তেষ্টা মেটাচ্ছেন মাতেরাজ্জি।
চোটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আশি শতাংশ জিতে ফের প্র্যাকটিসে নেমে পড়লেন ফিকরু।
ইলানো অনুশীলনে ফ্রি-কিক মেরেই চলেছেন।
শরীর ঠান্ডা রাখতে ডাবের জল খাচ্ছেন মাতেরাজ্জি।
আইএসএল চ্যাম্পিয়ন আটলেটিকো দে কলকাতার বিরুদ্ধে নামার আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে চেন্নাইয়ান শিবিরের মেজাজ ফুরফুরে।
চেন্নাইয়ে সেই অর্থে ফুটবল সংস্কৃতি বলে তেমন কিছু নেই। তবে আইএসএল আসার পর কিছুটা হলেও শহরে ফুটবল নিয়ে আগ্রহ বেড়েছে। সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ নেহরু পার্ক স্পোর্টস কমপ্লেক্সে ক্লোজড ডোর অনুশীলন করতে এল চেন্নাইয়ান। দেখা গেল, টিমবাস থেকে ইলানো, ফিকরুরা নামতেই উপস্থিত বেশ কিছু সমর্থক চিত্কার শুরু করে দিলেন। যতক্ষণ অনুশীলন চলল হাল্কা বৃষ্টির মধ্যে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকলেন। নায়কদের অনুশীলন দেখার আগ্রহে।
গতকাল চোট পেলেও ফিকরু তেফেরা যদি শনিবার নেমে পড়েন, আশ্চর্যের কিছু হবে না। প্র্যাকটিসের ফিকরুকে অসম্ভব সিরিয়াস দেখাল। প্রথমে ফিজিওর সঙ্গে আলাদা ট্রেনিং, পরে বল নিয়ে আস্তে আস্তে অনুশীলন। বুঝিয়ে দিলেন, যেন তেন প্রকারেণ শনিবার আটলেটিকো ম্যাচে নামতে চান। টিম বাসে ওঠার আগে আনন্দবাজারকে ফিকরু বলে গেলেন, ‘‘সমস্যা একটা হচ্ছিল। তবে এখন ভাল আছি। আমি তৈরি শনিবারের জন্য।’’
থাকবেনই। একে পুরনো টিম। তার উপর আটলেটিকো কোচ হাবাসের সঙ্গে ‘সুমধুর’ একটা ইতিহাসও আছে! পুরনো সংসারের সঙ্গে বর্তমানের ফিকরুর একটাই মিল— উন্মাদনায়। ফুটবল-ভক্তদের যে পাগলামি কলকাতায় দেখে গিয়েছেন ইথিওপিয়ান স্ট্রাইকার, সেটা চেন্নাইয়েও চলছে। নিরাপত্তার কড়াকড়িকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ভক্তদের সেলফি তোলা, অটোগ্রাফের আবদার, কিছু বাদ গেল না। ফিকরুও অটোগ্রাফে অকাতর। পুরোপুরি খোশমেজাজে।
আর ফিকরুকে বাদ রেখে যদি চেন্নাই প্র্যাকটিসে চরিত্র খুঁজতে হয়, একটা নামই পাওয়া যাবে। ইলানো ব্লুমার। চেন্নাই অনুশীলনে এ দিন খুব বেশি দৌড়োদৌড়ি কিছু হল না। মূলত সেট পিসের উপরেই জোর দেওয়া হল। অর্ধেক সময় ধরে ডেড বল সিচুয়েশন প্র্যাকটিস চলল। কর্নার কিকের সময় আক্রমণ কী ভাবে হবে, ফ্রি-কিকে ওয়াল কী রকম দাঁড়াবে— সব বোঝাচ্ছিলেন কোচ মার্কো মাতেরাজ্জি। ছোট গোলপোস্ট রেখে নিজেদের ট্রেনিং ম্যাচও খেললেন খাবরা, অভিষেক দাসরা। কিন্তু সে সব নয়। চেন্নাই প্র্যাকটিসে রঙিন মূহূর্ত তৈরি হল ঠিক যে সময় ইলানো ফ্রি-কিকগুলো ফিকরুর জন্য ভাসিয়ে দিতে শুরু করলেন। অবিশ্বাস্য ফ্রি-কিক মারার ঐশ্বরিক দক্ষতার জন্য ফুটবলবিশ্বে যথেষ্ট জনপ্রিয় বছর চৌত্রিশের ব্রাজিলীয়। ম্যাঞ্চেস্টার সিটিতে থাকাকালীন নিউক্যাসল ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে ইলানোর ফ্রি-কিক গোল আজও ইউটিউবে দেখা যায়। স্টাইল অনেকটা ডেভিড বেকহ্যাম ঘরানার। শর্ট রান আপ নিয়ে ইনস্টেপে মারতে ভালবাসেন। শক্তির থেকেও বেশি জোর দেন প্লেসমেন্টে। অর্ধেক দিনই অনুশীলনে তাঁর আসল কাজ হয় বলটাকে ফ্রি-কিকে গোলে ঢোকানো। চেন্নাইয়ানের ভারতীয় স্ট্রাইকার জেজে মুগ্ধ ইলানোর ফ্রি-কিক নেওয়ার ধরন দেখে। বলছিলেন, ‘‘ইলানোর টেকনিকটা আমার খুব ভাল লাগে। ঠিক জায়গায় বলটা রাখতে জানে।’’ আর সমর্থন? সকাল থেকে তাঁর অপেক্ষায় ছিলেন এক চেন্নাই সমর্থক। মেয়েকে নিয়ে মাঠে এসেছিলেন। এক বছর আগেও মেয়েকে নিয়ে ইলানোর সঙ্গে ছবি তুলেছিলেন। এ বারও সেটা করলেন। ইলানোও খুদে সমর্থককে দেখে খুশি। ভাষা কিছুই বুঝতে না পারলেও ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে বলে গেলেন, ‘‘খুব ভাল লাগছে এখানে এসে। দলকে জেতাতে চাই। আমি তৈরি।’’
অনুশীলন শেষে মাতেরাজ্জিকে দেখা গেল, পছন্দের পানীয় খেতে শুরু করে দিলেন। চেন্নাইয়ের ডাবের প্রেমে পড়েছেন তিনি। টিমবাসে প্লেয়াররা উঠছেন, মাতেরাজ্জি তখনও ডাবের জলে ডুবে। চুমুক চলছে। একটা নয়, তিনটে ডাবে! জিজ্ঞেস করতে বললেন, ‘‘ডাবের জল আমার দারুণ প্রিয়!’’
উদ্বোধনী যুদ্ধের আগে তা হলে টেনশন নয়, ডাবের জল? চলতেই পারে, অসুবিধে কী? ফিকরুর ফিটনেস আর ইলানোর ফ্রি-কিক— দু’টোই তো ঠিকঠাক চলছে।
ছবি: উৎপল সরকার।