Ashes 2023

অ্যাশেজ জিততে ২২ গজে মহিলারাও, ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া আরও এক লড়াই শুরু বৃহস্পতিবার

অ্যাশেজ শুধু ২২ গজের লড়াই নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ইতিহাস, আবেগ, সম্মান, জাত্যাভিমান। স্টোকস, কামিন্সদের পাশাপাশি অ্যাশেজের লড়াইয়ে নামছেন দু’দেশের মহিলা ক্রিকেটারেরাও।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০২৩ ২১:৩২
Share:

মহিলাদের অ্যাশেজ ট্রফি। ছবি: টুইটার।

প্রথম টেস্ট থেকেই জমজমাট ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার অ্যাশেজ সিরিজ়। বেন স্টোকসদের বাজ়বল ক্রিকেটকে হারিয়ে বার্মিংহামে রুদ্ধশ্বাস জয় ছিনিয়ে নিয়েছেন প্যাট কামিন্সেরা। ক্রিকেটপ্রেমীরা যখন এই সিরিজ় নিয়ে মেতে রয়েছেন, তখন শুরু হচ্ছে আরও একটি অ্যাশেজ সিরিজ়। এক টেস্টের এই সিরিজ়ে খেলবেন দু’দেশের মহিলা ক্রিকেটারেরা।

Advertisement

২২ জুন থেকে নটিংহ্যামের ২২ গজে মুখোমুখি হবে ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার মহিলা জাতীয় দল। পুরুষদের সিরিজ়ে পাঁচটি টেস্ট হলেও মহিলারা খেলবেন একটি ম্যাচ। ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া প্রথম বার অ্যাশেজ সিরিজ়ে মুখোমুখি হয়েছিল ১৮৮২-৮৩ মরসুমে। মহিলাদের অ্যাশেজও নতুন নয়। ১৯৩৪-৩৫ মরসুমে শুরু হয় মহিলাদের অ্যাশেজ সিরিজ়। এখনও পর্যন্ত মোট ২৩টি টেস্ট সিরিজ় খেলা হয়েছে মহিলাদের অ্যাশেজে। ১১টি সিরিজ় হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে। ১২টি সিরিজ় ইংল্যান্ডের মাটিতে। দেশের মাটিতে পাঁচ বার-সহ মোট ন’বার সিরিজ় জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। অন্য দিকে, উভয় দেশের তিন বার করে মোট ছ’টি সিরিজ় জিতেছে ইংল্যান্ড। মহিলাদের অ্যাশেজে এখনও পর্যন্ত মোট ৪৫টি টেস্ট হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া জিতেছে ১১টি ম্যাচ। ইংল্যান্ড জিতেছে আটটি টেস্ট। অমীমাংসিত ভাবে শেষ হয়েছে ২৬টি ম্যাচ। মহিলাদের অ্যাশেজে ২০১৩ থেকে সব ধরনের ক্রিকেট হচ্ছে। তার আগে পর্যন্ত শুধু টেস্ট হত। ২০১৩ সাল থেকে মহিলাদের অ্যাশেজে যুক্ত করা হয়েছে সাদা বলের ক্রিকেটও। সব ম্যাচ মিলিয়ে যে দলের পয়েন্ট (জিতলে দু’পয়েন্ট, অমীমাংসিত থাকলে ১ পয়েন্ট) বেশি হয়, তারা জেতে।

অ্যাশেজ শুধু দু’দেশের ২২ গজের লড়াই নয়। অ্যাশেজের সঙ্গে জড়িত দু’দেশের সম্মান। জাত্যাভিমান। দু’বছর অন্তর ক্রিকেট মাঠে মুখোমুখি হয় দু’দেশ। এই সিরিজ়ের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এক ইতিহাস। যা কিছুটা ব্যাঙ্গাত্মক। খানিকটা শোকেরও। ১৮৮২ সালে ওভালে আয়োজিত টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার কাছে প্রথম হেরেছিল ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার ফ্রেড স্পফোর্থের অনবদ্য বোলিংয়ের কাছে হারতে হয়েছিল ইংরেজদের। চতুর্থ ইনিংসে ৮৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিততে পারেনি তারা। স্পফোর্থ ৪৪ রানে ৭ উইকেট নিয়েছিলেন। ০-১ ব্যবধানে সিরিজ় হেরে গিয়েছিল। পরের দিন ইংল্যান্ডের সংবাদ পত্র ‘দ্য স্পোর্টিং টাইমস’ তাদের প্রতিবেদনে ক্রিকেট দলের তীব্র সমালোচনা করেছিল। লেখা হয়েছিল, ইংরেজ ক্রিকেটকে চিরস্মরণীয় করে রাখল ওভালের ২৯ আগস্ট, ১৮৮২ তারিখটি। গভীর দুঃখের সাথে বন্ধুরা তা মেনে নিয়েছে। ইংরেজ ক্রিকেটকে ভস্মীভূত করা হয়েছে এবং ছাইগুলো অস্ট্রেলিয়াকে দেওয়া হয়েছে। এর পরের বছর সিরিজ় পুনরুদ্ধার করতে অস্ট্রেলিয়ায় যায় ইংল্যান্ড। সংবাদমাধ্যমের ব্যঙ্গ মনে রেখে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক আইভো ব্লাই বলেছিলেন, তাঁরা অ্যাশেজ পুণরুদ্ধার করতে অস্ট্রেলিয়ায় এসেছেন।

Advertisement

সে সময় কয়েকজন অস্ট্রেলীয় মহিলা ব্লাইকে আগের সিরিজ়ে পরাজয় নিয়ে পাল্টা ব্যঙ্গ করে ছাই ভর্তি একটি পাত্র দিয়েছিলেন। যাতে ছিল উইকেটের উপরে থাকা বেলের ছাই। তার পর থেকে দু’দেশের টেস্ট সিরিজ় ‘অ্যাশেজ’ বলে পরিচিত হয়। ব্লাই অবশ্য ছাইয়ের সেই আধারটি ব্যক্তিগত উপহার হিসাবে নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন। বিজয়ী দলকে ট্রফি হিসাবে তা দেওয়া হত না তখন। ব্লাইয়ের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী লর্ডসে এমসিসি জাদুঘরে সেই পাত্রটি দান করে দিয়েছিলেন। নিয়ম অনুযায়ী অ্যাশেজ পেতে হলে সিরিজ় জিততে হয়। সিরিজ় অমীমাংসিত থাকলে শেষ বারের জয়ী দলের কাছেই থাকে আধারটি। তাই অ্যাশেজ দু’দেশের কাছে সম্মানের লড়াই। যে লড়াই কখনও হারতে চান না ক্রিকেটারেরা। পুরুষদের হোক বা মহিলাদের, প্রতিপক্ষকে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়েন না তাঁরা।

অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক অ্যালিসা হিলি। ছবি: টুইটার।

এ বার পুরুষের এবং মহিলাদের অ্যাশেজ হচ্ছে একই সময়। কামিন্সেরা ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গিয়েছেন মঙ্গলবার। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে মহিলাদের লড়াই। অস্ট্রেলিয়ার নেতৃত্বে উইকেটরক্ষক-ব্যাটার অ্যালিসা হিলি। দলে রয়েছেন বিশেষজ্ঞ ব্যাটার মেগ ল্যানিং, ব্যাটার ফোবি লিচফিল্ড, উইকেটরক্ষক-ব্যাটার বেথ মুনি, অলরাউন্ডার অ্যাশলে গার্ডনার, অলরাউন্ডার গ্রেস হ্যারিস, অলরাউন্ডার আলানা কিং, অলরাউন্ডার তাহিলা ম্যাকগ্রা, অলরাউন্ডার এলিস পেরি, অলরাউন্ডার অ্যানাবেল সাদারল্যান্ড, অলরাউন্ডার কিম গ্রাথ, বাঁহাতি স্পিনার জেস জোনাসেন, জোরে বোলার মেগান শাট এবং লেগ স্পিনার জর্জিয়া ওয়্যারহাম। মহিলাদের ক্রিকেটে বিশ্বের অন্যতম সেরা দল অস্ট্রেলিয়া।

ইংল্যান্ডের অধিনায়ক হেথার নাইট। ছবি: টুইটার।

ধারে ভারে খুব পিছিয়ে নেই ইংল্যান্ডও। ইংরেজদের নেতৃত্বে ব্যাটার হেথার নাইট। রয়েছেন ওপেনিং ব্যাটার ট্যামি বিউমন্ট, ব্যাটার ড্যানি ওয়াট, ব্যাটিং অলরাউন্ডার এলিস ক্যাপসি, ব্যাটিং অলরাউন্ডার সোফিয়া ডাঙ্কলে, বোলিং অলরাউন্ডার অ্যালিস ডেভিডসন-রিচার্ডস, অলরাউন্ডার ন্যাট শিভার-ব্রান্ট, ব্যাটিং অলরাউন্ডার এমা ল্যাম্ব, উইকেটরক্ষক-ব্যাটার এমি জোন্স, বোলিং অলরাউন্ডার ড্যানিয়েলা গিবসন, বাঁহাতি স্পিনার সোফি এলকেস্টোন, জোরে বোলার কেট ক্রস, জোরে বোলার লরেন ফিলার, জোরে বোলার লরেন বেল, জোরে বোলার ইসি অং।

ভারতেও সরাসরি সম্প্রচার হবে মহিলাদের অ্যাশেজ সিরিজ়। আগ্রহী ক্রিকেটপ্রেমীদের টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রাখতে হবে সোনি স্পোর্টস নেটওয়ার্কে। খেলা দেখা যাবে সোনি লিভ মোবাইল অ্যাপেও। একটি টেস্ট ছাড়াও তিনটি করে এক দিনের এবং টি-টোয়েন্টি ম্যাচে মুখোমুখি হবে দু’দল। ২০ ওভারের ম্যাচগুলি হবে ১, ৫ এবং ৮ জুলাই। এক দিনের ম্যাচগুলি হবে ১২, ১৬ এবং ১৮ জুলাই। বৃহস্পতিবার টেস্ট ম্যাচ শুরু হবে ভারতীয় সময় দুপুর সাড়ে ৩টেয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন