WTC Final 2025

ফাইনালে শতরান মার্করামের, চোট নিয়েও লড়াই বাভুমার, টেস্ট বিশ্বকাপ জয়ের থেকে ৬৯ রান দূরে দক্ষিণ আফ্রিকা

বড় অঘটন না ঘটলে, বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জিততে নতুন এক দেশ। তারা দক্ষিণ আফ্রিকা। তৃতীয় দিন দাপট দেখাল টেম্বা বাভুমার দেশ। সহজ হয়ে যাওয়া লর্ডসের পিচে দাপুটে ইনিংস খেললেন বাভুমা এবং এডেন মার্করাম।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০২৫ ২২:৩৩
Share:

শতরান মার্করামের। পিছনে উল্লাস বাভুমার। ছবি: রয়টার্স।

দরকার আর ৬৯ রান। হাতে আট উইকেট। সময় বাকি দু’দিন। বড় অঘটন না ঘটলে, বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জিততে চলেছে নতুন এক দেশ। তারা দক্ষিণ আফ্রিকা। তৃতীয় দিন দাপট দেখাল টেম্বা বাভুমার দেশ। সহজ হয়ে যাওয়া লর্ডসের পিচে দাপুটে ইনিংস খেললেন বাভুমা এবং এডেন মার্করাম। খেলা শেষ হওয়ার আগের ওভারে শতরান করলেন মার্করাম। অর্ধশতরান করে অপরাজিত বাভুমা। দিনের শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর ২১৩/২। গত বার অস্ট্রেলিয়া এই প্রতিযোগিতায় জিতেছিল। এ বার দক্ষিণ আফ্রিকার ট্রফি পাওয়া প্রায় নিশ্চিতই।

Advertisement

লর্ডসের যে পিচে প্রথম দু’দিনে ২৮টি উইকেট পড়েছিল, সেই পিচেই তৃতীয় দিন পড়ল মাত্র চারটি উইকেট। যে ভাবে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে শেষ দিকে লড়াই করলেন মিচেল স্টার্ক এবং জশ হেজ়লউড, তাতে বোঝাই যাচ্ছিল প্রথম দু’দিনের তুলনায় এই পিচ অনেকটাই আলাদা। এই পিচে বোলারেরা নয়, সাহায্য পাবেন ব্যাটারেরা। দু’টি সেশনে সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখালেন মার্করাম এবং বাভুমা। অস্ট্রেলিয়ার কোনও বোলারই দাঁত ফোটাতে পারেননি। বাধ্য হয়ে ট্রেভিস হেডের মতো আংশিক সময়ের বোলারকে নিয়ে আসে অস্ট্রেলিয়া। তাতেও লাভ হয়নি।

অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে রান করতে ভালবাসেন মার্করাম। অতীতেও বহু রান করেছেন তিনি। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তাঁর ব্যাট থেকে এল শতরান। শেষ দিকে ম্যাচ আধ ঘণ্টা বাড়ানো না হলে হয়তো শতরান করতে পারতেন না। তবু ৯৮ রানে বেশ কিছু আটকে ছিলেন তিনি। ৫৫তম ওভারে হেজ়লউডকে গ্লান্স করে চার মারতেই গোটা স্টেডিয়াম দাঁড়িয়ে পড়ে। এবি ডিভিলিয়ার্সকেও দেখা যায় উঠে দাঁড়িয়ে সেই দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করতে। দর্শকাসনে মার্করামের নামে চিৎকার শুরু হয়ে যায়।

Advertisement

দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক বাভুমারও আলাদা করে প্রশংসা প্রাপ্য। ইনিংস চলার মাঝে রান নিতে গিয়ে চোট পেয়েছিলেন হ্যামস্ট্রিংয়ে। সেই চোট নিয়েই লড়াই করে গেলেন অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের বিরুদ্ধে। মাঠে দীর্ঘ সময় তাঁর চিকিৎসা করা হয়। তার পরেও রান নিতে গিয়ে সমস্যা হচ্ছিল। ভাল মতো খোঁড়াচ্ছিলেন বাভুমা। কিন্তু লড়াইয়ের ময়দান ছেড়ে যাননি। দিনের শেষে তিনি অপরাজিত ৫৩ রানে।

দিনের শুরুটা এত ভালও হয়নি দক্ষিণ আফ্রিকার। ১৪৪/৮ নিয়ে খেলা শুরু করা অস্ট্রেলিয়ার বাকি দু’টি উইকেট ফেলে দিতে খুব বেশি সময় লাগার কথা ছিল না। তৃতীয় দিনের তৃতীয় ওভারে নেথান লায়নকে (২) ফিরিয়ে দেন কাগিসো রাবাডা। তার পরে যে স্টার্ক এবং হেজ়লউড ও ভাবে লড়াই করবেন তা কেউ ভাবতে পারেননি।

একে একে সব বোলারকে নিয়ে এসেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। মার্কো জানসেন, উইয়ান মুল্ডার, লুনগি এনগিডি, কেশব মহারাজ— কেউ টলাতে পারছিলেন না দুই ব্যাটারকে। হেজ়লউড একটা দিক ধরে রাখার দিকে মন দিয়েছিলেন। রান তোলার কাজ করছিলেন স্টার্ক। সেটাও খুব সাবধানে। অহেতুক ঝুঁকি নেওয়ার রাস্তায় হাঁটেননি দুই ব্যাটারের কেউই। শেষ পর্যন্ত জুটি ভাঙেন আংশিক সময়ের বোলার মার্করাম। ৫৯ রানের জুটিতে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখালেন স্টার্ক এবং হেজ়লউড। আইসিসির কোনও প্রতিযোগিতার ফাইনালের দশম উইকেটে এটাই সর্বোচ্চ রানের জুটি। তাঁরা ভাঙলেন ১৯৭৫ বিশ্বকাপ ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ারই ডেনিস লিলি এবং জেফ থমসনের ৪১ রানের জুটি।

প্রথম ইনিংসে যে দল ১৩৮ রানে অলআউট হয়ে গিয়েছিল, তারা ২৮২ রান তাড়া করে জিতবে এমনটা ভাবা যায়নি। শুরুতেই রায়ান রিকেলটনকে (৬) ফিরিয়ে শুরুটা ভাল করেছিলেন মিচেল স্টার্ক। মার্করামের সঙ্গে মুল্ডার জুটি গড়লেও ৬১ রানের বেশি সেই জুটি টেকেনি। তখনও ম্যাচ অস্ট্রেলিয়ার হাতে ছিল। তা আস্তে আস্তে বেরিয়ে গেল মার্করাম এবং বাভুমা জুটি গড়তেই।

পিচ ক্রমশ সহজ হচ্ছিল। তার উপর দ্বিতীয় এবং তৃতীয় সেশনের অনেকটা সময় আকাশে মেঘ ছিল না। খটখটে রোদে পিচ আরও পাটা হয়ে যায়। তাই অস্ট্রেলীয় বোলারদের খেলতে অসুবিধাই হল না মার্করাম এবং বাভুমার। যে স্টার্ক প্রথম ইনিংসে আগুন ঝরিয়েছিলেন, তিনিই প্রতি ওভারে প্রায় ছ’রান করে দিলেন। দু’টি উইকেট নিলেও তাঁকে ন’ওভারের বেশি বল করানো গেল না।

যা পরিস্থিতি, তাতে শনিবার প্রথম সেশনেই বাকি রান তুলে দেওয়ার কথা দক্ষিণ আফ্রিকার। এখনও পর্যন্ত দু’টি এক দিনের চ্যাম্পিয়নশিপ ছাড়া আইসিসি-র বড় মাপের কোনও ট্রফি জেতেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। আসল সময়ে বার বার ব্যর্থ হওয়ার জন্য ‘চোকার্স’ তকমা সেঁটে গিয়েছে তাদের নামের সঙ্গে। শনিবার হয়তো সেই তকমা ঝেড়ে ফেলতে পারবে তারা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement