বিশুদা, কলকাতা লিগ জেতার চ্যালেঞ্জ নিলাম

কিছুদিন আগে ইন্ডিয়ান সুপার লিগের নিলামের লাইভ কভারেজ দেখছিলাম। আই লিগ চ্যাম্পিয়ন আমার মোহনবাগান টিমের কোনও ফুটবলারকে আটলেটিকো দে কলকাতা নেয় কি না সেটা দেখতে। দেখলাম কাউকে পছন্দই করা হল না। গোলকিপার দেবজিৎ মজুমদার-সহ আমাদের টিমের কারও জায়গা হয়নি কলকাতা টিমে। সত্যিই আশ্চর্য লাগছে!

Advertisement

সঞ্জয় সেন

শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৫ ০৪:৩৫
Share:

প্রীতম কোটাল এবং...। বাগানের ভাগ্য যাঁদের হাতে। ছবি: উৎপল সরকার

কিছুদিন আগে ইন্ডিয়ান সুপার লিগের নিলামের লাইভ কভারেজ দেখছিলাম। আই লিগ চ্যাম্পিয়ন আমার মোহনবাগান টিমের কোনও ফুটবলারকে আটলেটিকো দে কলকাতা নেয় কি না সেটা দেখতে। দেখলাম কাউকে পছন্দই করা হল না। গোলকিপার দেবজিৎ মজুমদার-সহ আমাদের টিমের কারও জায়গা হয়নি কলকাতা টিমে। সত্যিই আশ্চর্য লাগছে!
আন্তোনিও হাবাস বা তাঁর টিম ম্যানেজমেন্ট কাকে নেবে সেটা একেবারেই তাঁদের নিজস্ব ব্যাপার। নিশ্চয়ই ওঁদের কোনও নির্দিষ্ট পরিকল্পনা আছে। কিন্তু একই সঙ্গে এটাও বোধহয় বলা উচিত, যে চোদ্দো জন ভারতীয় ফুটবলারকে এ বার এটিকে নিয়েছে তাদের মধ্যে একমাত্র অর্ণব মণ্ডল ছাড়া আর এমন কেউ নেই যে কিনা মোহনবাগানের প্রথম আঠারো ফুটবলারের কারও চেয়ে গত মরসুমে ভাল খেলেছে!
পজিশন ধরে-ধরে তুলনা দিতে পারি। তবে সরাসরি কারও নাম তুলে বিতর্ক বাড়াতে চাই না। শুধু একটা উদাহরণ দিচ্ছি— দেবজিতের চেয়ে গোলকিপার হিসেবে অমরিন্দর সিংহ বা কুঞ্জং ভুটিয়া কী ভাবে ভাল হল? কিপিংয়ের কোন জায়গাটায় ওরা দেবজিতের চেয়ে এগিয়ে? খুব জানতে ইচ্ছে করে কিন্তু!
বাংলার সব ফুটবলপ্রেমীর মতোই আমিও চাই এটিকে এ বারও আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হোক। একই বছরে দেশের সেরা দু’টো ফুটবল ট্রফি বাংলায় শেষ কবে এসেছে মনে করতে পারছি না। আটলেটিকো আইএসএল জিতেছে। আমরা আই লিগ। তাই আটলেটিকো টিমে মোহনবাগানের ফুটবলার থাকলে বাংলার আবেগটা এ বার হাবাসের টিমের জন্য নির্ঘাত আরও বেশি হত। দলটাও আরও শক্তিশালী হত।

Advertisement

আমি কিন্তু একেবারেই আইএস এল বিরোধী নই। বরং কিছুটা পক্ষেই। পাশাপাশি এটাও অবশ্য মনে করি, এই ফ্র্যা়ঞ্চাইজি টুর্নামেন্টের চেয়ে আই লিগে খেলা বেশি কঠিন। এটা ঠিক, ইন্ডিয়ান সুপার লিগের সুবাদে আমাদের দেশের ফুটবলাররা ভাল হোটেলে থাকছে। ভাল পরিকাঠামো পাচ্ছে। ভাল মাঠে খেলার সুযোগ পাচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা জিকো, রবের্তো কার্লোস, আনেলকাদের মতো ফুটবলারদের সঙ্গে আমাদের ছেলেরা খেলছে বা কোচ হিসেবে পাচ্ছে। এতে ভারতীয় ফুটবলারদের খেলার উন্নতি হতে বাধ্য।

তবে আইএসএল নয়, আমার চোখ এখন কলকাতা লিগে। পাঁচ বছর হয়ে গিয়েছে মোহনবাগান এই ঘরের লিগটা পায়নি। এখন রোজই সকালে-বিকেল আমাদের প্র্যাকটিস দেখতে প্রচুর ভিড় হচ্ছে। এবং সমর্থকদের একটাই দাবি— আই লিগ জিতেছি, এ বার কলকাতা লিগ চাই। তাঁদের জন্য এই লেখায় বলছি, ট্রফি তো আর দোকানের শো-কেস থেকে কিনে আনা যায় না। সেটা পাওয়ার জন্য নিজেদের তৈরি হতে হয়। পরিশ্রম করতে হয়। অঙ্ক কষে এগোতে হয়। তাই কলকাতা লিগ জেতার কাঠামো তৈরির কাজটা এখন আমরা করছি। যেমন অন্য টিমগুলোও করছে।

Advertisement

আমার বাড়ির ঠিক উল্টো দিকে চেতলার বিখ্যাত দুর্গাপুজোর খুঁটিপুজো হল কিছু দিন আগে। এখন শিল্পীরা নেমে পড়েছেন মণ্ডপের কাঠামো তৈরিতে। এর পর আস্তে আস্তে তৈরি হয়ে যাবে প্রতিমাও। মাটির প্রলেপ পড়বে। রং হবে। তার পর তো দুর্গাপুজোর পুরস্কার জেতার প্রতিযোগিতা। মোহনবাগানের প্রি-সিজন প্র্যাকটিসও আমার কাছে অনেকটা সে রকমই। ফিজিক্যাল কন্ডিশনিং শেষ করে বল প্র্যাকটিসে নেমে পড়েছে কাতসুমিরা। এ বার ম্যাচ খেলার প্রস্তুতি। তার পর তো ট্রফি জেতার লড়াই। বৃহস্পতিবারই একটা প্র্যাকটিস ম্যাচ খেললাম। আরও গোটাদুয়েক খেলব।

ইস্টবেঙ্গল, টালিগঞ্জ অগ্রগামীরাও তাই করছে। বার্সেলোনা, ম্যান ইউ, রিয়াল মাদ্রিদ প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে বিদেশে গিয়ে। আমাদের সেই সুযোগ নেই। ফলে ভবানীপুর, পিয়ারলেসের মতো টিমের বিরুদ্ধেই খেলে মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলকে তৈরি হতে হয়। তবে আমার ইচ্ছে, এখনই না হোক, আই লিগের আগে সিঙ্গাপুর কিংবা নেপালেও গিয়ে গোটা কয়েক প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলার। ক্লাব অফিশিয়ালদের সেই অনুরোধ করব এখনই ভেবে রেখেছি। যদি অবশ্য ক্লাবের আর্থিক সমস্যা মিটে যায়।

এ বার মোহনবাগান টিম গতবারের চেয়ে ভাল। ব্যালান্সড। কলকাতা লিগের জন্য শুধু একজন বিদেশি স্ট্রাইকার দরকার আমার। যে গোল করার জন্য বিপক্ষ বক্সে দাঁড়িয়ে থাকবে। বেলো রজ্জাকের জায়গায় ব্রাজিলিয়ান গুস্তাভো ডি’সিলভাকে নিয়েছি। প্র্যাকটিসে দিন তিনেক দেখলামও। বেশ ভাল। কভারিং, হেড, পাসিং, ডিফেন্ডার হয়েও আক্রমণাত্মক মনোভাব— সবই আছে। যদি এখানকার পরিবেশ মানিয়ে নিতে পারে, তা হলে আমার বিশ্বাস বেলোর অভাব পুষিয়ে দেবে। কলকাতার জলকাদার মাঠে মেসি-রোনাল্ডোরা খেলতে এলেও পুরোপুরি মানিয়ে নিতে সময় নেবে! গুস্তাভোকেও কিন্তু সময় দিতে হবে।

কলকাতা লিগে ডার্বি জিতলেই ট্রফির দিকে অনেকটা এগিয়ে যাওয়া যায়। তাই বড় ম্যাচ জিততেই হবে। ইস্টবেঙ্গলকে হারাতে হবে। বিশুদাকে (বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য) কিছুতেই জিততে দেব না।

আই লিগে বিপক্ষ সম্পর্কে একটা ধারণা নিয়ে টিম নামাতে পারতাম। কলকাতা লিগে সেটা নেই। তবে যত দূর শুনেছি টালিগঞ্জ আর পুলিশও নাকি বেশ শক্তিশালী। কলকাতা লিগে ভাল খেলার সবচেয়ে বড় বাধা বৃষ্টির মাঠ। আমাদের মাঠ অবশ্য ভালই আছে।

কিন্তু বড় টিমের কোচকে তো সব ট্রফি জেতার জন্য ঝাঁপাতে হয়! তা পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেন। সমর্থকরাও ট্রফি ছাড়া কিছু বোঝেন না। আই লিগ জেতার পর মোহনবাগান সমর্থকদের প্রত্যাশা কিন্তু আরও বেড়েছে। সোজা কথা, ইস্টবেঙ্গলে বিশুদার চেয়ে আমার উপর কিন্তু চ্যাম্পিয়ন হওয়ার চাপ অনেক বেশি। তেরো বছর পর আই লিগ এসেছে। দেখি, পাঁচ বছর পর কলকাতা লিগ বাগানে এনে দিতে পারি কি না।

চ্যালেঞ্জটা কিন্তু নিচ্ছি!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন