গল হাহাকারের বদলা নেওয়ার সেরা সুযোগ

রোববার রাত আটটা চল্লিশ। ঋদ্ধিমান সাহা জানাচ্ছেন, দেশের ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। এমনকী যদি রাত্তিরে পায়ের চোটের উন্নতি হয়—সোমবার মাঠে নামার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না।

Advertisement

গৌতম ভট্টাচার্য

কলম্বো শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৫ ০২:৪৩
Share:

শতরানের পর রাহানে। ছবি: এএফপি।

ভারত: ৩৯৩ ও ৩২৫-৮ (ডি:) শ্রীলঙ্কা: ৩০৬ ও ৭২-২

Advertisement

রোববার রাত আটটা চল্লিশ। ঋদ্ধিমান সাহা জানাচ্ছেন, দেশের ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। এমনকী যদি রাত্তিরে পায়ের চোটের উন্নতি হয়—সোমবার মাঠে নামার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না।

অথচ তাঁর সঙ্গে ফোনে কথা হওয়ার অন্তত মিনিট পঁচিশেক আগে বোর্ডের বিজ্ঞপ্তি চলে এসেছে— ঋদ্ধি এবং মুরলী বিজয় বাকি সিরিজে চোটের জন্য দল থেকে বাদ। তাঁদের জায়গায় সফরে আসছেন নমন ওঝা ও করুণ নায়ার।

Advertisement

এমনকী অপেশাদার দাবাড়ুদের মধ্যেও একটা কথা চলে— ঘোড়া দিয়ে মন্ত্রী খাও, তার পর ঘোড়া গেলে যাবে।

কলম্বোর ওভাল টেস্টে ভারত যদি সোমবার সিরিজ সমান-সমান করে দেয়, তা হলে কি দাবারই পরিস্থিতি দাঁড়াচ্ছে না? মন্ত্রী খেতে গিয়ে তো দু’টো দ্রুতগামী ঘোড়া চলে গেল—মুরলী আর ঋদ্ধি। একে টিমের ব্যাটিং গভীরতা নিয়ে এত সমস্যা। তার পর এই দু’জন চলে যাওয়া মানে তো টিম ১-১ করার মৌতাতটাই উপভোগ করতে পারবে না।

অবশ্য তার আগে সবচেয়ে বড় জিজ্ঞাসা ভারত কি বাকি আট উইকেট নব্বই ওভারের মধ্যে ফেলে দিতে পারবে? আগেকার দিনে যত খেলা গড়াত তত পিচ খারাপ হত। তাই থার্ড বা ফোর্থ ইনিংসের রানকে বলা হত ব্যাটসম্যানের জাত চেনায়। আধুনিক স্ট্যাটিসটিক্স পুরো উল্টো দিকে হাঁটছে।

এ দিন কোহলি-শাস্ত্রী যুগ্ম মগজাস্ত্রের ডিক্লেরেশনে এত বিলম্ব নিয়ে নানা কথা হচ্ছিল। বলা হচ্ছিল ৪১৩ করতে হবে বিপক্ষকে— এত নিরাপদ থাকার কী অর্থ? এতে উল্টে শ্রীলঙ্কাকে তিরিশ ওভারও খেলানো গেল না। দু’উইকেটের বেশি ফেলা গেল না।

হালফিল চতুর্থ ইনিংসে রান তাড়া হওয়ার যা স্ট্যাটস সেটা দেখলে অবশ্য নিরাপদ থাকার কারণ ব্যাখ্যা সম্ভব। ক্রিকেটের একশো আটত্রিশ বছরের ইতিহাসে মোট মাত্র ৪৯ বার ফোর্থ ইনিংসে কোনও টিম সাড়ে তিনশো বা তার বেশি তুলতে পেরেছে। এর মধ্যে ২১ বার সেটা হয়েছে ২০০৬-উত্তর যুগে। গত বারো বছরে এমন সংখ্যার সফল রানচেজ হয়েছে মোট ৫ বার। অথচ মে ১৯৭৮ থেকে অক্টোবর ১৯৯৯, এই একুশ বছরে একবারও হয়নি। জাভেদ মিঁয়াদাদের মতো খারাপ উইকেটের ওস্তাদও তাঁর গোটা ক্রিকেটজীবনে একবারও সাড়ে তিনশো বা তার বেশি রান তোলার চতুর্থ ইনিংস অভিযানে থাকতে পারেননি। অথচ এখন ঘনঘন হচ্ছে। এক তো উইকেট এখন সারা ম্যাচ একই রকম ভাল থাকছে। দুই, ব্যাটসম্যানদের হাতে শট অনেক বেড়ে গিয়েছে। তারা আগের চেয়ে অনেক দ্রুত রান তুলতে পারে।

তা বলে পড়ে থাকা নব্বই ওভারে শ্রীলঙ্কা ৩৪১ তুলে দেবে আশা করাটা বাড়াবাড়ি। ধামিকা প্রসাদ বলছিলেন, ‘‘এখনও জেতার জন্য খেলব আমরা। যাতে সঙ্গাকে সিরিজটা কালই উপহার দিতে পারি।’’ কিন্তু মনে হয় না তাতে খুব সারবত্তা আছে। বরং বাকি আট উইকেট বাঁচিয়ে রাখার জন্য শ্রীলঙ্কাকে যথেষ্ট বীরত্ব দেখাতে হবে।

ভারতের প্রধান অস্ত্র কে, তারা জানে। রবিচন্দ্রন অশ্বিন।

প্রধান কাঁটা কে, তা-ও। অ্যাঞ্জেলো ম্যাথেউজ।

গত দেড় বছর ধরে প্রচুর রান করে যাচ্ছেন অ্যাঞ্জেলো। টেস্ট ক্রিকেটে তাঁর গড় এখন বিরাট কোহলির চেয়েও ভাল— ৫২। কিন্তু এই টেস্ট বাঁচাতে হয় উইকেট আরও মন্থর হয়ে যেতে হবে। বা অ্যাঞ্জেলোকে অতিমানবীয় ইনিংস খেলতে হবে। গলের শেষ দিনের হাহাকারের বদলা নেওয়ার এটাই যে ভারতের সেরা সুযোগ, তা নিয়ে কোনও সন্দেহই থাকা উচিত না।

মুরলী বিজয় চলে গেলে ভারত হয়তো পূজারাকে দিয়ে এসএসসিতে ওপেন করাবে। তাতে মুরলীর অভাব দূর করা যাবে বলে মনে হয় না। গত দু’বছর মুরলী ভারতের সবচেয়ে ধারাবাহিক ব্যাট। এ দিন অজিঙ্ক রাহানে আর তিনি চমৎকার একটা পার্টনারশিপ করলেন। প্রথম ইনিংসে বাজে আউট হওয়াটা রাহানে মুছে দিলেন আজ তাঁর স্মার্ট ক্রিকেটে। তাঁর ক্রিকেট-গুরু রাহুল দ্রাবিড়ের পজিশনে ভারতীয় দলে প্রথম সুযোগ আর তাতেই সেঞ্চুরি। ভারত যখন টেস্ট গুছিয়ে নিয়ে আরওই নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার দিকে এগোচ্ছে, হঠাৎ ছন্দপতন। দেখা গেল ঋদ্ধি রান নিতে গিয়ে খোঁড়াচ্ছেন। একটু পর মাঠ থেকে ফিজিও তাঁকে বার করে নিয়েও গেলেন। তখনও মনে করা হচ্ছিল সতর্কতার জন্য হয়তো ঋদ্ধিকে তোলা হল। শ্রীলঙ্কা ইনিংসে কিপ করতে হবে— বিশ্রাম দেওয়া ভাল। সকলকে আশ্চর্য করে আবার ঋদ্ধি ফেরত এলেন। তখনও খোঁড়াচ্ছিলেন। মিডিয়া ম্যানেজার জানালেন, হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট। হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট তো খুব তাড়াতাড়ি সারে বলে শোনা যায় না। তা হলে এখুনি তাঁকে ব্যাট করতে পাঠানো হল কেন?

কেউ এখনও বোঝেনি। শ্রীলঙ্কা ইনিংস শুরুর সময় দেখা গেল কিপিং গ্লাভস হাতে লোকেশ রাহুল। ঋদ্ধির ফিটনেস বলা হল জরিপ করা হবে এবং তার পর রাতের মেল-আঘাত। বহু বছর পর বাংলার কোনও ক্রিকেটার জাতীয় দলে প্রতিষ্ঠা পাচ্ছিলেন, এত তাড়াতাড়ি পাওয়া চোট তাঁকে সাময়িক বিশ্রামে ঠেলে দিল।

বৃষ্টি শত্রুতা করলে অন্য কথা। নইলে বাকি আট উইকেট সোমবার না ফেলা গেলে ঋদ্ধি-মুরলীর চোটের চেয়েও ভারতীয় শিবিরের জন্য হতাশজনক হবে। আর যদি ফেলাও যায়, প্রথম এগারোর আরও দু’জন চলে যাওয়ায় শেষ কলম্বো টেস্ট তো সত্যিই সমানে-সমানে শুরু হবে।

সঙ্গাও থাকছেন না ও দিকে। কিন্তু তাঁর যা ফর্ম দেখা গেল তাঁকে অন্তত এখন ও দিকের ঘোড়া বা গজ ধরার উপায় নেই! অবশ্য যতক্ষণ ভারত শেষ আট উইকেট না ফেলছে, ততক্ষণ কালনেমির লঙ্কাভাগ!

কলম্বো টেস্টের স্কোর
ভারত প্রথম ইনিংস ৩৯৩। শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংস ৩০৬।

ভারত দ্বিতীয় ইনিংস (আগের দিন ৭০-১) বিজয় এলবিডব্লিউ কৌশল ৮২, রাহানে ক চণ্ডিমল বো কৌশল ১২৬, কোহলি এলবিডব্লিউ কৌশল ১০, রোহিত ক মুবারক বো কৌশল ৩৪, বিনি ক থিরিমান্নে বো প্রসাদ ১৭, ঋদ্ধিমান অপরাজিত ১৩, অশ্বিন ক চণ্ডিমল বো প্রসাদ ১৯, মিশ্র ক মুবারক বো প্রসাদ ১০, উমেশ অপরাজিত ৪, অতিরিক্ত ৮, মোট ৩২৫-৮ ডিঃ। পতন: ২-১৪৩, ৩-১৭১, ৪-২৫৬, ৫-২৬২, ৫-২৬৭(ঋদ্ধি আহত অবসৃত), ৬-২৮৩, ৭-৩১১, ৮-৩১৮। বোলিং: প্রসাদ ১৫-০-৪৩-৪, হেরাথ ২৯-৪-৯৬-০, চামিরা ১৪-০-৬৩-০, ম্যাথেউজ ২-১-১-০, কৌশল ৩১-১-১১৮-৪। শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় ইনিংস সিলভা ক বিনি বো অশ্বিন ১, করুণারত্নে ব্যাটিং ২৫, সঙ্গকারা ক বিজয় বো অশ্বিন ১৮, ম্যাথেউজ ব্যাটিং ২৩, অতিরিক্ত ৫, মোট ৭২-২। পতন: ১-৮, ২-৩৩। বোলিং: অশ্বিন ১০-৫-২৭-২, উমেশ ২-০-১০-০। ইশান্ত ৪-০-১৮-০, মিশ্র ৫-১-১৩-০।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন