নজরে: অস্ট্রেলিয়ার জার্সিতে খেলবেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত পরম।
তিনি ক্রিকেট ভালবাসেন। ভারতীয় বলে স্বাভাবিক ভাবে ভারতীয় ক্রিকেট আরও বেশি করেই ভালবাসেন। কিন্তু শনিবার নিউজিল্যান্ডে অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ ফাইনালে হরভজন সিংহ সমর্থন করবেন ভারত নয়, অস্ট্রেলিয়াকে!
এই হরভজন সিংহ অবশ্য নিজে ক্রিকেট খেলেন না। বরং বলা ভাল, খেলার আর বয়সই নেই তাঁর। তিনি যে এখন ঠাকুর্দা হয়ে গিয়েছেন। কিন্তু তাঁর নাতি খেলেন। এবং আগামী শনিবারও মাঠে নামবেন পরম উপ্পল। কিন্তু হরভজনের নাতি ভারতের নয়, খেলবেন অস্ট্রেলিয়ার জার্সি পরে। তাই ঠাকুর্দা হরভজনও ওই একটা দিনের জন্য হয়ে উঠবেন অস্ট্রেলিয়ার কট্টর সমর্থক।
কে এই পরম উপ্পল? অস্ট্রেলিয়ার মিডল অর্ডার ব্যাটিংয়ের বড় ভরসা এই ভারতীয় বংশোদ্ভূত অলরাউন্ডার। ব্যাটিংয়ের সঙ্গে অফস্পিনেও পারদর্শী। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে অনূর্ধ্ব ১৯ ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে অভিষেক ম্যাচে সেঞ্চুরিও করেন এই প্রতিভাবান তরুণ। এ বারের বিশ্বকাপেও ফর্মে আছেন। একটা হাফসেঞ্চুরি করেছেন। সেমিফাইনালেও অপরাজিত ৩২ রান করেছেন। উইকেটও পাচ্ছেন।
পরমের ঠাকুর্দা অস্ট্রেলিয়ার কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডে মাঠে থেকে দেখেছেন। তার পর অবশ্য ফিরতে হয়েছে তাঁকে সিডনিতে। যেখানেই এখন থাকেন তাঁরা। কিন্তু শনিবার শুরু থেকেই বসে যাবেন টিভি-র সামনে।
সেই ২০০৩ সালে উপ্পল পরিবার ভারত থেকে চলে এসেছিল অস্ট্রেলিয়ায়। পরমের বয়স তখন চার। পরমের বাবা দেবেন্দ্র সিংহ উপ্পল হরিয়ানা হাইকোর্টে নিজের ওকালতি ছেড়ে পরিবার নিয়ে চলে এসেছিলেন সিডনিতে। তার পর সেখানেই পরমের বড় হয়ে ওঠা।
শুরুতে সফ্ট বলে ক্রিকেট চলছিল। আট বছরের পরম তখন পড়া এবং খেলার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টায় ব্যস্ত। হঠাৎ করেই এক শপিং মলে গিয়ে বদলে যায় এই খুদে ক্রিকেটারের ভাগ্য। কী ঘটেছিল সে দিন? পরমের মা যশপ্রীত বলছেন, ‘‘আমরা এক সন্ধ্যায় শপিং করতে বেরিয়েছিলাম। যেখানে দেখি কেলিভিল ক্রিকেট ক্লাবের একটা স্টল। সে সময় ওরা ন’-দশ বছরের ছেলেদের ভর্তি করছিল। আমরা পরমকে তখনই ওখানে ভর্তি করে দিই।’’
সেখান থেকেই শুরু। তার পর একে একে বিভিন্ন বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে চলে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার পালা। ‘‘আমার মনে হয়, অনূর্ধ্ব ১৪ বিভাগে খেলা শুরু করার পর থেকেই আমার কেরিয়ার বদলে যায়,’’ বলেছেন পরম নিজেই, ‘‘১১-১২ বছর পর্যন্ত আমি শুধু মজা করার জন্য ক্রিকেট খেলতাম। তার পর নিজেকে বদলানো শুরু করি।’’
নিউ সাউথ ওয়েলস ডিসট্রিক্ট ক্রিকেট সংস্থার বিচারে পরপর দু’বার সেরা জুনিয়র ব্যাটসম্যান হয়েছেন। পরম বলছিলেন, ‘‘তখন থেকেই আমি গুরুত্ব দিয়ে ক্রিকেট খেলা শুরু করি।’’ এর পরে নজরে পড়ে যান অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচকদের। অনূর্ধ্ব ১৭ বিভাগ থেকে অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন বাঁ হাতি স্পিনার বিউ ক্যাসন এবং প্রাক্তন ব্যাটসম্যান ফিল জাকসের কাছ থেকে কোচিং পেতে শুরু করেন পরম। নিজের খেলা নিয়ে এই উদীয়মান তরুণ বলেছেন, ‘‘আমি সব সময় চেষ্টা করেছি ক্রিকেটের প্রাথমিক ব্যাপারগুলো ঠিকঠাক করতে। ব্যাটিংয়ের টেকনিক ঠিক রেখে খেলতে। কারণ আপনার খেলা যতই দেখনদারি হোক না কেন, প্রাথমিক ব্যাপার ঠিক না থাকলে সাফল্য আসবে না।’’
শনিবার বিশ্বকাপ ফাইনালে তাই ঈশান পোড়েল-শুভমান গিল-পৃথ্বী শ-দের সঙ্গে মাঠে নামবেন আরও এক ‘ভারতীয়’। তবে তফাত হল, তাঁর গায়ে ভারতের নীল জার্সি থাকবে না। থাকবে অস্ট্রেলিয়ার হলুদ জার্সি।
শেষ পর্যন্ত নীল ভারত হাসবে, না হলুদ ভারত— সেটাই এখন দেখার।