চেনা ছন্দে অশ্বিন। ছবি: এএফপি।
ছ্যাকড়া গাড়ি হঠাৎ ফেরারির গতিতে ছুটলে দৃশ্যটা কী রকম হয়, সেটাই দেখল রবিবারের উপ্পল।
প্রথম তিন দিনে পড়েছিল মাত্র ১২টা উইকেট। সেই ঝিমুনি এক ঝটকায় উধাও হয়ে গেল চতুর্থ দিন। সারা দিনে এগারো উইকেট তো পড়লই, রবিবার দিনের শেষে পিচ যে ভাবে ঘূর্ণি হয়ে ওঠার ইঙ্গিত দিল, তাতে শেষ দিন বাংলাদেশের কপালে যে অনেক দুঃখ লেখা আছে সেটা বলে দেওয়াই যায়।
অথচ, গত কাল টেস্টে বিশ্বের এক নম্বর দলের বোলিং আক্রমণ গোটা একটা সেশনে উইকেট পায়নি। শনিবার শেষ সেশনে। তাদেরই পেসাররা রবিবার সকাল থেকেই যেন আগুন ছোটাচ্ছিলেন। ভুবনেশ্বর কুমার দিনের প্রথম ওভারেই মিরাজকে বোল্ড করার পর কোহালি যে রণহুংকারটা ছাড়লেন, তাতেই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল ভারতীয় অধিনায়ক ঠিক কি চাইছেন তাঁর বোলারদের কাছে— যত দ্রুত পারো ওদের ইনিংসটা উড়িয়ে দাও।
‘‘আমরা তৃতীয় দিনই বল ঘুরবে আশা করেছিলাম। কিন্তু বলটা আরও ঘুরতে শুরু করল চতুর্থ দিন। আমাদের বোলাররা যে ভাবে একটা ইউনিট হিসেবে পারফর্ম করেছে তার পুরো কৃতিত্বটাই ওদের। উইকেটটা খুব সহজ কিন্তু ছিল না। উইকেট তুলতে হলে প্রচুর ধৈর্য দেখাতে হচ্ছিল। তার জন্য অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে আমাদের বোলারদের।’’
আরও একটা ব্যাপার বোঝা যাচ্ছিল। ঠিক কী কারণে কোহালির টিম এখন বিশ্বের এক নম্বর টেস্ট দল। ঠিক যেখানে যতটা আগ্রাসন দরকার, সেটা দেখানো। সেটাই দেখাল এ দিন ভারতীয় বোলাররা। বাংলাদেশের লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানদের আরও বেশি গতিতে, টানা শর্ট বলে দিশাহারা করে দেওয়ার পর অশ্বিন-জাডেজাদের স্পিনের সামনে ফেলে দিয়ে। বাংলাদেশ এই আক্রমণের সামনে ৩৮৮ তোলার পর আর টেকেনি। তাও মুশফিকুর রহিম না থাকলে এ পর্যন্তও আসা হত না তাঁদের। তবে টেস্টে কেরিয়ারের পাঁচ নম্বর সেঞ্চুরি করেও ফলো অনের বিপদসীমার বাইরে দলকে পৌঁছে দিতে পারেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ২৫০ নম্বর উইকেট মুশফিকুর। আড়াইশো উইকেটের মাইলস্টোনে পৌঁছনো দ্রুততম (৪৫ টেস্টে) বোলারের রেকর্ড করে ফেলেন অশ্বিন তাঁকে ফিরিয়ে।
দ্বিতীয় ইনিংসে অশ্বিনের প্রথম শিকার। বিরাটের তালুবন্দি তামিম। ছবি: পিটিআই।
ভারতীয় স্পিনার এখন বিদেশি দলগুলোর কাছে কতটা ঘাতক হয়ে উঠেছেন সেটা বোঝাতে গিয়ে পূজারা বলছিলেন, ‘‘অশ্বিনের গেমসেন্সের জবাব নেই। সম্ভবত এখন সবচেয়ে ভয়ঙ্কর স্পিনার। বোলিং করার সময় ও ব্যাটসম্যানের মতো চিন্তা করে। বুঝতে চেষ্টা করে ব্যাটসম্যানের দুর্বলতা ঠিক কোথায়, আর ঠিক কোন এরিয়াটায় ওকে বলটা রাখতে হবে। তাই এমন কোনও প্রতিপক্ষ নেই, যারা অশ্বিনকে সমঝে চলে না।’’
তবে প্রথম ইনিংসে ২৯৯ রানে এগিয়ে থাকলেও ভারত বাংলাদেশকে ফলো অন করায়নি। পূজারা বলছিলেন, ‘‘আমরা যেহেতু প্রায় একশো ওভার ফিল্ডিং করে ফেলেছিলাম তাই প্ল্যানটা ছিল বোলারদের একটা সেশনে বিশ্রাম দেওয়ার। তাঁর পর মাঠে তরতাজা হয়ে উইকেটের জন্য যাতে বোলাররা ঝাঁপাতে পারে। তাই টার্গেট ছিল ১৫০-২০০ রান দ্বিতীয় ইনিংসে যোগ করার।’’
তবে ভারত কিন্তু কিছুটা চাপে পড়ে গিয়েছিল দ্বিতীয় ইনিংসে দ্রুত দু’টো উইকেট হারিয়ে। কেএল রাহুলের দু’ইনিংসেই ব্যর্থতা এই টেস্টে জিতলেও ভারতকে কিন্তু একটা চিন্তায় রেখে দেবেই। বিশেষ করে সপ্তাহ দেড়েক পড়েই অস্ট্রেলিয়া সিরিজ শুরু হওয়ার কথা যেখানে। চিন্তাটা টপ অর্ডার নিয়ে। যে ব্যর্থতা উপ্পলে চোখে পড়েনি পূজারা দ্রুত হাফসেঞ্চুরি (৫৮ বলে ৫৪) আর কোহালি ৪০ বলে ৩৮ রানের ইনিংসে বাংলাদেশের সামনে জেতার জন্য রানের পাহাড় দাঁড় করিয়ে দেওয়ায়।
শেষ দিন ভারতের তাই চাই তিনটে সেশনে সাত উইকেট। আর বাংলাদেশের ৩৫৬ রান। বাংলাদেশ সমর্থকরা অবশ্য একটা তথ্যে কিছুটা আলো দেখতে পারেন। উপমহাদেশে চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ রান (৪১৩) আর সবচেয়ে বেশি ওভার খেলার নজির (১৪২) কিন্তু একটা দলেরই—বাংলাদেশ।
ভারত
প্রথম ইনিংস: ৬৮৭-৬ ডি:
বাংলাদেশ
প্রথম ইনিংস: (আগের দিন ৩২২-৬ এর পর)
মুশফিকুর ক ঋদ্ধি বো অশ্বিন ১২৭
মেহেদি হাসান বো ভুবনেশ্বর ৫১
তাইজুল ইসলাম ক ঋদ্ধি বো উমেশ ১০
তাসকিন ক রাহানে বো জাডেজা ৮
কামরুল অপরাজিত ০
অতিরিক্ত ১৫
মোট ৩৮৮
পতন: ৩২২, ৩৩৯, ৩৭৮, ৩৮৮।
বোলিং: ভুবনেশ্বর ২১-৭-৫২-১, ইশান্ত ২০-৫-৬৯-১,
অশ্বিন ২৮.৫-৭-৯৮-২, উমেশ ২৫-৬-৮৪-৩, জাডেজা ৩৩-৮-৭০-২।
ভারত
দ্বিতীয় ইনিংস:
বিজয় ক মুশফিকুর বো তাসকিন ৭
কেএল রাহুল ক মুশফিকুর বো তাসকিন ১০
পূজারা অপরাজিত ৫৪
কোহালি ক মাহমুদ্দুলাহ বো সাকিব ৩৮
রাহানে বো সাকিব ২৮
জাডেজা অপরাজিত ১৬
অতিরিক্ত ৬
মোট ১৫৯-৪ ডি:
পতন: ১২, ২৩, ৯০, ১২৮
বোলিং: তাইজুল ৬-১-২৯-০, তাসকিন ৭-০-৪৩-২,
সাকিব ৯-০-৫০-২, মেহেদি হাসান ৭-০-৩২-০।
বাংলাদেশ
দ্বিতীয় ইনিংস:
তামিম ক কোহালি বো অশ্বিন ৩
সৌম্য ক রাহানে বো জাডেজা ৪২
মোমিনুল ক রাহানে বো অশ্বিন ২৭
মাহমুদ্দুলাহ ব্যাটিং ৯
সাকিব ব্যাটিং ২১
অতিরিক্ত ১
মোট ১০৩-৩
পতন: ১১, ৭১, ৭৫
বোলিং: ভুবনেশ্বর ৫-২-১৪-০, অশ্বিন ১৬-৬-৩৪-২,
ইশান্ত ৩-০-১৯-০, উমেশ ৩-০-৯-০, জাডেজা ৮-২-২৭-১।