স্বপ্নভঙ্গের মুখ থেকে শেষ উইকেটে জিতে স্বপ্ন ফিরল বাংলার

চেন্নাই দুর্গে সুদীপ-প্রদীপ্ত জুটিতে এল রুদ্ধশ্বাস জয়

তামিলনাড়ুর ডেরায় তাদের বিরুদ্ধে নাটকীয় জয় তুলে নিয়ে রঞ্জি ট্রফি অভিযানে দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন ঘটাল বাংলা। গ্রুপ ‘বি’-তে শনিবার রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে এক উইকেটে জিতে ৬ পয়েন্ট তুলে নিয়েছে তারা। এ

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:৩৮
Share:

সফল: চেন্নাইয়ে রঞ্জি ট্রফির ম্যাচে তামিলনাড়ুর বিরুদ্ধে উত্তেজনাপূর্ণ জয়ের পরে বাংলা দল। সতীর্থদের সঙ্গে নিজস্বী ঈশান পোড়েলের। ইনস্টাগ্রাম

তামিলনাড়ুর ডেরায় তাদের বিরুদ্ধে নাটকীয় জয় তুলে নিয়ে রঞ্জি ট্রফি অভিযানে দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন ঘটাল বাংলা। গ্রুপ ‘বি’-তে শনিবার রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে এক উইকেটে জিতে ৬ পয়েন্ট তুলে নিয়েছে তারা। এ বারে রঞ্জিতে প্রথম জয়ের পরে ১২ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবলে এই গ্রুপে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে অরুণ লালের দল।

Advertisement

সরাসরি জয়ের জন্য ২১৬ রান দরকার ছিল বাংলার। কিন্তু সেই রান তাড়া করতে গিয়ে ভাল ভাবে শুরু করার পরেও মাঝের পর্বে পর-পর উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে গিয়েছিল তারা। সেখান থেকে প্রায় বাদ পড়ার মুখে দাঁড়িয়ে থাকা সুদীপ চট্টোপাধ্যায়ের লড়াকু ইনিংস বাংলাকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনে।

তামিলনাড়ুর স্পিনার রাহিল এস শাহ আতঙ্ক তৈরি করে দিয়েছিলেন বাংলার শিবিরে। দ্বিতীয় ইনিংসেও পাঁচ উইকেট নেন তিনি। শুরুতে বাংলার ব্যাটসম্যানেরা বেশ প্রত্যয় নিয়েই খেলছিলেন। তামিলনাড়ু চাপ দিতে থাকলেও তাতে ভেঙে পড়েননি তাঁরা। একমাত্র সাফল্য আসে মনোজ তিওয়ারির উইকেটে। টি নটরাজনের বলে ১৮ রান করে এলবিডব্লিউ হন মনোজ। জয়ের জন্য বাংলার যখন দরকার ১০০ রান, তখনও মনে হচ্ছিল যে কেউ জিততে পারে।

Advertisement

আরও পড়ুন: ম্যাচের সেরা অভিষেক, লড়াইয়ে মুগ্ধ অরুণও

সেই পরিস্থিতিতেই প্রথমে হাল ধরেন সুদীপ। পাঁচ নম্বরে নেমে তাঁর ১১৮ বলে ৪০ রানের সাহসী ইনিংস দলকে জয়ের রাস্তা থেকে হঠে যেতে দেয়নি। এ বারে একেবারেই রানের মধ্যে না থাকায় সুদীপকে বাদ দেওয়ার কথাও উঠছিল। শনিবারের এই ইনিংস সেই সব দাবিকে আপাতত দূরে তো সরিয়েই দিল, পাশাপাশি বাংলার রঞ্জি অভিযানে নির্ভরযোগ্য এক ব্যাটসম্যানকেও ফর্মে ফিরিয়ে আনল।

আরও পড়ুন: বিরাট-বাণ, অস্ট্রেলিয়াকে তো চিনি!

কিন্তু একা সুদীপ নন, এ দিন বাংলাকে শেষ পর্যন্ত জয়ের স্বাদ এনে দেওয়া ক্রিকেটারের নাম প্রদীপ্ত প্রামাণিক। তাঁর হার-না-মানা মনোভাব না থাকলে এ দিন ম্যাচ জেতা হয় না। মনোজ, অনুষ্টুপ মজুমদার, ঋত্বিক চট্টোপাধ্যায়, শ্রীবৎস গোস্বামীকে পর-পর হারিয়ে বাংলা একটা সময় হয়ে গিয়েছিল ১৫০-৭। সেখান থেকে সুদীপ এবং প্রদীপ্ত প্রামাণিক প্রায় ২৫ ওভার ধরে টিকে থেকে ৫৭ রান যোগ করে খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেন।

লাঞ্চের সময় বাংলা ছিল ১৮০-৭। জয় থেকে তখনও ৩৬ রান দূরে তারা। হাতে তিন উইকেট। সুদীপকে যখন স্টাম্প করে দিলেন এন জগদীশান, তখনও ৯ রান দূরে বাংলা। নাটকের সেখানেই শেষ নয়। অশোক ডিন্ডা ১ রান করে রান আউট হয়ে গেলেন। তখনও জেতার জন্য ২ রান বাকি। ক্রিজে প্রদীপ্তর সঙ্গী এগারো নম্বর ব্যাটসম্যান এবং ফাস্ট বোলার ঈশান পোড়েল। তাঁরা দু’জনে লেগবাইয়ের জন্য দৌড়ে স্মরণীয় জয় এনে দেন।

বাংলার ওপেনার অভিষেক রামন কম স্কোরের ম্যাচে দুই ইনিংসেই সর্বোচ্চ স্কোর করে গেলেন। ৯৮ এবং ৫৩। তিনিই ম্যান অফ দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হয়েছেন। রঞ্জি ট্রফিতে এ বারের মতো বাংলার আশা প্রায় শেষই হয়ে যেত এই ম্যাচ হেরে গেলে। তার বদলে এখন ভাল কিছুর স্বপ্ন যে ফিরে এসেছে, তার পিছেন প্রধান কৃতিত্ব চার জনের।

অভিষেক রামন, সুদীপ চট্টোপাধ্যায়, ঋত্বিক এবং প্রদীপ্ত প্রামাণিকের। ২৯ রানে অপরাজিত থেকে প্রদীপ্ত হয়ে উঠলেন ‘ফিনিশার’। বাংলা এখন ‘এ’ ও ‘বি’ গ্রুপের ১৮টি দলের মধ্যে ছ’নম্বরে। এই দুই গ্রুপ থেকে সেরা পাঁচ দল উঠবে শেষ আটে। বাকি তিনটি দল যাবে অন্য দুই গ্রুপ থেকে।

অধিনায়ক মনোজ বিকেলে চেন্নাই থেকে ফোনে বলছিলেন, ‘‘ওই অবস্থায় যে হারের কথা মাথায় আসেনি, তা বললে মিথ্যে বলা হবে। তবে সুদীপ-প্রদীপ্ত যে ভাবে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠছিল, তাতে আতঙ্কটা ক্রমশ উড়ে যায়। দুর্দান্ত জয় ছাড়াও সুদীপের এই প্রত্যাবর্তন আমাদের জন্য সুখবর।’’ চেন্নাই থেকে ফোনে সুদীপ বললেন, ‘‘সামনে একটা রাফ তৈরি হয়েছিল, ওটাতে যাতে বল না পড়ে, তা নিশ্চিত করতেই বারবার স্টেপ-আউট করতে হচ্ছিল। ঝুঁকিটা নেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না।’’

চার দিনের ম্যাচও যে কত উত্তেজনার বারুদে ঠাসা হতে পারে, বুঝতে পারছিল দুই শিবির। শেষের দিকে প্রদীপ্ত, অশোক ডিন্ডা ও ঈশান পোড়েলের হাতে বাংলার ভাগ্য। ‘‘৯ রানই তখন ৯০ রান মনে হচ্ছিল’’, বলছিলেন মনোজ। স্কোর সমান-সমান অবস্থাতেও অদম্য ছিল তামিলনাড়ু। শেষ উইকেট নিয়ে ম্যাচ টাই করতে মরিয়া ওঠেন নটরাজন। কিন্তু এক রান নিয়ে দলকে লক্ষ্যে পৌঁছে দেন প্রদীপ্ত। বাংলার ড্রেসিংরুমে উচ্ছ্বাসের বিস্ফোরণ!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন