ATK

বলবন্তের শেষ মিনিটের গোলে ফের শীর্ষে এটিকে

নব্বই মিনিটে বলবন্ত সিংহ মাঠে নামলেন। নেমে চার মিনিটের মধ্যেই অসাধারণ হেডে গোলটা করে ফের এটিকে-কে লিগ শীর্ষে নিয়ে গেলেন পঞ্জাব-তনয়।

Advertisement

রতন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২০ ০৩:৩৫
Share:

উল্লাস: গোলের পরে হুঙ্কার বলবন্তের। সোমবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

এটিকে ১ • নর্থইস্ট ০

Advertisement

রয় কৃষ্ণ নিশ্চিত গোলের বল পেয়েও ব্যর্থ হলেন। সোসাইরাজের শট গোললাইন থেকে ফিরল। গোল হচ্ছে না কিছুতেই। হাত-পা ছুড়তে দেখা যাচ্ছিল গ্যালারিতে বসে থাকা শাস্তিপ্রাপ্ত আন্তোনিয়ো লোপেস হাবাসকে। নির্ধারিত সময় পর্যন্ত গোল নেই। ফটকা খেলল এটিকে। এবং সেটা গ্যালারিতে বসে থাকা স্পেনীয় কোচের পরামর্শেই।

নব্বই মিনিটে বলবন্ত সিংহ মাঠে নামলেন। নেমে চার মিনিটের মধ্যেই অসাধারণ হেডে গোলটা করে ফের এটিকে-কে লিগ শীর্ষে নিয়ে গেলেন পঞ্জাব-তনয়। অতিরিক্ত সময়ের শেষ বাঁশি বাজার আগের মুহূর্তে জাভি হার্নান্দেজের বাঁক খাওয়া কর্নার উড়ে এসেছিল বলবন্তের মাথায়। রিজার্ভ বেঞ্চে বসে থেকেই দিন কেটে যাচ্ছিল এটিকে স্ট্রাইকারের। এ বারের আইএসএলে আট ম্যাচে মাত্র ৯৯ মিনিট খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। সোমবার রাতে যুবভারতীতে আলো ছড়ানোর পরে অভিমানে কথাই বলতে চাইছিলেন না দেশের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার। শেষে জোরাজুরি করায় বললেন, ‘‘গোল করব বলে তো মাঠে কেউ নামে না। আমিও নামিনি। তবে যখনই সুযোগ পাই, গোল করার চেষ্টা করি।’’ লাল-সাদা জার্সিতে মরসুমের প্রথম গোলটা করার পরে এ ভাবেই উচ্ছ্বাস দমিয়ে রাখেন তিনি। আর তাঁর কোচ হাবাস? কেরল ব্লাস্টার্স ম্যাচে গন্ডগোলের দায়ে তাঁকে সাসপেন্ডের চিঠি ধরিয়েছে শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি। তাতে কী, মেঘনাদ হয়ে পরপর দু’ম্যাচে দলকে জিতিয়ে দিলেন তিনি। টিম বাসে ওঠার আগে বললেন, ‘‘এত সুযোগ নষ্ট করছিল ছেলেরা যে, মনে হচ্ছিল দম বন্ধ হয়ে যাবে। গলা শুকিয়ে যাচ্ছিল। বলবন্ত দারুণ গোল করেছে।’’

Advertisement

উত্তেজক ও চমকপ্রদ গোলের বাইরে অসাধারণ দুটো সেভও এদিন দেখলেন দর্শকরা। দুই বঙ্গ সন্তানের। এটিকের অরিন্দম ভট্টাচার্য এবং নর্থইস্টের শুভাশিস রায়চৌধুরী দশ বছরেররও বেশি সময় জাতীয় দলে সতীর্থ ছিলেন। আজ তাঁরা একে অন্যের দলের গোলের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়ালেন। চোটের জন্য দীর্ঘদিন বাইরে ছিলেন এদু গার্সিয়া। লাল-সাদা জার্সিতে পাঁচ ম্যাচ পরে মাঠে নেমে মাঝমাঠ থেকে স্পেনীয় মিডিয়োর অসাধারণ সব পাসের ঝলক দেখা গেল। সে রকমই একটি পাস তিনি বাড়িয়েছিলেন রয় কৃষ্ণকে। একের বিরুদ্ধে এক অবস্থায় তিনি সামনে পেয়ে গিয়েছিলেন নর্থইস্টের গোলকিপার শুভাশিসকে। বাগুইহাটির ছেলে পা বাড়িয়ে নিশ্চিত গোল বাঁচান। আর সোদপুরের অরিন্দম তো বাতাসে শরীর ভাসিয়ে সেভ করলেন পাহাড়ি দলের মার্টিন নিকোলাসের হেড। যে গোল হয়ে গেলে বিরতির আগে পিছিয়ে পড়তে পারত কৃষ্ণের দল।

বাস্কেটবলের কিংবদন্তি কোবি ব্রায়ান্টের বিমান দুর্ঘটনায় মর্মান্তিক মৃত্যুর জন্য এক মিনিট নীরব থাকল স্টেডিয়াম। গ্যালারিতে বসে থাকা শাস্তিপ্রাপ্ত হাবাসও মুখ ঢাকলেন দু’হাত দিয়ে। বাকি সময়টা তাঁকে দেখাল খাঁচাবন্দি বাঘের মতো। তিনিই কিন্তু ড্রেসিংরুমে ঠিক করে দিয়েছিলেন দলের রণনীতি। মাঠ থেকে ফিরে সহকারী কোচ ম্যানুয়েল পিরেস বলে দিলেন, ‘‘হাবাস বলেছিলেন নব্বই মিনিটে গোল না হলে বলবন্তকে নামিয়ে ডাইরেক্ট ফুটবল খেলতে।’’

হাবাস জানতেন নর্থইস্টকে গুরুত্ব না দিলে ভুল হবে। সাধারণত ৩-৫-২ ফর্মেশনকে সামান্য বদল করে দল নামাচ্ছেন কলকাতার কোচ। কিন্তু এ দিন পাহাড়ি দলের দুই বিদেশি স্ট্রাইকার অ্যান্ড্রু কিয়ঘ এবং লারস সিমনের দাপটে ৪-৪-২-তে আটকে থাকতে হল প্রীতম কোটালদের। দীর্ঘদিনের সতীর্থ ডেভিড উইলিয়ামস চোটের জন্য বাইরে। তিনি না থাকায় কৃষ্ণও গোল পাচ্ছেন না। টানা পাঁচ ম্যাচে গোল নেই তাঁর। এ দিন কৃষ্ণের সঙ্গে জবি জাস্টিনকে নামানো হয়েছিল। ডাহা ফেল করলেন কেরলের এই স্ট্রাইকার। তাঁকে তুলে নিতে হল বিরতির পরে। তা সত্ত্বেও দ্বিতীয়ার্ধে অন্তত দুটি গোলের সুযোগ পেয়েছিল এটিকে। তার মধ্যে সোসাইরাজের শট তো গোল লাইনের উপর থেকে বাঁচালেন নর্থইস্টের স্টপার মিসলাভ কোমারস্কি। এটিকের জাভি হার্নান্দেজের একটি শট রুখে দেন শুভাশিস।

এটিকে: অরিন্দম ভট্টাচার্য, প্রীতম কোটাল, অগুস্তিন গার্সিয়া, ভিক্টর মনজিল (রেগিন এম), সুমিত রাঠি, প্রবীর দাশ, এদু গার্সিয়া (বলবন্ত), জাভিয়ার হার্নান্দেজ, সোসাইরাজ, জবি জাস্টিন (জয়েশ রানে), রয় কৃষ্ণ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন