মুম্বইয়ে বোর্ডের বৈঠকে সৌরভ-পাণ্ডব-নিরঞ্জনরা। -টুইটার
মুম্বইয়ের ক্রিকেট সেন্টারে বোর্ড-বৈঠক সেরে বিশেষ বিমানে উঠে পড়লেন বোর্ডের শীর্ষকর্তারা। গন্তব্য কানপুর। যা এখন ভারতীয় ক্রিকেটের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। ওখানে যে দেশের ৫০০তম টেস্টের উৎসব চলছে। সেই উৎসবে গা ভাসাতে কর্তাদের সঙ্গে সেই বিমানে উঠে পড়লেন সচিন তেন্ডুলকর ও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, দিলীপ বেঙ্গসরকরও।
বিমানের ভিতরের ছবিটা দেখলে কে বলবে, কিছুক্ষণ আগেই বোর্ডকর্তারা লোঢা কমিশন নামক আগুন নিয়ে খেলেছেন?
কে বলবে, একটু আগেই ওয়াংখেড়ে-লাগোয়া ক্রিকেট সেন্টারে বার্ষিক সভায় এমন সব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা, যা নিয়ে চূড়ান্ত বিতর্ক হতে পারে। যা নিয়ে বিচারপতি লোঢা ও তাঁর কমিশন সুপ্রিম কোর্টে গেলে বড়সড় শাস্তির খাঁড়া নেমে আসতে পারে অনুরাগ ঠাকুরদের উপর।
সে সব ভুলে বুধবার রাত থেকেই ৫০০ টেস্টের উৎসবে মাতল বিসিসিআই।
বৃহস্পতিবার ঐতিহাসিক টেস্টের শুরুর দিন গ্রিন পার্কের গ্যালারিতে পাঁচশো কেজি লাড্ডু বিতরণ করা হবে দর্শকদের মধ্যে। পাঁচশো স্মারক টি-শার্টও ছড়িয়ে দেওয়া হবে গ্যালারিতে। ম্যাচ শুরুর আগে পাঁচশো বেলুন ওড়ানোর পরিকল্পনাও রয়েছে বোর্ডের। বিশেষ স্মারক কয়েনে টস করবেন বিরাট কোহালি, কেন উইলিয়ামসনরা। কিন্তু সে সব তো ম্যাচ শুরুর দিন। বুধবার আগের রাত থেকেই শুরু হয়ে গেল আগাম উৎসব। কানপুরে টিম হোটেলে ৫০০তম টেস্ট উপলক্ষে বোর্ডের অনুষ্ঠানে সতীর্থদের নিয়ে হাজির বিরাট কোহালি, অনিল কুম্বলেও। সচিন তেন্ডুলকরকে দেখে রীতিমতো উল্লসিত সবাই। বিশেষ করে ভারতীয় ক্যাপ্টেন। ১৩ টেস্টের মরসুম শুরুর আগে চাপ সামলানোর যাবতীয় টিপস বোধহয় সচিনের কাছ থেকে নিয়ে নিলেন তাঁর পাশে বসে।
এই অনুষ্ঠানে ভারতীয় ক্যাপ্টেনদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও বিষেণ সিংহ বেদী, গুণ্ডাপ্পা বিশ্বনাথরা সেই আমন্ত্রণ পাননি বলে বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিশ্বনাথ যে জন্য যথেষ্ট ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু উৎসবের মধ্যে সে সবের রেশ টের পাওয়া যায়নি।
দুপুরে যেমন বার্ষিক সভায় লোঢা কমিশনের সুপারিশ প্রায় ভুলতেই বসেছিলেন বোর্ড কর্তারা। সেখানে পাঁচ সদস্যের নির্বাচক কমিটি গড়ে ফেলল বিসিসিআই। যাতে রয়েছেন বাংলার দেবাঙ্গ গাঁধীও। সঙ্গে আরও হাফ ডজন সিদ্ধান্ত, যার সঙ্গে লোঢা সুপারিশের তেমন কোনও সম্পর্ক নেই। বোর্ডের এই কার্যকলাপ যে পছন্দ হয়নি লোঢা কমিশনের, তার ইঙ্গিত রাতে তাদের প্রতিক্রিয়াতে পাওয়া গেল। রাতে যখন লোঢা কমিশনের এক সূত্র সংবাদসংস্থাকে বলেন, ‘‘এখনও মিটিংয়ের রিপোর্ট পাইনি। কিন্তু যা খবর পেয়েছি, তাতে তো প্রায় সব সিদ্ধান্তই কমিশনের সুপারিশ অগ্রাহ্য করে নেওয়া। কমিশন নিশ্চয়ই ব্যাপারটা দেখবে।’’
এ দিনের মুম্বই বৈঠকে লোঢাদের অগ্রাহ্য করার ইঙ্গিতের সঙ্গে তাঁদের সুপারিশ মেনে গঠনতন্ত্র সংশোধনের একটা উদ্যোগও ছিল। অজয় শিরকেকে সচিব পদে বহাল রেখে ওয়ার্কিং কমিটিও প্রায় বহাল রাখা হয় কতগুলো ফাঁকা জায়গা ভরাট করে। অন্য কোনও নতুন কমিটি গড়া হল না। আইসিসি-তে যে বোর্ডের প্রতিনিধিত্ব করবেন অনুরাগ ঠাকুর, সেই সিদ্ধান্তও নেওয়া হল এ দিন। আর সব শেষে ইডেন টেস্ট শুরুর দিন বিশেষ সাধারণ সভা ডেকে লোঢা সুপারিশ অনুযায়ী গঠনতন্ত্রে সংশোধন নিয়ে আলোচনার কথাও জানানো হল। বৈঠকে থাকা কেউ কেউ যাকে শ্যাম ও কুল দুইই রাখার কৌশল বলছেন।
বোর্ড কর্তারা যে এমন ডাবল রোলে ক্রমশ পারদর্শী হয়ে উঠছেন, তা রাতে কানপুরের টিম হোটেলের উৎসবের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। সেখানে কোনও বারুদ-গন্ধই নেই। সেখানে বরং উৎসবের আগমনীর সুর। এমন সুরই যেন শোনা গেল সচিন, সৌরভ, কোহালি, বেঙ্গসরকরদের ক্রিকেট-আড্ডায়। যখন তিন প্রাক্তন ক্যাপ্টেন, তাঁদের সময়ের স্মৃতি রোমন্থনে ব্যস্ত। যখন বর্তমান অধিনায়কের কথায় বোঝা গেল তখনকার ভারতীয় ড্রেসিংরুমের সঙ্গে এখনকার ভারতীয় ড্রেসিংরুমের তফাতটা ঠিক কোথায়। তার পর নৈশভোজ। কোথায় টেনশন, কোথায় চাপ?
লোঢা কমিশনের এক সদস্য যে বোর্ডসচিব অজয় শিরকের বিরুদ্ধে মানহানির হুমকি দিয়েছেন, সে সব নিয়ে যেন কেউ ভাবছেনই না।
কিন্তু কেন এই হুমকি?
বোর্ড সচিব শিরকে কমিশন সচিব গোপাল শঙ্করনারায়ণনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে সম্প্রতি এক ই-মেল করেছেন সরাসরি বিচারপতি লোঢাকে। তাতে কমিশন সচিবের বিরুদ্ধে নিজের নাম গোপন রেখে মিডিয়ায় খবর ফাঁস করার অভিযোগ এনেছেন বোর্ড সচিব। এই মেল পেয়ে নাকি বেশ ক্ষুব্ধ কমিশন। কমিশন ঘনিষ্ঠ এক সূত্র সংবাদসংস্থাকে বলেছে, ‘‘শিরকে যা করেছে, তাতে ওর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করা উচিত। কমিশনকে চিঠি দিয়ে তা আবার মিডিয়ায় ফাঁসও করে দিয়েছেন উনি। এ সব বরদাস্ত করবে না কমিশন।’’ দুই সচিবের যুদ্ধ আগেও হয়েছে। রাজ্য নির্বাচকদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগকে কেন্দ্র করে। এ বার বোর্ড বনাম আদালতের পাশাপাশি সেই যুদ্ধেও জোয়ার এল বলা যায়।
তাতে অবশ্য বোর্ড কর্তাদের কোনও হেলদোল আছে বলে মনে হচ্ছে না। এখন তাঁদের উৎসব চলছে যে। পাঁচশোতম টেস্টের উৎসব।