গোটা ম্যাচেই হাসি মুখ ধরা পড়ছিল তাঁর। এমনকী ম্যারাথন টাইব্রেকারে হেরে ইউরোর শেষ আট থেকে বিদায় নেওয়ার পরে টমাস মুলারদের সঙ্গে হাসিমুখে শুভেচ্ছা বিনিময় করতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। কিন্তু আবেগের বিস্ফোরণটা ঘটল ড্রেসিংরুমে ফেরার সময়।
জিয়ানলুইগি বুফনের দু’গাল দিয়ে চোখের জল গড়িয়ে পড়ছে তখন!
মাথা নিচু করে অতি কষ্টে দু’হাতে চোখ চেপে সেই জল আটকালেন ইতালি অধিনায়ক। তার পর সমর্থকদের দিকে হাত নেড়ে এগিয়ে ঢুকে গেলেন টানেলে। আবেগের বহিঃপ্রকাশ আরও বাড়ল কিছুক্ষণ পরে মিক্সড জোনে দেশোয়ালি সাংবাদিকদের সামনে। বিশ্বের এক সময়ের সবচেয়ে দামী গোলকিপার বলে দিলেন, ‘‘দু’বছর আগে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেওয়ার সময় অনেক ভুলভ্রান্তির জন্য অনুশোচনা ছিল। কিন্তু ইউরোর এই হারের জন্য কোনও অনুশোচনা নেই। উল্টে অবিশ্বাস্য ভাবে আমাদের সামনে জেতার আশা জ্বলেও উঠেও শেষ পর্যন্ত নিভে গেল। নানা কারণেই তো মানুষের চোখে জল আসে। আমার চোখের জল সেই হতাশার।’’
আজুরিদের নীল জার্সি গায়ে টাইব্রেকারে কোনও বড় টুর্নামেন্টে ২০০৮-এর পর এটাই প্রথম হার বুফনের। সে বার স্পেনের কাছে টাইব্রেকারে ২-৪ হারতে হলেও ড্যানিয়েল গুইজার পেনাল্টি আটকেছিলেন। ২০০৬ বিশ্বকাপ ফাইনালে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে এবং ২০১২ ইউরোতে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টাইব্রেকারে ইতালির জয়ের নায়ক ছিলেন বুফন। শনিবার রাতে সাংবাদিকেরা সেই কথা তাঁকে মনে করালে হতাশা গোপন করেননি আটত্রিশের গোলকিপার। বুফনের হতাশা আরও বেশি চার বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা গত ৪৮ বছরে ইউরো ঘরে তুলতে পারেনি।
তবে চোখের জল মুছতে মুছতে হোটেলে ফিরলেও তিনি যে এখনই অবসর নিচ্ছেন না সে কথাও জানিয়ে দিয়েছেন বর্ষীয়ান ইতালি কিপার। ‘‘এখনই অবসর নিচ্ছি না। ২০১৮-য় রাশিয়ায় বিশ্বকাপ খেলব।’’ বোর্দোয় ১৮ পেনাল্টির টাইব্রেকারে পেল্লে গোল করতে পারলেই শেষ চারের টিকিট চলে আসত ইতালিয়ানদের পকেটে। পেল্লে পেনাল্টি নষ্ট করায় ম্যাচ সাডেনডেথে গড়ায়। যেখানে দারমিয়ানের পেনাল্টি সেভ জার্মান গোলকিপার ন্যয়ারের। আর জোনাস হেক্টরের গোলে জোয়াকিম লো-র দলের ইউরো সেমিফাইনালে চলে যাওয়া। যে পরিস্থিতির জন্য কারও নাম না করেও সতীর্থদের হালকা দুষছেন বুফন।
‘‘ম্যাচে আমাদের ছেলেরা নিজেদের উজাড় করে দিয়েছে। বলছি না আমরা খারাপ খেলেছি। তা সত্ত্বেও এই হার একটা লজ্জা। যখন প্রতিপক্ষ টাইব্রেকারে পাঁচটা শটের তিনটেই নষ্ট করেছে, তখন আমাদের ম্যাচ বার না করতে পারলে পরিস্থিতি তো জটিল হয়ে যাবেই। তখন কখনও তুমি জিতবে। কখনও বা তোমার বিপক্ষ। এটাই ফুটবলের মজা। যেটা মেনে নিতে হয়।’’
গত কুড়ি বছর যাবত ইতালি গোলে অতন্দ্র প্রহরী এটাও বলেছেন, ‘‘আমাদের কোনও দুঃখ নেই। কারণ ছেলেরা যে লড়াইটা ১২০ মিনিট করেছে তার জন্য সমর্থকরা গর্বিতই। ইতালি থামতে জানে না। পরের টুর্নামেন্টগুলোতেও এগোবে।’’ শনিবারই জাতীয় দলের হয়ে ইতালি কোচ আন্তোনিও কন্তের শেষ ম্যাচ হয়ে গেল। এর পরে তিনি যোগ দেবেন ক্লাব ফুটবলে চেলসিতে। বুফন সেখানে নিজেকে দেখছেন ইতালির দায়িত্ব নিতে চলা নতুন কোচ জিয়ামপিয়েরো ভেঞ্চুরার দলেও। ‘‘আন্তর্জাতিক ফুটবলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলার জন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে তৈরি। মনে করি ইতালিকে আমার এখনও অনেক কিছু দেওয়ার আছে,’’ বলে দিয়েছেন বুফন।