আই লিগের ফিরতি ডার্বির পর এ বার যুবভারতী স্টেডিয়ামে এটিকে-র একটি ম্যাচও বন্ধ করার নির্দেশ দিল বিধাননগর পুলিশ।
গঙ্গাসাগরে বাহিনী পাঠাতে হবে সে জন্য ১৩ জানুয়ারি আই লিগের ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ম্যাচ বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। এ বার ইংরেজি বর্ষশেষের উৎসবের কারণ দেখিয়ে ৩১ ডিসেম্বরের ইন্ডিয়ান সুপার লিগের এটিকে বনাম এফ সি গোয়ার ম্যাচ বন্ধ করে দেওয়া হল। গুরুত্বপূর্ণ ফিরতি ডার্বি কবে হবে কেউ জানে না। আই লিগের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার সুনন্দ ধর দিল্লি থেকে বুধবার বলে দিলেন, ‘‘টিভি স্পনসররা যে দিন সময় দেবে সে দিন ম্যাচ হবে। তাঁরা চাইলে ম্যাচ অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়া হবে। ওদের কাছে চিঠি পাঠিয়ে দিয়েছি।’’ ইস্টবেঙ্গল অবশ্য জানিয়ে দিয়েছে, যুবভারতী ছাড়া অন্য কোথাও তারা ম্যাচ খেলবে না। আর মুম্বইয়ের খবর, টেডি শেরিংহ্যামের টিমের সঙ্গে গোয়ায় ম্যাচ পিছিয়ে হতে পারে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে। ম্যাচ যে দিনই হোক, দুই প্রধান থেকে এটিকে সব পক্ষই পুলিশের খামখেয়ালিপনায় তীব্র সমস্যায়। ক্ষুব্ধ হলেও পরে সমস্যা হবে ভেবে সবারই মুখে কুলুপ। মুখ বুজে সব মেনে নিচ্ছেন।
দুটি লিগের কর্তাদেরই দাবি, সূচি বহু দিন আগে পাঠানো হয়েছিল পুলিশের কাছে। এবং বিধাননগর পুলিশ তাতে সম্মতিও দিয়ে দিয়েছিল। ক্লাবগুলি প্রশ্ন তুলেছে, যদি সমস্যাই থাকে তা হলে সূচি পাওয়ার পর কেন আপত্তি জানায়নি পুলিশ? বিধানগর কমিশনারেটের ডিসি হেড কোয়ার্টার অমিত জাভাল্গি ক্লাবগুলোর দাবি মানতে নারাজ। তিনি বললেন, ‘‘সূচি আমরা হাতে পেলেও যতক্ষণ না স্টেডিয়াম ব্যবহারের অনুমতি ওরা নিয়ে আসছে, ততদিন আমরা অনুমতি দিই না। ওরা সেটা পেয়ে যখনই আমাদের সঙ্গে কথা বলতে এসেছে সমস্যার কথা জানিয়েছি।’’ যা খবর, এটিকে এবং ইস্টবেঙ্গল চিঠি পেয়েছে যথাক্রমে সোম ও মঙ্গলবার।
কিন্তু প্রশ্ন হল, রাজ্য সরকারের উপরতলার নির্দেশে গুয়াহাটি থেকে অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল মাত্র আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে সংগঠন করেছিল যে বিধাননগর পুলিশ, তারা হঠাৎ-ই কেন বন্ধ করে দিল দেশের সেরা দুটো টুনার্মেন্টের দুটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ? এমনিতেই রাজ্য সরকার স্টেডিয়াম না দেওয়ায় ১৮ টি ম্যাচের মধ্যে তিনটি করে ম্যাচ ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানকে খেলতে যেতে হচ্ছে বারাসতে। তা ছাড়া বিশ্বকাপের পর ম্যাচ করতে গিয়ে দুই প্রধানের ল্যাজেগোবরে অবস্থা। ছোট বা বড় সব ম্যাচেই বিশ্বকাপের মতো নিরাপত্তা ব্যবস্থা করছে পুলিশ। তাতে প্রতি ম্যাচে সাত লাখ টাকার মতো বাড়চি খরচ করতে হচ্ছে ক্লাবদের। সঙ্গে পুলিশের খাবার বাবদ দিতে হচ্ছে কয়েক লাখ টাকা। মোহনবাগানের ডার্বি করতে খরচ হয়েছে পঁচিশ লাখ টাকার মতো। আর ইস্টবেঙ্গলের আই লিগের একটি ম্যাচ করতে খরচ হয়েছে প্রায় সাড়ে বারো লাখ। দুই ক্লাবের কর্তাদের দাবি, ‘‘এর আগে খরচ হত অর্ধেকেরও কম। পুলিশ আগে নিত দুশো থেকে পাঁচশো খাবার প্যাকেট। এখন নিচ্ছে দু’হাজার।’’
কালীপুজোর দিন ইডেনে টেস্ট ম্যাচ হয়েছে আগে। যুবভারতীতে হয়েছে আই এফ এ শিল্ডের খেলা। তখন সমস্যা হয়নি। আর এখন এটিকে ম্যাচ নিয়ে পুলিশ আপত্তি তুলছে কেন, সেই প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন শিবিরে। তাঁদের প্রশ্ন, এটিকের ম্যাচ বন্ধ করা হয়েছে নববর্ষ বরণের উৎসবের কারণে। কিন্তু মানুষ তো মাঠে খেলা দেখতে আসে বিনোদনের জন্যই। সেটাও তো উৎসব! তা হলে তা বন্ধ হবে কেন? এই পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগী দুই প্রধান দাবি তুলেছে, বিদেশের মতো শুধু খেলা বা বিনোদন অনুষ্ঠানের জন্য আলাদা পুলিশ বাহিনী তৈরি হোক। যেমন ময়দান সামলাতে আছে মাউন্টেড পুলিশ। সেটা না হলে কিন্তু এভাবেই যখন-তখন কোপ পড়বে খেলায়। ভুগবে ক্লাবেরা।