কলকাতা থেকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়া থাকলেও আসল সময়ে খলনায়ক হয়ে দেখা দিল বেঙ্গালুরুর কুখ্যাত ট্র্যাফিক জ্যাম। ভারতীয় ফুটবল দলের অধিনায়কের ডেরায় এসেও তাই মুখোমুখি আড্ডায় বসা সম্ভব হল না। কিন্তু সেই আক্ষেপ স্বয়ং সুনীল ছেত্রী মিটিয়ে দিলেন আধ ঘন্টার খোলাখুলি টেলিফোনালাপে।
প্রশ্ন: ৩১ মে ২০১৫। কান্তিরাভায় আপনার চোখের সামনে দিয়ে আই লিগ ড্যাং ড্যাং করে কলকাতায় নিয়ে গিয়েছিল মোহনবাগান। শনিবার সেই স্টেডিয়ামেই কি খেদটা সুদে-আসলে পুষিয়ে নিতে এখনই ছটফট করছেন?
সুনীল: খেদ মেটানো কী? বলুন এ বার চ্যালেঞ্জ আরও বড়। সনি-কাতসুমি-জেজে। সঙ্গে আবার গ্লেন। জানি না বলবন্ত খেলবে কি না। যদি নাও খেলে, তবু ভারতসেরা অ্যাটাকিং লাইনের সামনে পড়তে হবে আমাদের।
প্র: ভারতীয় ফুটবলের পোস্টার বয় সুনীল ছেত্রী ভয় পেয়ে গেল না কি?
সুনীল: সুনীল ছেত্রী মাঠে কাউকে ভয় পায় না। মোহনবাগানের যদি সেরা অ্যাটাক থাকে, আমাদের ডিফেন্সকেও ভারতের সব ক্লাব ভয় পায়। রিনো-জনসন-ওসানো যে কোনও ঝড়ঝাপ্টা থামিয়ে দিতে পারে।
প্র: সনি, জেজের কথা বলছিলেন। প্রথম জন আইএসএলে আর দ্বিতীয় জন ভারতীয় দলে অ্যাটাকে আপনার পার্টনার। ওদের মাইনাস পয়েন্টও তো জানেন।
সুনীল: আজকের ফুটবলে কেউ কোনও মাইনাস পয়েন্ট এত দিন ফেলে রাখে না। যদি না সে অপেশাদার হয়। তাই ভুলত্রুটি আমার মতো ওরাও দ্রুত শুধরে নিতে দক্ষ।
প্র: জাতীয় দলের জার্সিতে আপনি ভাইচুংকেও ছাপিয়ে এখন ভারতের সর্বকালের হায়েস্ট স্কোরার!
সুনীল: তাতে কী হয়েছে? আমি যখন জাতীয় দলে ঢুকি তখন ভাইচুংভাই আমাকে ফুটবলার হিসেবে পরিণত হতে সাহায্য করেছে। ও আমার কাছে আগেও যা ছিল এখনও তাই— কিংবদন্তি।
প্র: আর নেভিল ডি’সুজা থেকে পিকে... সাব্বির আলিরা?
সুনীল: প্লিজ, তুলনা টানবেন না? ওঁরা চ্যাম্পিয়ন অব চ্যাম্পিয়ন্স।
প্র: আপনি নিজে এই কিংবদন্তি আর সেরার সেরাদের সঙ্গে এক প্ল্যাটফর্মে বসার স্বপ্ন দেখেন না?
সুনীল: আরে পাগল না কি! আমি সুনীল ছেত্রী। দেশের জার্সি গায়ে একটু-আধটু ফুটবল খেলার চেষ্টা করি।
প্র: বব হাউটন ছ’ফুটের ফুটবলারদের কদর করতেন। আপনি পাঁচ ফুট সাত ইঞ্চি সেই টিমেও পারফর্ম করেছেন। আবার স্টিভন কনস্ট্যান্টাইনের দলেও নিয়মিত গোল করে যাচ্ছেন! রহস্যটা কী?
সুনীল: বব স্যর আন্তর্জাতিক ম্যাচের স্ট্র্যাটেজি প্রসঙ্গে কথাটা বলেছিলেন। ফুটবলে মোদ্দা হচ্ছে, মাঠে দলের বাকি দশ জনের সঙ্গে ভাল কম্বিনেশন। সেটা হলেই টিম সাফল্য পায়। আমি সব দলে সেটাই করে গিয়েছি। আর প্রতিদিন নিজের পারফরম্যান্স আগের দিনের চেয়ে একটু হলেও ভাল করার চেষ্টা করেছি। বিশ্বাস করবেন কি না জানি না, এখনও প্রতিটা ম্যাচে নামার সময় সেই সতেরো বছরে মোহনবাগান জার্সিতে প্রথম মাঠে নামার কথাই ভাবি। নিজেকে নিজে বলি—পারফর্ম করতে না পারলে সব শেষ। আমাদের জুনিয়ররা এটা মেনে রোজ মাঠে নামুক, ফল পাবেই পাবে। আমার কাছে এটাই পেশাদারিত্ব।
প্র: এতটা পরিণত সুনীল ছেত্রীকে করল কে? কলকাতায় আপনার এই মনোভাব দেখেছি বলে মনে পড়ছে না।
সুনীল: তখনও ছিল। যেটা এই বেঙ্গালুরু এফসি-র পেশাদারি সেট আপে এসে আরও অনেক বেড়েছে।
প্র: কলকাতা ফুটবল কি এই পেশাদারি মন্ত্র থেকে বঞ্চিত?
সুনীল: এটা নিয়ে কিছু বলব না।
প্র: আই লিগে আবার ফিরছি। গত দু’মরসুমে বেঙ্গালুরু একবার টেবল টপার হলে আর তাদের নামানো যেত না। এ বার কিন্তু একটা জিতছেন তো পরেরটা হারছেন। ধারাবাহিকতাটা কি নড়ে গেল আপনাদের?
সুনীল: এগুলো মিডিয়ার ব্যাখ্যা। আসলে সে দিন দশ জনের স্পোর্টিংয়ের কাছে নিজেদের মাঠে যদি হেরে না যেতাম, তা হলে এত প্রশ্ন উঠত না। তবে লিগ এখনও অনেক বাকি। দেখুন না, কোথাকার জল কোথায় গড়ায়!
প্র: সুব্রত ভট্টাচার্য, সুভাষ ভৌমিক দু’জনের কোচিংয়েই খেলেছেন। কাকে এগিয়ে রাখবেন?
সুনীল: ভৌমিকদার কাছে বেশি খেলিনি। তবে সুব্রত ভট্টাচার্যকেই এগিয়ে রাখব। সতেরোর একটা আনকোরা ছেলেকে উনি ব্যারেটো, জর্জ এক্কাদের পাশে যে ভাবে নিয়ম করে নামাতেন, ব্যবহার করতেন— জীবনেও ভুলব না।
প্র: বিবাহিতদের ক্লাবে ঢুকছেন কবে?
সুনীল: এ বছরের শেষেই।
প্র: পাত্রী কি কলকাতার?
সুনীল: বিয়ে ঠিক হলে আপনাকে সবার আগে ফোন করে জানিয়ে দেব।