ছবি: রয়টার্স।
ভারত যদি লর্ডস টেস্ট জেতে, সবচেয়ে বেশি পিঠ চাপড়ানি কার প্রাপ্য হওয়া উচিত? তিন-চারটে নাম আছে। অজিঙ্ক রাহানে। প্রথম ইনিংসে দুধর্র্র্ষ সেঞ্চুরির জন্য। মুরলী বিজয়, ধারাবাহিক ভাল পারফরম্যান্সের জন্য। রবীন্দ্র জাডেজা, জয়ের দরজাটা খুলে দেওয়ার জন্য। আর অবশ্যই ভুবনেশ্বর কুমার অবিশ্বাস্য অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে টিমকে পরের পর টেস্টে টেনে যাওয়ার জন্য।
আমার কাছে শেষ নামটা সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য। এটাও মনে হচ্ছে যে, যদি সিরিজ ভারত জেতে, সেখানে হয়তো ভুবির অবদানই সবচেয়ে বেশি হবে। আট নম্বরে ব্যাট করে শেষ তিন ইনিংসে দু’টো হাফসেঞ্চুরি গেল ও! আজ জাডেজার ইনিংসটা মর্যাদা পেল ভুবির জন্য। ওর রান না থাকলে ভারতও এগিয়ে থাকত কিনা সন্দেহ!
ক্রিকেটপ্রেমীরা নিশ্চয়ই অবাকই হচ্ছেন ব্যাটসম্যান ভুবির জন্ম দেখে। আমি বরং আশ্চর্য হচ্ছি ভেবে যে, গত তিন বছরে কেন ওর এই ব্যাটিং ফর্ম দেখলাম না। ওর সঙ্গে আমার সম্পর্ক ২০০৯ থেকে। উত্তরপ্রদেশের বিরুদ্ধে সে দিন আমি নিজের শেষ প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলতে নামছি। গ্রিন টপ উইকেট ছিল, ভুবি খেলবে জানতাম। ম্যাচে নামার আগে বুঝেও ছিলাম, ছেলেটা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। ওই ম্যাচে দু’টো ইনিংসেই আমি ওর বলে আউট হই। আর তার পর বুঝে যাই, সময় নষ্ট করলে চলবে না। আইপিএলে যে টিমের সঙ্গে আমি যুক্ত হতে যাচ্ছি, সেখানে ওকে আনব। আরসিবি থেকে ভুবিকে পুণেয় আনতে চাইলে ও এক কথায় চলে এসেছিল।
কিন্তু একটা জিনিস বুঝতাম না। উত্তরপ্রদেশের হয়ে যে ব্যাটিংটা ওর দেখতাম, শুনতাম, সেটা কোথায় গেল? উত্তরপ্রদেশে মাঝেমধ্যেই ওকে সত্তর-আশি করতে শুনতাম। কিন্তু আইপিএলে আর পরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও দেখলাম যে ও বোলিংকেই ধ্যানজ্ঞান করে নিয়েছে। ভুবির সঙ্গে দেখা হলে ওকে মাঝে মাঝেই বলতাম, ব্যাটিংটাও সিরিয়াসলি নিতে শুরু কর। তুই ওটাও ভাল পারিস। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিন বছর কাটানোর পর ভুবি দেখছি পুরনো দিনে ফিরে গিয়েছে। মানে, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে যা করত, সে সবে। ব্যাটিং প্লাস বোলিং।
তবে এখনও ওকে অলরাউন্ডার বলব না। বলব এফেক্টিভ ব্যাটসম্যান। যে বলের সঙ্গে ব্যাটেও তিরিশটা রান দিয়ে যাবে। এই সফরে ভুবি একাই কুকদের কাঁপিয়ে দিয়েছে। সেটাও আশ্চর্যের কিছু নয়। ওকে যদি ওর পছন্দের উইকেট দেওয়া হয়, ও এমন লেংথে ফেলতে শুরু করবে যে ব্যাটসম্যান বুঝে উঠতে পারবে না কী ভাবে খেলা উচিত। পেসারদের অনেক সময়ই একটা সমস্যা হয়। অনেক সময় ওরা বিশেষ ভাবনাচিন্তা না করেই বল করতে শুরু করে। ভুবির ক্ষেত্রে সেটা একদম উল্টো। ওর বরাবরের রুটিন হল, দিনের শেষে কেউ যাক না যাক, ও সোজা ভিডিও অ্যানালিস্টের ঘরে ঢুকে যাবে। বিপক্ষ ব্যাটসম্যানের শটের ফুটেজ চাইবে। তার পর ঠিক করবে ওকে কী করতে হবে।
ভুবি খুব বুদ্ধিমান ক্রিকেটার। চুপচাপ থাকে বলে ওকে দেখে সেটা হয়তো বোঝা যায় না। সতীর্থদের ঠাট্টা-ইয়ার্কি চলার সময় ওর স্বভাব হল প্রথমে খুব মন দিয়ে শোনা, তার পর এমন একটা কথা বলে বসা যাতে সবার হাসতে হাসতে পেট ফাটবে। ঠিক তেমনই ক্রিকেটটাও খেলে মাথা কাটিয়ে। নিজে ব্যাট করতে পারে বলে ধরতে চেষ্টা করে কোন লেংথে বল ফেললে ওর নিজের সমস্যা হবে। তার পর সেই লেংথে করে যায়। নিজের উন্নতির চেষ্টা করে। একটা সময় ওয়াইড ইয়র্কার দেওয়া আয়ত্তে আনার জন্য ওকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নেটে পড়ে থাকতে দেখেছি। একা-একা।
ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে এখনও ভুবি কোনও উইকেট পায়নি। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের ঝামেলায় ফেলে দিয়ে গিয়েছে। কোথাও কোথাও দেখছি, ওর পারফরম্যান্স দেখে ভারত তার অতি প্রয়োজনীয় অলরাউন্ডার পেয়ে গিয়েছে বলাবলি হচ্ছে। কেউ কেউ আবার আশঙ্কায়ও পড়ছেন এটা ভেবে যে, ওর ব্যাটিংও সামনে চলে আসায় অবস্থাটা ইরফান পাঠানের মতো না হয়ে যায়। ভুবির সুবিধে হল, ও জানে ওর গতি ঘণ্টায় ১৪৫ কিলোমিটার হবে না। সেই চেষ্টা না করে মন দেয় সুইংয়ে, যেটা ওর মতো ক্রিকেটবিশ্বে খুব বেশি বোলারের নেই। প্রচণ্ড প্রতিভাবানদের একটা সমস্যা থাকে। নিজেদের লিমিট তারা বোঝে না। ভুবি অত মারাত্মক প্রতিভাবান নয়। নিজের সীমাবদ্ধতা মাথায় রেখে চেষ্টা করে কী ভাবে নিজের অস্ত্রগুলো সবচেয়ে ভাল প্রয়োগ করা যায়।
তাই আর যা-ই হোক, ভুবির পরিণতি ইরফানের মতো হবে না।
জয়ের দিকে ভারত
সংবাদ সংস্থা • লন্ডন
প্রায় তিন বছরেরও বেশি যে অপেক্ষাটা চলছে সেটা বোধহয় শেষ হওয়ার পথে। বিদেশের মাঠে ভারতের টেস্ট জয়ের অপেক্ষা। এর মধ্যে বিদেশে ১৫টা টেস্ট খেলেছে টিম ইন্ডিয়া, কিন্তু জয় অধরাই। ধোনিদের হাত ধরে লর্ডস টেস্টে জয়ের খরা কাটার সম্ভবনা উজ্জ্বল। গত ন’টেস্ট না জেতা ইংল্যান্ড চতুর্থ দিনের শেষে টার্গেটের থেকে ২১৪ রানে পিছিয়ে। চলে গিয়েছে চার উইকেট। প্যাভিলিয়নে ক্যাপ্টেন অ্যালিস্টার কুকও। চতুর্থ দিন এক সময় ২৩৫-৭ থেকে রবীন্দ্র জাডেজা (৬৮) আর ভুবনেশ্বর কুমারের (৫২) ব্যাট হাতে যে পাল্টা দাপট শুরু হয়েছিল, দিনের শেষে সেটা ভারতীয় বোলারদের হাতে। পঞ্চম দিনের পিচে ইংল্যান্ড ভারতীয় বোলারদের চ্যালেঞ্জ সামলাতে পারেন কিনা সেটাই দেখার। এ দিনই চা-বিরতিতে আইসিসি চেয়ারম্যান এন শ্রীনিবাসন বলেন, “সব দেশে ক্রিকেটের তিন ফর্ম্যাটকে জনপ্রিয় করাটাই চ্যালেঞ্জ আইসিসির।”
লর্ডসের স্কোরবোর্ড
ভারত প্রথম ইনিংস ২৯৫
ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস ৩১৯
ভারত দ্বিতীয় ইনিংস (আগের দিন ১৬৯-৪)
বিজয় ক প্রায়র বো অ্যান্ডারসন ৯৫
ধোনি ক বেল বো প্লাঙ্কেট ১৯
বিনি ক কুক বো আলি ০
জাডেজা ক কুক বো স্টোকস ৬৮
ভুবনেশ্বর ক বেল বো স্টোকস ৫২
শামি ক প্রায়র বো আলি ০
ইশান্ত ন.আ ০
অতিরিক্ত ২৯
মোট ৩৪২।
পতন: ২০২, ২০৩, ২৩৫, ৩৩৪, ৩৩৮, ৩৪২।
বোলিং: অ্যান্ডারসন ২৯-১১-৭৭-১, ব্রড ২৩-৬-৯৩-১, স্টোকস ১৮.১-২-৫১-৩, প্লাঙ্কেট ২২-৬-৬৫-৩, আলি ১১-৩-২৮-২।
ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংস
রবসন এলবিডব্লিউ জাডেজা ৭
কুক ক ধোনি বো ইশান্ত ২২
ব্যালান্স ক ধোনি বো শামি ২৭
বেল বো ইশান্ত ১
রুট ব্যাটিং ১৪
আলি ব্যাটিং ১৫
অতিরিক্ত ১৯
মোট ১০৫-৪।
পতন: ১২, ৭০, ৭১, ৭২।
বোলিং: ভুবনেশ্বর ৮-৪-১০-০, শামি ৭-১-২০-১, ইশান্ত ১০-৫-১৩-২, জাডেজা ১৬-৪-৩২-১, বিজয় ৪-১-১১-০, ধবন ১-০-১-০।