আক্ষেপ সুশীলার

চার বার সেরা, তবুও অধরা ধনুক

জামশেদপুরের একটি বেসরকারি সংস্থার সহায়তায় সেখানে অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু ভাল ধনুক ছাড়া যে বেশি দূর এগোনো সম্ভব নয়, তা বিলক্ষণ বোঝেন তিনি।

Advertisement

প্রশান্ত পাল

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৪:২৫
Share:

কৃতী: সুশীলা হেমব্রম। ছবি: সুজিত মাহাতো

২০১৫ সাল। ‘একটা ভাল ধনুক চাই’— মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার নিতে এসে এমনই আর্তি জানিয়েছিলেন জঙ্গলমহল কাপের তিরন্দাজি বিভাগের প্রথম স্থানাধিকারী সুশীলা হেমব্রম। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের দায়িত্ব দেন। কিন্তু ধনুক আসেনি।

Advertisement

২০১৬ সাল: ‘একটা ধনুক চাই’— ফের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জঙ্গলমহল কাপের তিরন্দাজি বিভাগের প্রথম হওয়ার পুরস্কার নিতে এসে আকুতি জানান সুশীলা। মুখ্যমন্ত্রী জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের দেখতে বলেন। তারপরে কয়েক মাস ধরে নয়াগ্রাম থানার পড়াশিয়া গ্রামের ওই তরুণী পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসকের অফিসে যাওয়া-আসা করেছেন। কিন্তু পছন্দের ধনুক হাতে পাননি।

সেই সুশীলা মঙ্গলবার পুরুলিয়ায় জঙ্গলমহল কাপের তিরন্দাজি বিভাগে ফের প্রথম হয়ে নিজেকে প্রমাণ করলেন। এ নিয়ে পরপর চার বার ওই সম্মান পেলেন তিনি। কিন্তু রাজ্য সরকারের কাছে একটা আধুনিক মানের ধনুক পেলেন না জঙ্গলমহলের এই কৃতী তিরন্দাজ। এ দিন তাই বিজয়ী হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণার পরেও হাসি ফোটেনি লড়াকু মেয়েটির মুখে। সাবেকি ধনুকখানা আঁকড়ে অভিমানী গলায় বলেন, ‘‘একটা ভাল ধনুক কেনার মতো আর্থিক সামর্থ্য নেই। পরপর দু’বার মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ধনুক চেয়ে অনুরোধ করেছিলাম। তিনি আধিকারিকদের বলেওছিলেন। কিন্তু আজও তা পাইনি। আশা ছেড়ে দিয়েছি। এখন আর ও সব নিয়ে ভাবি না।’’

Advertisement

জামশেদপুরের একটি বেসরকারি সংস্থার সহায়তায় সেখানে অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু ভাল ধনুক ছাড়া যে বেশি দূর এগোনো সম্ভব নয়, তা বিলক্ষণ বোঝেন তিনি। আক্ষেপ জড়ানো গলায় তরুণী বলেন, ‘‘কী আর করব? আমরা খুবই গরিব। সামান্য জমিতে বাবা চাষ করেন। মা দিনমজুরি করেন। ওঁদের কষ্টের পয়সায় আমি এতদিন তিরন্দাজি শিখছি। কিন্তু এই ধনুক দিয়ে কতদূর যাওয়া যাবে? বাবা-মায়ের কষ্টের জন্য এখন লজ্জা লাগে।’’ যদিও ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক আর অর্জুন এ দিন আশ্বাস দিয়েছেন, ‘‘সুশীলা আমার কাছে আবেদন করলে তাঁকে সাহায্য করা হবে।’’

পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম ও বীরভূম জেলার জঙ্গলমহলের তিরন্দাজি প্রতিযোগিতার ফাইনালের আসর বসেছিল পুরুলিয়া শহরে। পুরস্কার নেওয়ার পরে উচ্ছ্বাসের বদলে সুশীলাকে শুকনো মুখে দেখা গিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘২০১৫ সালে মুখ্যমন্ত্রীকে ধনুক দেওয়ার কথা মনে করিয়ে দিতেই, তিনি পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসককে ব্যবস্থা করতে বলেন। এরপরে মাঝে মধ্যেই জেলাশাসকের অফিস থেকে ডেকে পাঠাত। মেদিনীপুরে যাওয়ার খরচটুকুও আমাদের পরিবারের পক্ষে অনেক। তাও আশা নিয়ে যেতাম। সারা দিন বসে থেকে খালি হাতে ফিরতে হতো।’’ তাঁর অভিযোগ, অনেক ঘোরাঘুরির পরে একবার তাঁকেই ধনুকের কোটেশন জোগাড় করে আনতে বলা হয়। কলকাতায় গিয়ে তিরন্দাজ দোলা বন্দ্যোপাধ্যায় ও পরিচিত কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে ধনুকের কোটেশনও এনে জমা করেছিলেন। তারপরে জেলা প্রশাসনের তরফে যে ক’টি ধনুক দেখানো হয়েছিল, তার মান ভাল নয়। এরপরে হতাশ হয়ে আর তিনি যোগাযোগ করেননি।

গত কয়েক বছর পুরস্কার দেওয়া হতো ঝাড়গ্রামে, মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে। এ বার মঙ্গলবারই পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার জয় বিশ্বাস তাঁদের পুরস্কার দেন। ফলে এ বার ঝাড়গ্রামে জঙ্গলমহল কাপের ফুটবলের সেরা দলকে মুখ্যমন্ত্রী যদি পুরস্কার দিতে আসেন, সুশীলা কি সেখানে ফের নিজের হতাশা পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ পাবেন? সে আশাও করেন না জঙ্গলমহলের এই কৃতী তিরন্দাজ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন