নিশ্চিত হারা ম্যাচ থেকে পয়েন্ট কলকাতার

মাইক্রোফোন হাতে স্টেডিয়ামের একটা দিকে মঞ্চ সাজিয়ে বসে থাকা ডিজের অবস্থা তখন করুণ। হঠাৎ পড়া ঠান্ডায় সরোবরে বসে তিনি হয়তো একটু কাঁপছিলেনও!

Advertisement

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৩১
Share:

হিউমের গোল ও উচ্ছ্বাস। বৃহস্পতিবার।- আইএসএল ও উৎপল সরকার

নর্থইস্ট-১ : আটলেটিকো-১

Advertisement

(ভেলেজ) (হিউম)

মাইক্রোফোন হাতে স্টেডিয়ামের একটা দিকে মঞ্চ সাজিয়ে বসে থাকা ডিজের অবস্থা তখন করুণ। হঠাৎ পড়া ঠান্ডায় সরোবরে বসে তিনি হয়তো একটু কাঁপছিলেনও!

Advertisement

পাহাড়ি হানায় কলকাতার রক্ষণও তখন থরহরি কম্প। এই গোল খেল, এই গোল খেল বলে মাঝেমধ্যে দীর্ঘশ্বাস পড়ছে গ্যালারিতে। এই অবস্থায় ঘরের মাঠের ডিজে বলবেনই বা কী?

আর তখনই ম্যাচটার ক্লাইম্যাক্স। ইয়ান হিউমের গোল।

খেলার শুরুতে ডিজে ভদ্রলোককে এটিকে সমর্থকদের উদ্যেশ্যে স্লোগান তোলার ঢঙে বেশ কয়েক বার বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘জিতবে কে? বলুন, এ-টি-কে’। তার পর আবার তাঁর ‘এ-টি-কে, এ-টি-কে’ চিৎকার যখন উঠল, খেলা ততক্ষণে শেষের প্রহর গুনছে।

আটলেটিকো কলকাতার কুখ্যাত রক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন তুললেই ইদানিং চটে উঠছেন কোচ জোসে মলিনা। বৃহস্পতিবারও আইএসএলের লিগ টেবলের লাস্ট বয়ের কাছে যে ভাবে হেনস্থা হতে হল সেরোনো-অর্ণব-প্রবীরদের, তার পর তাঁদের স্প্যানিশ কোচের কোনও অজুহাত আর ধোপে টিকছে না। লিখতেই হচ্ছে, আর যাই হোক, দশটা ম্যাচ খেলে ফেলার পরেও তাঁর দলের রক্ষণ তৈরি করতে চূড়ান্ত ব্যর্থ মলিনা। নোট বই খুলে দেখছি, দেবজিতের সঙ্গে বোধহয় ফুটবল-ঈশ্বরও না বাঁচালে কমপক্ষে তিন গোলে এ দিন হারতে হত কলকাতাকে। মলিনার সৌভাগ্য, এই নিশ্চিত হারা ম্যাচ থেকেও এক পয়েন্ট পেয়ে গেলেন। মাদ্রিদ থেকে আন্তোনিও হাবাসের প্রথম মরসুমের মতো মলিনাও কি চ্যাম্পিয়ন্স লাক সঙ্গে নিয়ে এসেছেন এ বার কলকাতায়? হাবাস ড্র করতে করতে উদ্বোধনী আইএসএলের ট্রফিটা পেয়ে গিয়েছিলেন। মলিনার কপাল সে দিকে এগোচ্ছে কি না কে বলতে পারে?

কী হবে-না হবে তা নিয়ে গবেষণা চলুক। এ দিন দেখা গেল, খেলার শুরুতেই কলকাতা ভেলেজের গোলটা হজম করার সময় ভিভিআইপি বক্সে বসা আটলেটিকোর দুই মালিক সঞ্জীব গোয়েন্কা আর সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে একসঙ্গে মাথায় হাত দিয়ে আফসোস করতে। আবার ম্যাচ শেষে মলিনার মতোই তাঁদের মুখে স্বস্তি! কিন্তু কলকাতা শিবিরে সেই স্বস্তি আনল হিউমের যে গোলটা এ দিন আনল সেটা কি বৈধ ছিল? কারণ, মাঠের সে দিকের সহকারী রেফারি গোলে বল ঢোকার আগে হাতের পতাকাটা অর্ধেক তুলেও নামিয়ে নিলেন! সাফ কথা, সহকারী মেনে নিয়েছিলেন রেফারি উমেশ বোরার গোলের সিদ্ধান্তের বাঁশি বাজানোকে।

ম্যাচ শেষের এক মিনিট আগে হিউমের করা গোলটা অফসাইডে হয়েছে— এই দাবিতে রেফারিকে ঘিরে ধরেছিলেন নর্থ-ইস্টের ভালেজ-সত্যসেনরা। খেলা শেষে রেফারির দিকে তেড়েও গিয়েছিলেন পাহাড়ি দলটার কেউ কেউ। কোচ নেলো ভিনগাদা তাঁর ক্ষুব্ধ ফুটবলারদের সরিয়ে দিলেও তার পর নিজেই তর্ক জুড়ে দিলেন রেফারির সঙ্গে। সাংবাদিক সম্মেলনে কটাক্ষও করলেন রেফারিংয়ের।

পাহাড়ি টিমগুলোর বরাবরের সেরা সম্পদ তাদের দৌড়। নর্থ-ইস্টও সেই রসদটা সঙ্গে নিয়ে এসেছিল সমতলে। রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়ামে কলকাতা-বধের জন্য গতিই ছিল ভিনগাদার ছেলেদের সেরা অস্ত্র। যে গতিকে শক্তির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়ে নিজের টিমকে আরও ভয়ঙ্কর করে তুলেছিলেন পর্তুগাল জাতীয় দলের প্রাক্তন কোচ। যেটা মাঠে আরও কার্যকর করলেন রোমারিক নামে এক গাট্টাগোট্টা মিডিও। চোট সারিয়ে ফিরে এসেই আইভরি কোস্ট ফুটবলার দেখালেন কোচের দেওয়া দায়িত্ব কী ভাবে নিঁখুত প্রয়োগ হয়। জাভি লারার পা থেকে এটিকে আক্রমণ শুরু হবে ধরেই নিয়েছিলেন নর্থ-ইস্ট কোচ। সে জন্য একটা নির্দিষ্ট প্ল্যান ছিল লারার জন্য। রোমারিক কলকাতার স্প্যানিশ ফুটবলারকে অকেজো করে দিয়ে ঘেঁটে দিলেন মলিনার পুরো গেমপ্ল্যানই।

কলকাতা মরসুমের শুরু থেকে রক্ষণ-রুগ্নতায় ভুগছে। এ দিনও সেই রোগের উপসম হয়নি। উল্টো দিকে কার্ডের গেরো কাটিয়ে ফিরেছেন টিমে ফিরেছেন টুর্নামেন্টের যুগ্ম সর্বোচ্চ গোলদাতা নর্থ-ইস্টের আলফারো। তাঁর দিকে নজর রাখতে গিয়ে হঠাৎই গোল খেয়ে বসে কলকাতা। সেরেনোর মিস পাস ধরে গোল করে যান ভেলেজ। সেরেনো পর্তুগাল জাতীয় দলের ফুটবলার, তিনি এ রকম ক্ষমাহীন ভুল করলেন কী করে?

ম্যাচের শেষ অবশ্য দু’দিকের দুই বঙ্গসন্তান গোলকিপারের অমীমাংসিত ডুয়েলে। সুব্রত পাল বনাম দেবজিৎ মজুমদার। চোট নিয়ে প্রায় জোর করে মাঠে নেমেও সুব্রতকে যদিও তেমন হ্যাপা পোহাতে হয়নি। নব্বই মিনিটে একটা মাত্র সত্যিকারের কঠিন শট রুখতে হল জাতীয় দলের রিজার্ভ কিপারকে।

মলিনা এ দিন তাঁর স্ট্র্যাটেজিতে কিছুটা বদল ঘটিয়েছিলেন। হয়তো বুঝেছিলেন সামিঘ দ্যুতি না থাকলে তাঁর টিমের সব ওলটপালট হয়ে যায়। সে জন্য হিউমকে স্ট্রাইকার করে পস্টিগাকে পিছন থেকে খেলালেন। বোরহাকে ডিফেন্সিভ স্ক্রিন থেকে বেশি করে আক্রমণে ওঠার নির্দেশ ছিল। কিন্তু দুটোই বুমেরাং হল। রক্ষণ এবং মাঝমাঠের মাঝখানে বড় একটা ফাঁক তৈরি হচ্ছিল বারবার। আর সেখান থেকে দৌরাত্ম্য করে গেল নর্থ-ইস্ট। এতটাই যে, একটা সময় পস্টিগা-হিউমকে নিজেদের বক্সে নেমে এসে সামাল দিতে হল।

দ্যুতির জায়গায় ডিকাকে ব্যবহার করেছিলেন মলিনা। কিন্তু ডিকা তো খেলতেই পারছেন না! তা সত্ত্বেও কেন তাঁকে খেলাচ্ছেন কোচ তা তিনিই জানেন। এ দিন ইস্টবেঙ্গলের এক বর্তমান আর এক প্রাক্তন খেললেন দু’টিমে। এটিকের লেফট উইং ডিকা আর নর্থ-ইস্টের রাইট ব্যাক নির্মল ছেত্রী। তা দু’জনের ডুয়েলে ডিকাকে ‘নক আউট’ করে দিলেন নির্মল। বাধ্য হয়ে ডিকাকে বসিয়ে অবিনাশ রুইদাসকে নামাতে হল। তিনিও ডোবালেন। সত্যি কথা বলতে, দেবজিৎ ছাড়া কলকাতার একজন ফুটবলারেরও মার্কশিট লিখতে বসলে কাউকে পাস মার্ক দেওয়া যায় না এই ম্যাচে। দেবজিৎ ফের বাঁচালেন এ দিন মলিনার এটিকেকে।

এ বার আসল প্রশ্নটা। কলকাতা কি শেষ পর্যন্ত সেমিফাইনাল যেতে পারবে? বাকি আরও চারটে ম্যাচ। চেন্নাইয়ান আর এফসি গোয়ার সঙ্গে তাদের মাঠে। কেরল ব্লাস্টার্স আর হাবাসের পুণের সঙ্গে ঘরের মাঠে। পয়েন্ট টেবলের যা অবস্থা তাতে শেষ চারে যেতে হলে কমপক্ষে আরও পাঁচ পয়েন্ট পেতেই হবে কলকাতাকে।

কাজটা কঠিন তবে অসম্ভব নয়।

এটিকে: দেবজিৎ, প্রবীর, সেরেনো, অর্ণব, রবার্ট, বোরহা (নাতো), লারা, পিয়ারসন (বেলেনকোসো), ডিকা (অবিনাশ), হিউম, পস্টিগা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন