কোচ বদলেও বদল নেই কলকাতার

অ্যাশলে ওয়েস্টউডের হাতে পড়েও দু’বারের চ্যাম্পিয়নরা হেরে গেল। বিরতির আগে এগিয়ে গিয়েও পাল্টা দু’গোল দিয়ে অভিষেক বচ্চনের দল বোঝাল তারা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার হাইওয়েতে ওঠার অন্যতম দাবিদার।

Advertisement

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৮ ০৪:৩২
Share:

বিধ্বস্ত: মাঠ ছাড়ছেন হতাশ দেবজিৎ মজুমদার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

টেডি শেরিংহ্যামকে রাতারাতি সরিয়েও বদলাল না এটিকের ফল।

Advertisement

অ্যাশলে ওয়েস্টউডের হাতে পড়েও দু’বারের চ্যাম্পিয়নরা হেরে গেল। বিরতির আগে এগিয়ে গিয়েও পাল্টা দু’গোল দিয়ে অভিষেক বচ্চনের দল বোঝাল তারা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার হাইওয়েতে ওঠার অন্যতম দাবিদার। ম্যাচের শেষে এটিকে-র কোচের গলায় হতাশা। তিনি বলে দিলেন, ‘‘নব্বই মিনিট একই গতিতে যে খেলাটা খেলতে চাইছিলাম, সেটা হল না। আমি হতাশ। জানি না শেষ পর্যন্ত শেষ চারে যেতে পারব কী না?’’ তাঁর হতাশা অবশ্য আরও প্রকট হয়েছে এজন্যই যে, ম্যাচের পর চোটের কারণে কার্যত টুনার্মেন্টের বাইরে চলে গিয়েছেন টিমের অন্যতম সেরা মিডিও জেকিনা স্যান্টোস। আর এক মিডিও রায়ান টেলরকেও ম্যাচের শেষে দেখা গেল খোঁড়াতে খোঁড়াতে বেরিয়ে যেতে। পা ফুলে গিয়েছে। পরিস্থিতি যা তাতে রবিবার মেহতাব হোসেন, শৌভিক চক্রবর্তীদের টিমের বিরুদ্ধে এটিকে কোচের টিম গড়াই মুশকিল।

এমনিতে টেডিকে সরিয়ে ওয়েস্টউডকে কোচ করায় টিমের অন্দরমহলে প্রচন্ড ক্ষোভ। অর্ধেক ফুটবলারই কথা বলছেন না নতুন কোচের সঙ্গে। বিশেষ করে বিদেশিরা। তার প্রভাব পুরোপুরি পড়েছে মাঠে। এগিয়ে গিয়েও তাই সেটা ধরে রাখতে পারলেন না প্রবীর দাশ, মার্টিন প্যাটারসনরা। লিগ টেবলে এটিকের অবস্থানও বদলাল না। আটেই থাকল তাঁরা। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যারে টিম আর উঠতেই পারছে না। অন্য দিকে চেন্নাইয়িন বৃহস্পতিবার ম্যাচ জিতে চলে গেল লিগ শীর্ষে। ১২ ম্যাচে ২৩ পয়েন্ট তাদের। কোচ জন গ্রেগরি বলেও গেলেন, ‘‘আমাদের আরও বেশি গোলে জেতা উচিত ছিল। জেজে হ্যাটট্রিক করতে পারত।’’

Advertisement

কোচ পরিবর্তনের পর এটিকে কেমন খেলে দেখার আগ্রহ ছিল সমর্থকদের। প্রজাতন্ত্র দিবসের আগের রাত। পাড়ায় পাড়ায় নানা অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি। তা সত্ত্বেও হাজার দশেক দর্শক এসেছিলেন মাঠে। নিজেদের টিমের ঘরের খেলা দেখে তাঁদের মন ভরল না। বরং বিরতিতে তিন মেয়ে জাগলারের বল নিয়ে নানা কসরৎ বা চার চিয়ার গার্লের নাচানাচি উপভোগ করলেন দর্শকরা। উচ্ছ্বাসে ফেটেও পড়লেন।

রবি কিন না থাকায় ৪-৫-১ ফর্মেশনে দল নামিয়েছিলেন অস্থায়ী কোচ অ্যাশলে। সামনে নতুন আসা স্ট্রাইকার ব্রিটিশ প্যাটারসন। রক্ষণ সামলে সুযোগ পেলে পাল্টা প্রতি আক্রমণের খেলা। তাতে শুরুতে সফল হলেন প্যাটারসন। এবং এটিকের গোলটা হল বেশ মজার। জয়েশ রানের তোলা বল পেটে-বুকে লাগিয়ে গোল করলেন নতুন আসা এটিকে স্ট্রাইকার। চেন্নাইয়িন কিপার কর্ণজিৎ সিংহ কার্যত বলটা তুলে দিলেন প্যাটারসনকে। প্রথম ম্যাচে গোল করে এটিকে স্ট্রাইকারের উচ্ছ্বাস ছিল দেখার মতো। এমন ভাবে গ্যালারিতে বসে থাকা অভিষেক বচ্চনদের সামনে এসে বুকে চাপড় মারলেন তিনি মনে হল, ম্যাচ জিতেই গিয়েছেন।

বিরতির আগে ওই গোলটা দেখে মনে হচ্ছিল আগের পুনে ম্যাচের কলঙ্ক হয়তো মুছবে। কিন্তু কোথায় কী?

বিরতির পর খেলাটা অবশ্য উল্টোমুখী হল। জেজেদের দাপটে কোণঠাসা হয়ে গেল এটিকে। সেই চাপ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য রবি কিনের মতো এক জন অধিনায়কের দরকার ছিল। কিন্তু সেটাই তো হল না। এটিকের ড্রেসিংরুমের রসায়ন গত দু’বারের চ্যাম্পিয়নদের এত খারাপ যে মাঠে ঐক্যবদ্ধ হয়েও পাল্টা লড়াই দিতে পারল না তারা। বেঙ্গালুরুতে যখন কোচিং করাতেন, তখন অ্যাশলে ম্যাচের দিন সকালে সুনীল ছেত্রী-জন জনসনদের নিয়ে যেতেন মাঠে। এখানেও দায়িত্ব পেয়ে সেই কাজটা করলেন এদিন। খেলা শুরুর দশ ঘণ্টা আগে বিধাননগরের মাঠে পুরো টিম নিয়ে গিয়েছিলেন অ্যাশলে। কিন্তু লাভ হয়নি। টিম সূত্রের খবর, বরখাস্ত কোচ টেডি শেরিংহ্যামের আনা বিদেশিরা কেউ অস্থায়ী কোচকে পাত্তাই দেননি। কথাও বলেননি।

নতুন কোচ বনাম পুরানো কোচের লড়াইয়ের প্রভাব পড়েছে খেলায়। ০-১ পিছিয়ে পড়ার পরও তাই জন গ্রেগরির দল নড়ে যায়নি। একসময় অ্যাস্টন ভিলার কোচ ছিলেন এই ব্রিটিশ। খেলা শুরু হতেই তাই জেজে লালপেখলুয়া, রাফায়েল আগুস্তোরা চেপে ধরলেন জর্ডিদের। এবং তেরো মিনিটের ব্যবধানে দুটো গোল করে ফেলল মহেন্দ্র সিংহ ধোনির টিম। প্রথমটা অনিরুদ্ধ থাপার কর্নার থেকে মেইলসন আলভেজের হেডে করা। পরেরটা জেজের। ইনিগো কেলড্রনের পাস এটিকে কিপার দেবজিৎ মজুমদার তুলে দিলেন জেজের পায়ে। মোহনবাগান ছাড়ার পর জেজের উন্নতি হয়েছে। সাতটা গোল হয়ে গেল তার। বেঙ্গালুরুর সুনীল ছেত্রীর সঙ্গে লড়াইতে রয়েছেন তিনি। সুনীলেরও সাত গোল রয়েছে।

জেজের পারফরম্যান্সের রেখচিত্র যখন ঊর্দ্ধমুখী তখন বাগানে আগুন হয়ে ওঠা আর এক ফুটবলার দেবজিতের হাল সত্যিই খারাপ আইএসএলে এসে। এ দিন দুটো গোল হজমের পিছনেই আংশিক দায়ী উত্তরপাড়ার এই বঙ্গসন্তান।

এটিকের মতো তাঁরও মান ক্রমশ নামছে।

এটিকে: দেবজিৎ মজুমদার, প্রবীর দাশ, জর্ডি মন্টেল, কোনর থমাস, কিগান পেরিরা, রায়ান টেলর (জেকিনা স্যান্টোস) (হিতেশ শর্মা), শঙ্কর সাম্পিনগিরাজ (আশুতোষ মেহতা), ডেভিড জর্জ, রুপট ননগ্রুম, জয়েশ রানে, মার্টিন প্যাটারসন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন