কুলদীপ: মাইক হর্নের কাছে। ওঁর স্পিচগুলো আমার খুব উপকারে লেগেছে। আমি এখন জানি এই পর্যায়ে সব কিছুর ওপরে মনটা কড়াকু রাখাই আসল।

প্র: সেটা তো সবাই জানে। কিন্তু এত ভাল গান বাজলে মন সরাব কী করে?

কুলদীপ: জাস্ট এটা ভেবে যে, বাইরের পৃথিবীতে ভেসে যেতে নেই। নিজের ভাল চাইলে দ্রুত নিজের ওপর মনোযোগ ফেরাও। মানুষ নিজেকে সবচেয়ে ভালবাসে। তুমিও তাই করো।

প্র: আর কে কে মেন্টাল ট্রেনিং দিয়েছেন?

কুলদীপ: ওয়াসিম ভাই। উনি আমাকে আন্ডার নাইন্টিন ওয়ার্ল্ড কাপ থেকে প্রথম স্পট করেন। সে বার আমি হ্যাটট্রিক করার পর উনি আমাকে আলাদা করে ডেকে নিয়েছিলেন। সেই স্নেহের হাত আজও সরেনি। সব সময় সাহস দেয়।

প্র: ইডেনে সানরাইজার্সের সঙ্গে ম্যাচটা এত বিপজ্জনক ছিল। একে তো হারলেই আউট। তা-ও আবার আপনি খেলছেন সিনিয়র স্পিনার পীযূষ চাওলাকে বসিয়ে। ওয়াসিম আক্রম কী বললেন ম্যাচের আগে?

কুলদীপ: জাস্ট বলেছিলেন বিন্দাস খেলনা। কোনও প্রেশার নিবি না। আর একজনের কথা আমি বলতে চাই। সুরেশ ভাই।

টিম হোটেল শান্ত

প্র: সেটা কে?

কুলদীপ: সুরেশ রায়না। সব সময় উনি আমাকে ইন্সপায়ার করেন। গুজরাত লায়ন্সের হয়ে খেললে কী হবে, প্রায়ই আমাকে ফোন করেন। গাইড করেন।

প্র: রায়নাও তো আপনার মতোই ছোট শহর থেকে উঠে আসা মানুষ।

কুলদীপ: হ্যাঁ, সে জন্যই বোধহয় আমাকে বেশি ভালবাসেন।

প্র: কী বাড়তি থাকে ছোট শহরের ছেলেদের মধ্যে যে, বড় শহরকে দেখাব আমরাও পারি। নেহাত দূরে থাকি বলে অবজ্ঞা কোরো না!

কুলদীপ: ঠিক তাই যে, দেখাব আমরাও পারি। ছোট শহর থেকে উঠে আসা ছেলেরা সহজে তাদের লক্ষ্য থেকে চোখ সরায় না।

প্র: আর আপনার লক্ষ্য নিশ্চয়ই ইন্ডিয়া টিমে খেলা?

কুলদীপ: অবশ্যই। ওটাই তো জীবনের একমাত্র চাওয়া।

প্র: মনে করা যাক ইন্ডিয়ান টিম হল দিল্লি স্টেশন আর আপনি সেখানে পৌঁছবেন বলে কলকাতা থেকে ট্রেনে। আপনার ট্রেন এখন কোথায় আছে বলে মনে হয়?

কুলদীপ: আমার এখন স্টেশন?

প্র: ইয়েস। মোগলসরাই?

কুলদীপ: না, না। আরও আগে। আপনি বলতে পারেন কিছু বাদেই ঢুকে পড়ব। এখন আমি গাজিয়াবাদ (হাসি)।

প্র: বাঁ হাতি চায়নাম্যান বোলার এত বিরল যে, নিয়মিত প্র্যাকটিস না করলে কিপার তো বুঝতেই পারবে না কোনটা ভেতরে যাবে। কোনটা বাইরে।

কুলদীপ: একদম ঠিক কথা।

প্র: অসুবিধে হয় না আইপিএলে মাত্র দু’মাস রবিন উথাপ্পার সঙ্গে থেকে কম্বিনেশন তৈরি করতে? এর জন্য তো কিপারের সঙ্গে নিয়মিত প্র্যাকটিস দরকার।

কুলদীপ: একটু তো অসুবিধে হয়। তিন বছর এই ফ্র্যাঞ্চাইজিতে কাটালাম। এখনও অ্যাডজাস্টমেন্ট না হলে তো প্রবলেমই। আমার ইউপি টিমে উপেন যাদব বলে যে কিপারটা আছে, ও আমাকে ঠিক বোঝে।

প্র: কাল মনে করুন বিরাটের সঙ্গে ম্যাচ। প্রথম ওভারেই আপনি মুখোমুখি। কী ভাবে সামলাবেন?

কুলদীপ: এনজয় করব। ভয়-টয় পাব না। নিজেকে বলব টাইট রাখো। একটু বেগতিক হলেই ও তোমাকে মেরে দেবে। বিরাট সামনে মানে ফুল কন্ট্রোল দরকার বোলিংয়ে। আর মনে রাখতে হবে, ব্যাটসম্যান তো। এক বার ভুল করলেই খেয়ে নেব!

ছবি: গৌতম ভট্টাচার্য ও বিসিসিআই

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন