দিল্লি পৌঁছেও উদ্বোধনের মঞ্চে ওঠা হল না বদ্রুর

হঠাৎ-ই বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াল একটা গাড়ি। বিরক্তি নিয়ে গাড়ির দিকে তাঁকাতেই ফিফা ব্যাজ পরিহিত একজন মহিলা তাঁকেই ভাঙা বাংলায় জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘এটা কী বদ্রু ব্যান্যার্জির বাড়ি?’’

Advertisement

রতন চক্রবর্তী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৭ ০৪:১৭
Share:

হতাশ: অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপে আমন্ত্রণ পেয়েও নেই বদ্রু। ফাইল চিত্র

এক সময়ের মাঠের সতীর্থরা সবাই চলে গিয়েছেন দিল্লিতে ঐতিহাসিক ফুটবল ম্যাচের সাক্ষী হতে। টিকিট না পেয়ে অপমানিত হয়ে বেহালার জ্যোতিষ রায় রোডের বাড়ির জানলায় দাঁড়িয়ে ছিলেন অলিম্পিক্সের ইতিহাসে দেশের হয়ে সর্বোচ্চ মর্যাদা এনে দেওয়া নব্বই ছুঁই ছুঁই ভারত অধিনায়ক। রাস্তার দিকে তাঁকিয়ে ছিলেন উদাস দৃষ্টিতে।

Advertisement

হঠাৎ-ই বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াল একটা গাড়ি। বিরক্তি নিয়ে গাড়ির দিকে তাঁকাতেই ফিফা ব্যাজ পরিহিত একজন মহিলা তাঁকেই ভাঙা বাংলায় জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘এটা কী বদ্রু ব্যান্যার্জির বাড়ি?’’ তারপর তিনিই বদ্রুকে জানালেন, ‘‘আপনি তাড়াতাড়ি তৈরি হোন, দিল্লিতে প্রধামন্ত্রী আপনাকে ডেকে পাঠিয়েছেন। যুব বিশ্বকাপের ম্যাচ দেখার জন্য।’’ হাতে যেন চাঁদ পেলেন ’৫৬-র মেলবোর্ন অলিম্পিক্সের অধিনায়ক। আধঘণ্টার মধ্যেই নাতনিকে নিয়ে উঠে পড়লেন দিল্লির গাড়িতে।

কিন্তু দিল্লিতে এসেই ফের বিভ্রাট। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে আসবেন বলে নিরাপত্তার কারণে রাজধানীতে শুক্রবারের নজিরবিহীন জ্যাম জটে আটকে পড়লেন বদ্রু। যখন হোটেলে পৌঁছলেন, তখন অলিম্পিক্স ও এশিয়ান গেমসের অধিনায়করা চলে গিয়েছেন স্টেডিয়ামে। বদ্রু যখন হোটেল হয়ে অভুক্ত অবস্থায় স্টেডিয়ামে পৌঁছলেন তখন উদ্বোধন শেষ, ভারতের খেলাও শুরু হয়ে গিয়েছে। তাও বলছিলেন, ‘‘যত কষ্টই হোক, জীবদ্দশায় ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ দেখছি এটা তো হল। দারুণ উত্তেজনা হচ্ছে। আমাদের দেশ যাই ফল করুক, ওরা তো বিশ্বকাপ খেলছে। এটাই বিশাল ব্যাপার।’’

Advertisement

বদ্রু বন্দ্যোপাধ্যায়ের টিকিট বিভ্রাট এবং তাঁর পরবর্তী ঘটনা একটা উদাহরণ মাত্র। খবরের কাগজে অলিম্পিয়ানের অপমানিত হওয়ার খবরের জের। কিন্তু দিল্লিতে বিশ্বকাপ উদ্বোধন নিয়ে যা হচ্ছে তা এককথায় বলা যায় চূড়ান্ত অব্যবস্থা। ছয় ঘণ্টা মাঠে বসে থাকতে হয়েছে দর্শকদের। অথচ খাবার জলের কোনও ব্যবস্থা নেই। জলের বোতলও কেড়ে নিয়েছে পুলিশ। মাঠে আসা ছাত্র-ছাত্রীরা জলের জন্য ছুটে বেড়িয়েছে। গ্যালারি নোংরায় ভরা। কোন টিকিটে কোথা দিয়ে ঢুকতে হবে তা বলারও লোক নেই। দর্শকদের কার্যত হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে। দিল্লি কোনওদিনই ফুটবলের শহর নয়। তাই কিছুটা চাপ দিয়েই কেন্দ্রীয় সরকার এখানে উদ্বোধন ম্যাচ করার ব্যাপারে রাজি করিয়েছে ফেডারেশনকে। মাঠ ভর্তি করতে বাসে করে বিভিন্ন প্রান্তের স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে আসা হয়েছিল মাঠে। কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রক স্টেডিয়ামের মোট টিকিটের অর্ধেকই বিলিয়েছে বিনা পয়সায়। এক মাস আগে। দিয়েছে ‘ইন্ডিয়া’ লেখা জার্সি। আর এসেছিলেন দিল্লিতে থাকা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কিছু সমর্থক। হাতে তেরঙ্গা পতাকা ও মুখে জাতীয় পতাকার রং মেখে।

ফলে উদ্বোধন অনুষ্ঠান এবং ফুটবল নিয়ে মোদি শো মন্দয়-ভালয় উতরে গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন