মশাল বাহিনী আর আমনাকে ভয় নীল সৈন্যদের

কী আশ্চর্য কাকতালীয় ভাবে মরসুমের শেষ ম্যাচে এসেই সেই প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার দিন হাজির। আজ শুক্রবার ভুবনেশ্বরের কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে ঠিক হয়ে যাবে সেরা কে?

Advertisement

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৮ ০৪:০৮
Share:

ইস্টবেঙ্গলের আল আমনা। ফাইল চিত্র

ফাইনালে উঠেও আইএসএল ট্রফি জিততে পারেনি বেঙ্গালুরু এফ সি।

Advertisement

আই লিগে খেতাব জেতার লড়াইতে অনেক কাছে গিয়েও শেষ পর্যন্ত ট্রফি অধরা থেকে গিয়েছে ইস্টবেঙ্গলের।

আইএসএল না আই লিগ, কোনটা সেরা টুর্নামেন্ট সেই বহু চর্চিত বিষয় নিয়ে ভারতীয় ফুটবল তোলপাড় হয়েছে বছরভর। এবং কী আশ্চর্য কাকতালীয় ভাবে মরসুমের শেষ ম্যাচে এসেই সেই প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার দিন হাজির। আজ শুক্রবার ভুবনেশ্বরের কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে ঠিক হয়ে যাবে সেরা কে?

Advertisement

আইএসএল বনাম আই লিগ!

বেঙ্গালুরু বনাম ইস্টবেঙ্গল।

নিকোলাস ফেদর (মিকু) বনাম আল আমনা।

সুনীল ছেত্রী বনাম ইউসা কাতসুমি।

নানা রঙের এ রকম অসংখ্য লড়াইয়ের বারুদ উপস্থিত আজকের ফাইনালে। এখানেই শেষ নয়। ক্লাবের জন্মের পর গত চার বছরে কোনও না কোনও ট্রফি উঠেছে সুনীল ছেত্রীদের হাতে। এ বার সেই লক্ষ্যে এখনও পৌঁছতে পারেনি বেঙ্গালুরু। তাদের কোচ আলবের্তো রোকার গলায় তারই রেশ, ‘‘যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হতে পারিনি। বেঙ্গালুরুর পরম্পরা হল প্রতি বার অন্তত একটা ট্রফি জেতা। সুপার কাপটা জেতার জন্য তাই ছেলেরা মরিয়া। হ্যাঁ মানছি, জেতার ব্যাপারে পঞ্চাশ ভাগ এগিয়ে আমরা। বাকিটা মাঠে নেমে হবে।’’ মাত্র দু’দিন আগেই দশ জনে খেলে মোহনবাগানকে চার গোল দিয়েছিল বেঙ্গালুরু। সম্ভবত সে জন্যই ফাইনালের চব্বিশ ঘণ্টা আগে বেঙ্গালুরুর স্প্যানিশ কোচের গলায় উপচে পড়ে আত্মবিশ্বাস।

যা শুনে সুভাষ ভৌমিকের মুখে একই সঙ্গে সম্ভ্রম এবং জেদ। ফোনে বললেন, ‘‘বেঙ্গালুরু দেশের একমাত্র দল যারা খেলতে খেলতে রণনীতি বদলায়। একই দল ধরে রেখেছে। তবে বিশ্বে কোনও দল অপরাজেয় নয়। সবাই হারতে পারে। বার্সোলোনাকেও হারতে হয়েছে রোমার কাছে।’’ তাঁর কোচিংয়ে আসিয়ান কাপ জয়ের কথা টেনে আনেন সুভাষ। বেক তেরো সাসানার মতো শক্তিশালী টিমের বিরুদ্ধে খেলা লাল-হলুদ জার্সির সেই গৌরবগাথা এ দিনও বারবার ফেরে তাঁর মুখে। তার পর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সুভাষ বলে দেন, ‘‘জায়গা এবং সময় কোনওটাই মাঠে দেওয়া যাবে না ওদের। বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে মোহনবাগান মাত্র পাঁচ মিনিট মনঃসংযোগ নষ্ট করেই ডুবছিল।’’

ইস্টবেঙ্গলের সব থেকে বড় ধাক্কা ডুডু ওমাগবেমির না থাকা। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত খবর, দলের সফলতম নাইজিরীয় স্ট্রাইকারের চোট সারেনি। জোর করে আঠারো জনের দলে রাখলেও শুরুতে নামানো হচ্ছে না তাঁকে। এ দিনও পুরো অনুশীলন করেননি ডুডু। কোচ খালিদ জামিল ‘‘ডুডু হয়তো খেলবে’’ বলে ধোঁয়াশা রাখলেও টিডি সুভাষ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘‘ডুডুর খেলা কঠিন। ওর জায়গায় ক্রোমা (আনসুমানা) শুরু করবে।’’ ডুডুকে নিয়ে সুভাষ এবং খালিদ দু’রকম কথা বললেও তাদের মধ্যে এ দিন কোনও চাপান উতোর হয়নি। বরং খালিদ বলে দিয়েছেন, ‘‘সুভাষদা দলের সব বিভাগেই উন্নতির জন্য সাহায্য করেছেন।’’ যা শুনে সুভাষ হেসেছেন।

কোচ বনাম টিডির দ্বৈরথ বন্ধ হওয়ায় ইস্টবেঙ্গল হোটেলের গুমোট ভাব অনেকটাই কেটে গিয়েছে। কিন্তু ডুডু সুস্থ না হওয়ায় চাপ বেড়েছে লাল-হলুদ শিবিরে। সুব্রত ভট্টাচার্য থেকে ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়— দু’জনেই কলকাতায় খেতাব আসা নিয়ে সংশয়ে। তাঁরা বলছেন, ‘‘ডুডুর না থাকাটা বড় ক্ষতি। এখন ম্যাচ পঞ্চাশ-পঞ্চাশ।’’ সুভাষ অবশ্য এই কলরবকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। ‘‘এফ সি গোয়াও তো পাঁচ জন সেরা ফুটবলার ছাড়াই নেমেছিল আমাদের বিরুদ্ধে। সেমিফাইনালে কী অবস্থা করেছিল আমাদের দেখেছেন তো? আসল হল পরিকল্পনা। কী ভাবে আমরা খেলব।’’

বেঙ্গালুরুর কোচ স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, ‘‘আমনাই ইস্টবেঙ্গলের আসল শক্তি। ভারতে খেলা বিদেশির মধ্যে আমনা আমার দেখা সেরা। কাতসুমিও ভাল খেলছে।’’ সুভাষ বা খালিদ বিপক্ষের কোনও এক জনকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। সুনীল-মিকু-উদান্ত সিংহকে নিয়ে তৈরি বেঙ্গালুরুর ত্রিফলা ঝড় তোলে প্রতিপক্ষের বক্সে, তাদের নিয়ে ভাবছেন না ওঁরা। দু’জনেরই বক্তব্য, ‘‘দলগত সংহতিই বেঙ্গালুরুর সম্পদ।’’ উল্টে সুভাষ বলে দেন, ‘‘মিকুকে নিয়ে এত হইচইয়ের কিছু নেই। মাইক ওকোরো, জোসে ব্যারেটোরাও ওর মতো খেলত।’’ কলকাতা থেকে প্রচুর ইস্টবেঙ্গল সমর্থক গিয়েছেন লাল আবির নিয়ে। নীল জার্সিতে বেঙ্গালুরুর সমর্থকরাও পৌঁছে গিয়েছেন।

মশাল বাহিনী বনাম নীল সৈন্যের লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত কলিঙ্গ-জয় করে কে সেটাই দেখার।

সুপার কাপ ফাইনালে:

ইস্টবেঙ্গল বনাম বেঙ্গালুরু এফ সি (বিকেল ৪টে, স্টার স্পোর্টস টু ও এইচডি টু চ্যানেলে)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন