Ashes 2023

হার মানল ইংল্যান্ডের বাজ়বল তত্ত্ব, অ্যাশেজে প্রথম টেস্টে ২ উইকেটে জয়ী অস্ট্রেলিয়া

অ্যাশেজ সিরিজ়ে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া। হাড্ডাহাড্ডি এজবাস্টন টেস্টে কামিন্সদের জিততে হল যথেষ্ট লড়াই করে। সুবিধাজনক জায়গায় থেকেও কিছুটা ভুল রণনীতির জন্য হারল ইংল্যান্ড।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০২৩ ২৩:৫১
Share:

অস্ট্রেলিয়াকে অ্যাশেজ সিরিজ়ে এগিয়ে দিল ব্যাটার কামিন্সের লড়াই। —ফাইল চিত্র।

অ্যাশেজ সিরিজ়ে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার টান টান ম্যাচে জল ঢেলে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল বৃষ্টি। ইংল্যান্ডের খামখেয়ালি আবহাওয়ার সেই চেষ্টা সফল হয়নি। হাড্ডাহাড্ডি প্রথম টেস্ট ২ উইকেটে জিতে মর্যাদার লড়াইয়ে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া। ইংল্যান্ড জয় হাতছাড়া করল ভুল রণনীতি নিয়ে। যা প্রশ্ন তুলে দিতে পারে তাদের বাজ়বল তত্ত্ব নিয়ে।

Advertisement

বৃষ্টির জন্য বার্মিংহাম টেস্টের পঞ্চম দিনের খেলা শুরু হয় মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পর। সোমবারের খেলা যে অবস্থায় শেষ হয়েছিল, তাতে জয়ের সম্ভাবনা ছিল দু’দলের সামনেই। শেষ দিন প্যাট কামিন্সদের দরকার ছিল ১৭৪ রান। অন্য দিকে, জয় থেকে ৭ উইকেট দূরে ছিলেন বেন স্টোকসরা। সম্ভাবনার দাঁড়িপাল্লায় যুযুধান দু’পক্ষই ছিল প্রায় সমান জায়গায়। কিন্তু মঙ্গলবার সকাল থেকে বার্মিংহামের বৃষ্টি সফরকারীদের রক্ষণাত্মক করে দেয়। তবু শেষ হাসি হাসলেন টেস্ট বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।

টেস্টের পঞ্চম দিন মধ্যাহ্নভোজের পর খেলা শুরু হওয়ার সময়ও আকাশ ছিল মেঘলা। স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া। জোরে বোলারদের পছন্দের মঞ্চ সাজিয়ে দিয়েছিল প্রকৃতি। কামিন্সের দল তাই রক্ষণাত্মক রণনীতি নেয়। শুরুতেই জয়ের জন্য না ঝাঁপিয়ে উইকেট বাঁচিয়ে খেলার দিকে মন দেন উসমান খোয়াজা, স্কট বোল্যান্ডরা। সোমবারের নৈশ প্রহরী বোল্যান্ড ইংল্যান্ডের বোলারদের সামনে বেশি ক্ষণ টিকে থাকতে পারেননি। তিনি ২০ রান করে স্টুয়ার্ট ব্রডের বলে আউট হন। তার পর ধারাবাহিক ভাবে উইকেট হারাতে শুরু করেন সফরকারীরা। ট্র্যাভিস হেড (১৬) ২২ গজে বেশিক্ষণ কাটাতে পারলেন না। ক্যামেরন গ্রিন (২৮) কিছুটা চেষ্টা করলেও দলকে নিশ্চিত করতে পারেননি।

Advertisement

ইংল্যান্ডের বোলাররা অবশ্য প্রথম থেকেই ছিলেন আগ্রাসী মেজাজে। আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং সাজিয়ে ছিলেন স্টোকস। দ্রুত উইকেট তুলতে চাইছিলেন তাঁরা। পূর্বাভাস অনুযায়ী বার্মিংহামের শেষ বিকালেও বৃষ্টির সম্ভাবনা ছিল। তাই স্টোকসরা যত দ্রুত সম্ভব অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংস শেষ করে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন। বোলিংয়ের পাশাপাশি মরিয়া ফিল্ডিংও করলেন তাঁরা। অস্ট্রেলিয়ার লক্ষ্য কম থাকায়, বাড়তি রান না দেওয়ার ব্যাপারে সতর্ক ছিল ইংল্যান্ড। বল কাছে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করেননি ইংল্যান্ডের ক্রিকেটারেরা। তাঁরা চেষ্টা করেছেন দ্রুত বলের কাছে পৌঁছতে। অস্ট্রেলীয়দের সব সময় চাপে রাখার চেষ্টা করেছেন।

ইংরেজদের আগ্রাসনের সামনে আবারও উইকেটের এক প্রান্ত আগলে রাখলেন খোয়াজা। আগে দু’বার ইংল্যান্ডের মাটিতে অ্যাশেজ সিরিজ়ের জন্য অস্ট্রেলিয়া দলে সুযোগ পাননি পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত বাঁহাতি ওপেনিং ব্যাটার। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করতেন তিনি ইংল্যান্ডের মাটিতে সাফল্য পাবেন না। খোয়াজা তাঁদের ভুল প্রমাণ করলেন দ্বিতীয় ইনিংসেও। প্রথম ইনিংসে ১৪১ রানের অনবদ্য ইনিংসের পর মঙ্গলবারও অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসকে ভরসা দিলেন তিনি। এই টেস্টের পাঁচ দিনই ব্যাট করলেন তিনি।

অস্ট্রেলিয়ার ৬ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর জোরে বোলারদের বিশ্রাম দেওয়ার জন্য মইন আলি, জো রুটদের আক্রমণে এনেছিলেন স্টোকস। সেই সুযোগে উইকেট থিতু হয়ে নেন অস্ট্রেলিয়ার শেষ স্বীকৃত ব্যাটার অ্যালেক্স ক্যারি। অস্ট্রেলীয় ব্যাটাররাও রান তোলার গতি কিছুটা বাড়িয়ে নেন। প্রতিপক্ষের রানের গতি থামাতে নিজে বল করতে আসেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক। তিনি আর একটু আগে এলে হয়তো বেশি লাভবান হতে পারত ইংল্যান্ড। স্টোকস-ই আউট করলেন খোয়াজাকে (৬৫)। তিনিই ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া প্রথম টেস্টের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হলেন। ম্যাচ জেতার জন্য এই একটি উইকেট অত্যন্ত জরুরি ছিল ইংল্যান্ডের।

খোয়াজা-ক্যারি জুটি ভাঙার পর অস্ট্রেলিয়ার আর কোনও স্বীকৃত ব্যাটার জুটি ছিল না। কিন্তু জয়ের জন্য তখনও দরকার ছিল ৭২ রান। আর ইংল্যান্ডের দরকার ছিল ৩ উইকেট। স্বভাবতই ম্যাচের রাশ ক্রমশ নিজেদের হাতে নিয়ে নেন স্টোকরা। কিন্তু ব্রডের বলে নাথান লায়নের দেওয়া সহজ ক্যাচ ফেলে অস্ট্রেলিয়াকে লড়াইয়ে ফেরার সুযোগ করে দিলেন ইংল্যান্ডের অধিনায়ক। আর ভুল করেননি অসিরা। কামিন্স ব্যাট হাতে পাল্টা আক্রমণের রাস্তায় হেঁটে দলকে চাপ মুক্ত করার চেষ্টা করেন। একই সঙ্গে শেষ পর্যন্ত উইকেটে থেকে লায়নকে নিয়ে নিশ্চিত করলেন দলের জয়। চাপের মুখে শেষ বেলায় কামিন্সের লড়াইয়ের কাছে হারতে হল ইংল্যান্ডকে। কামিন্স অপরাজিত থাকলেন ৪৪ রানের লড়াকু ইনিংস খেলে। লায়নের ব্যাট থেকে এল অপরাজিত ১৬ রানের ইনিংস। নবম উইকেটে তাঁদের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে উঠল ৫৫ রান। ৮ উইকেটে ২৮২ রান তুলে ম্যাচ জিতে নিল অস্ট্রেলিয়া।

ইংল্যান্ডের বোলারদের মধ্যে সফলতম ব্রড ৬৪ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিলেন। ৪৩ রানে ২ উইকেট অলি রবিনসনের। ১টি করে উইকেট নিয়েছেন রুট, স্টোকস, মইনরা। অ্যাশেজ সিরিজ়ের দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হবে ২৮ জুন। লর্ডসের ২২ গজে নিশ্চিত ভাবেই সমতা ফেরানোর চেষ্টা করবেন স্টোকসরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন