যা মানা হয়েছে, যতটুকু মানা হয়েছে, ততটুকুই হবে। তার বাইরে লোঢা কমিশনের নির্দেশ আর কিছু মানা সম্ভব নয়।
সুপ্রিম কোর্ট রায়ের আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে নয়াদিল্লির বিশেষ বোর্ড বৈঠকের নির্যাস ধরতে হলে, এটাই লিখতে হবে। যেখানে ঠিক হয়ে গেল, এত দিন লোঢা কমিশন নিয়ে যে মনোভাব দেখানো হয়েছে, তাই দেখানো হবে। অর্থাৎ, নতজানু হওয়া নয়। লোঢা কমিশনের বিরুদ্ধে চলা হবে যুদ্ধং দেহি মনোভাব নিয়ে।
আগামী সোমবার ভারতীয় বোর্ড মামলায় রায় শোনাবে সুপ্রিম কোর্ট। যে রায় লোঢা সংস্কার না মানার ‘অপরাধে’ বোর্ড মসনদ থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে পারে প্রেসিডেন্ট অনুরাগ ঠাকুর-সহ অন্যান্য শীর্ষকর্তাকে। ক্রিকেটমহলের আগ্রহ ছিল, সেই রায় প্রদানের আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে বোর্ড নিজেদের বিশেষ বৈঠকে কী করে? লোঢা সংস্কার মেনে নেওয়ার ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু এ দিনের নয়াদিল্লির বৈঠকের যা নির্যাস, তাতে সোমবার আদালত কক্ষে বোর্ড আইনজীবী অনমনীয় মনোভাব নিয়েই ঢুকতে চলেছেন।
এ দিনের বৈঠকে থাকা কেউ কেউ পরে বললেন যে, বৈঠকে নাকি সদস্যদের জিজ্ঞাসা করা হয় পূর্বের বোর্ড-অবস্থান থেকে কেউ সরে আসতে চায় কি না। দাবি করা হল, বিরোধিতা নাকি তেমন আসেনি। অধিকাংশ সদস্যই নাকি বলে দেন যে, বোর্ড-নির্দেশিত যুদ্ধের রাস্তায় হাঁটতে তাঁদের কোনও অসুবিধে নেই। কিন্তু সম্পূর্ণ ছবিটা মোটেও তেমন নয়। ত্রিপুরা-রাজস্থান-বিদর্ভ ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে যে, লোঢা সংস্কার পুরোপুরি মেনে নিতে তাদের কোনও অসুবিধে নেই। এ দিন আবার রাজস্থানকে ঘিরে একপ্রস্থ নাটকও হয়। আরসিএ-র ডেপুটি প্রেসিডেন্ট মেহমুদ আবদি শনিবার নয়াদিল্লি বৈঠকে উপস্থিত থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু অনুরাগ নাকি তা আটকে দেন। পরে আবদি অভিযোগ করে বলেন যে, দুপুর আড়াইটে নাগাদ বোর্ড সচিব অজয় শিরকে তাঁকে ফোন করে জানতে চান, লোঢা সংস্কার নিয়ে তাঁর কী মত। ‘‘আমি বললাম, আরসিএ সব মানবে। তাতে শিরকে বললে, আজকের বৈঠকে আপনি আসতে পারেন। আমাদের কোনও অসুবিধে নেই। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে বুঝলাম, তিনি সেটা চান না। বোর্ডই তো দেখছি এখন বিভক্ত হয়ে গিয়েছে। প্রেসিডেন্ট এক রকম চান, সচিব আর এক রকম।’’
আবদি বোর্ডের বিপক্ষে। কিন্তু বোর্ডের স্বপক্ষেও বক্তব্য আছে। বিশেষ বৈঠক থেকে বেরিয়ে কোনও কোনও সদস্য আবার বলেছেন যে, কিছু কিছু জিনিস বাস্তবে মেনে নেওয়া অসম্ভব। যেমন এক রাজ্য এক ভোট, সত্তোরোর্ধ্ব হলে বা ন’বছর হয়ে গেলে ক্রিকেট প্রশাসন ছেড়ে চলে যাওয়া, কুলিং অফ পিরিয়ড। এর একটাও মানার উপায় নেই। বলা হচ্ছে, লোঢা কমিশনের কোনও সংস্কারই মানা হচ্ছে না এমন তো নয়। সিএজি বসানোর মতো বেশ কিছু ব্যাপার তো মেনে নিয়েছে বোর্ড। কিন্তু তার বাইরে বাকিগুলো মানা সম্ভব নয়।
অনুরাগ ঠাকুরের যে হলফনামা পেশ করার কথা আদালতে, কেন আইসিসি-র হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়েছিল, তার কৈফিয়ৎ দিয়ে, সেই বক্তব্যও তৈরি বলে শোনা গেল। বোর্ডের বক্তব্য, আইসিসি চেয়ারম্যান অ্যাপেক্স কাউন্সিলে সিএজি প্রতিনিধি রাখার প্রস্তাবেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন বলেই তাঁর কাছ থেকে এই বিষয়ে লিখিত বক্তব্য চাওয়া হয়েছিল।
সে না হয় বোঝা গেল। কিন্তু সোমবার সুপ্রিম কোর্ট ও সব শুনবে তো?