কলকাতার দুই প্রধানেই খেলে গিয়েছেন দাপটের সঙ্গে। কিন্তু বেঙ্গালুরু অধিনায়ক সুনীল ছেত্রীর কাছে কলকাতা এখন ‘ক্লোজড চ্যাপ্টার’। বরং তিনি মনে করছেন, গত তিন বছরে বেঙ্গালুরুর মতো ঝকঝকে ইতিহাস ভারতের কোনও দলের নেই।
আজ, বুধবার এএফসি কাপ ফাইনাল খেলতে দোহা রওনা হয়ে যাচ্ছে তাঁর দল বেঙ্গালুরু এফসি। প্রতিপক্ষ আল-কওয়া-আল-জইয়া (এয়ারফোর্স ক্লাব ইরাক)। সেমিফাইনালের ফিরতি লেগে মালয়েশিয়ার জোহর দারুল তা’জিমের বিরুদ্ধে সুনীলের জোড়া গোল বেঙ্গালুরুকে ফাইনালে তুলতে বড় ভূমিকা নিয়েছিল। শনিবার সেই ফাইনালের আগে অধিনায়ক সুনীল বলছেন, এটাই তাঁর জীবনের অন্যতম সেরা ম্যাচ হতে চলেছে।
পাঁচ বছর আগে এই দোহাতেই এশিয়ান কাপের মূল পর্বে খেলেছিল সুনীলের ভারত। মঙ্গলবার ফেডারেশন ওয়েবসাইটে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সুনীল সেই প্রসঙ্গ টেনে এনে বলেন, ‘‘পাঁচ বছর আগে এশিয়ান কাপে দেশের হয়ে খেলেছি। কিন্তু এ বার দোহা যাচ্ছি ক্লাবের হয়ে এএফসি কাপ জিততে। দু’টোই ভিন্ন টুর্নামেন্ট। এশিয়ান কাপ অনেক কিছু শিখিয়েছিল। এ বার নতুন একটা লড়াই। আশা করছি সব পরিকল্পনা ঠিকঠাক খেটে গেলে এ বার হাসিমুখে দেশে ফিরতে পারব।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘পাঁচ বছর আগে এশিয়ান কাপে খেলতে গিয়েছিলাম একদম খোলা মনে। কিছু হারানোর ছিল না। কিন্তু এ বার কাপ ফাইনালে যাচ্ছি ইতিহাস গড়ার সংকল্প নিয়ে।’’
সেই সংকল্প বাস্তবে পরিণত করার মোটিভেশন কী? সুনীল বলেন, ‘‘এটা এমন একটা ম্যাচ যার মোটিভেশন আপনা থেকেই চলে আসছে। তা ছাড়া আমাদের কোচ এএফসি কাপ ফাইনালের প্রতি মুহূর্ত সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করতে বলেছেন। এর চেয়ে বড় মোটিভেশন আর কী হতে পারে!’’
কলকাতার সমর্থক প্রধান দুই ক্লাব মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গলে খেলেছেন সাফল্যের সঙ্গে। কিন্তু বেঙ্গালুরুর ‘ক্যাপ্টেন মার্ভেল’ (বেঙ্গালুরু সমর্থকরা এখন এই নামেই ডাকছেন সুনীলকে) এ দিন ঘুরিয়ে সমর্থন করেছেন আই লিগে ফেডারেশনের কর্পোরেট টিম গঠনের প্রয়াসকে। কর্পোরেট টিম নিয়ে গত কয়েক বছরে ফেডারেশনের সমালোচনা হয়েছে। এ দিন সে প্রসঙ্গ তুললে সুনীল বলেন, ‘‘এটা নিয়ে আমি বলার কেউ নই। ফলাফলই যা বলার বলবে। গত তিন বছরে পথ চলা শুরু করে বেঙ্গালুরু দু’টো আই লিগ ও একটা ফেডারেশন কাপ জিতেছে। প্রথম বছরে এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের নকআউটে গিয়েছি। এ বার এএফসি কাপ ফাইনালে। জানি না গত তিন বছরে ভারতের কোনও ক্লাবের এ রকম ইতিহাস রয়েছে কি না।’’
ফাইনালের প্রস্তুতি নিয়ে সুনীল জানিয়েছেন, গত ১৯ অক্টোবর সেমিফাইনালের দু’দিন পর থেকেই প্র্যাকটিস শুরু করে দিয়েছেন বেঙ্গালুরুর স্প্যানিশ কোচ অ্যালবার্ট রোকা। নিজেদের খেলার ভিডিও থেকে ভুলত্রুটি খুঁজে বের করার পাশাপাশি কাটাছেঁড়া হয়েছে ইরাকের টিমকে নিয়েও। যে টিম নিয়ে সুনীল বলছেন, ‘‘ওরা শক্তিশালী। জাতীয় দলের পাঁচ-ছ’জন ফুটবলার আছে দলে। আমরাই সেখানে আন্ডারডগ। ওদের ভিডিও দেখেছি। ওরা কঠিন প্রতিপক্ষ হলেও ওদের হারানো যায়। ফাইনালে বলের দখল হারালেই নেমে এসে বিপক্ষের আক্রমণের রাস্তা বন্ধ করব আমরা এগারো জনই।’’
ফাইনালের আগে সুনীলদের জন্য বেঙ্গালুরু কোচের বক্তব্যও বেশ অনুপ্রেরণামূলক। সুনীলদের জন্য রোকার ভোকাল টনিক, ‘‘এখনও পর্যন্ত কিছুই হয়নি। এই ম্যাচের আগে অতীতে কী হয়েছে বা এই ফাইনাল জিতলে ভবিষ্যতে কী হতে পারে, তা না ভেবে ম্যাচে ফোকাস করো। আর কিছু ভাবতে হবে না।’’