নাচতে নাচতে এলেন, খেললেন, জয় করলেন

মহাতারকাকে হারিয়ে টেনিস আকাশে উদয় নতুন তারার

কে জানত, সেই  বিয়াঙ্কাই তিন বছর পরে যুক্তরাষ্ট্র ওপেনের ফাইনালে কিংবদন্তি সেরিনা উইলিয়ামসকে ৬-৩, ৭-৫ হারানোর পরে সত্যিকারের ৩.১ মিলিয়ন পাউন্ডের (প্রায় ২৭ কোটি টাকা) চেক হাতে পাবেন! এ বার আসল চেক।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৪:০১
Share:

তৃপ্ত: যুক্তরাষ্ট্র ওপেন জয়ের পরে ট্রফিতে চুম্বন বিয়াঙ্কার। এএফপি

তিন বছর আগে একটি প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে ১৬ বছর বয়সি বিয়াঙ্কা আন্দ্রেস্কু নিজেকে একটা নকল চেক লিখে দিয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র ওপেন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে বিজয়ী যে রকম চেক পায়, ঠিক সে রকম। প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্র ওপেনে বিজয়ীর পুরস্কার মূল্য বেড়ে যা হত, বিয়াঙ্কা নকল চেক-এ সেই মূল্য বসিয়ে দিতেন।

Advertisement

তখনও টেনিস দুনিয়ায় কানাডিয়ান তরুণী বিরাট বড় সাফল্য পাননি। তবে চোখে ছিল বিশ্বসেরা হওয়ার অদম্য স্বপ্ন। তাই নিজেকে উৎসাহ দিতেই সে দিন প্রতীকী হিসেবে নকল চেক লিখেছিলেন। কে জানত, সেই বিয়াঙ্কাই তিন বছর পরে যুক্তরাষ্ট্র ওপেনের ফাইনালে কিংবদন্তি সেরিনা উইলিয়ামসকে ৬-৩, ৭-৫ হারানোর পরে সত্যিকারের ৩.১ মিলিয়ন পাউন্ডের (প্রায় ২৭ কোটি টাকা) চেক হাতে পাবেন! এ বার আসল চেক। বিয়াঙ্কার বিশ্বাস ছিল তিনি এক দিন সফল হতে পারবেন। ইচ্ছাশক্তির জোরে তাঁর কল্পনা রূপ নেবে বাস্তবে। তাই স্বপ্ন পূরণের পরে ১৯ বছর বয়সি আনন্দাশ্রু মুছতে মুছতে বলে দেন, ‘‘সেরিনা উইলিয়ামসের বিরুদ্ধে ফাইনালে খেলব এটা এক দিনের স্বপ্ন নয়। বহু দিন ধরে এই মুহূর্তটার অপেক্ষা করছি। ২০১৫ সালে অরেঞ্জ বোল খেতাব (ফ্লোরিডা অনুষ্ঠিত গ্রেড এ প্রতিযোগিতা) জেতার কয়েক মাস পরে আমি সত্যি বিশ্বাস করতে শুরু করি, এক দিন এই মঞ্চে খেলব। তখন থেকে প্রত্যেক দিন স্বপ্নটা দেখে এসেছি। সেই স্বপ্নপূরণ হওয়ায় দুর্দান্ত লাগছে। আমার মনে হয় বারবার একটা দৃশ্য কল্পনা করাটা সত্যি কাজে দেয়।’’

ফাইনালে নামার আগে টানেল দিয়ে যখন বিয়াঙ্কা আসছেন তখন তাঁর কানে হেডফোন, গানের তালে তালে নাচছিলেন। এতটাই ফুরফুরে মেজাজে ছিলেন। যে ভিডিয়ো দেখে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকে বলে দেন এ মেয়ে হারার জন্য আসেনি। ম্যাচের পরে অবশ্য বিয়াঙ্কা বলেছেন, তিনি চাপে ছিলেন। তবে তাঁর টানেল দিয়ে আসার ভিডিয়ো দেখে তা কে বলবে!

Advertisement

যুক্তরাষ্ট্র ওপেনে প্রথম ফাইনালে নেমেই আর্থার অ্যাশ স্টেডিয়ামে ২৩ হাজার দর্শকের সামনে সেরিনাকে হারানোর পরে বিয়াঙ্কা ক্ষমাও চেয়ে নেন। তিনি জানতেন, সেরিনার ঘরের মাঠে দর্শকরা কতটা উদগ্রীব ছিলেন ২৩ গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ীর রেকর্ড দেখার জন্য। তাই সেরিনা যখন চতুর্থ বারও ফাইনালে মার্গারেট কোর্টের ২৪ গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের রেকর্ড স্পর্শ করতে ব্যর্থ হন আন্দ্রেস্কু দর্শকদের বলেন, ‘‘জানি আপনারা চাইছিলেন সেরিনাই জিতুক। তাই আপনাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। অবশ্যই এটা প্রত্যাশিত ছিল যে, সেরিনা পিছিয়ে যাওয়ার পরে ঘুরে দাঁড়াবে। তবে আমি নিজের সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করে গিয়েছে ওকে আটকানোর। যে ভাবে আমি সব সামলেছি তাতে খুব খুশি।’’

বারো মাস আগে এই বিয়াঙ্কাই চোটের ধাক্কায় কাবু ছিলেন। ফ্লাশিং মেডোজে যোগ্যতা অর্জন পর্বের প্রথম রাউন্ডে বিদায়ও নিয়েছিলেন। বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে গিয়েছিলেন দুশোরও বেশি। সেখান থেকে চলতি মরসুমে বিয়াঙ্কার উত্থান এখন সব চেয়ে আলোচিত বিষয়ের মধ্যে একটি। এ মরসুমে বিয়াঙ্কা ইন্ডিয়ান ওয়েলস এবং টরন্টো ডাব্লিউটিএ প্রতিযোগিতা জিতে বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে ১৫ নম্বরে উঠে আসেন। এ বার যুক্তরাষ্ট্র ওপেন চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় পাঁচ নম্বরে উঠে আসা নিশ্চিত কানাডিয়ান তারকার। বিয়াঙ্কা অবশ্য শুধু নিজের সাফল্যই নিয়েই ভাবেন না, তিনি চান উঠতি খেলোয়াড়দেরও প্রেরণা হয়ে উঠতে। ‘‘আগেও বহু বার বলেছি। আবার বলছি। আমার লক্ষ্য বহু মানুষকে প্রেরণা দেওয়া। বিশেষ করে কানাডার অ্যাথলিটদের। আশা করি এই জয় সেই লক্ষ্য পূরণ করবে। শুধু এই জয় নয়, গত এক বছরে আমি যা অর্জন করেছি সেটা। যখন আমি ছোট ছিলাম অনেক কানাডিয়ান অ্যাথলিট প্রেরণা দিয়েছে। এ বার আশা করছি আমি সেই মানুষ হয়ে উঠতে পারব,’’ বলেন বিয়াঙ্কা।

বিয়াঙ্কা তাঁকে প্রেরণা দেওয়ার জন্য কৃতিত্ব দেন কার্লিং বাসেটকে। ১৯৮৪ সালে কানাডার শেষ খেলোয়াড় হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ওপেনের সেমিফাইনালে উঠেছিলেন তিনি। সঙ্গে বাস্কেটবল তারকা স্টিভ ন্যাশকে। এনবিএ-র দু’বারের সব চেয়ে মূল্যবান খেলোয়াড়ের পুরস্কারজয়ী তিনি। বিয়াঙ্কা বলেন, ‘‘বাসেটের কথা অবশ্যই বলব। স্টিভ ন্যাশও। আরও নাম বলতে পারি প্রেরণা হিসেবে। তরুণ বয়েসে এই প্রেরণাটা ভীষণ দরকার। যাতে আমি যখন কোর্টে নামব, আমার সেরাটা প্রতিফলিত হয়। অন্যদের জন্যও আমি এক জন উদাহরণ হয়ে উঠতে পারি। আগেও বলেছি আবার বলছি, আমি যদি পারি, সেরিনা যদি পারে, রজার (ফেডেরার) যদি পারে, স্টিভ ন্যাশ যদি পারে, তা হলে যে কেউ পারবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন