Ashes 2023

রুদ্ধশ্বাস অ্যাশেজ় ২-২, শেষ টেস্ট জিতে সমতা ফেরাল ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার স্বপ্ন অধরা

পঞ্চম দিনের খেলার একটি সেশন ভেস্তেই গেল বৃষ্টিতে। প্রথম সেশনে অস্ট্রেলিয়াকে জোর ধাক্কা দিয়েছিল ইংল্যান্ড। শেষ সেশনে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস মুড়িয়ে সিরিজ়‌ে সমতা ফেরাল তারা।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২৩ ২২:৫৬
Share:

স্মিথকে আউট করার পর ওকস। ছবি: রয়টার্স।

শেষ দিনে পঞ্চম টেস্ট জিততে গেলে অস্ট্রেলিয়ার দরকার ছিল ২৪৯ রান। ইংল্যান্ডের ১০ উইকেট। দিনের একটা গোটা সেশন বৃষ্টিতে ভেস্তে গেল। তাতেও হার বাঁচাতে পারল না অস্ট্রেলিয়া। চতুর্থ দিনের শেষে যে দলকে অনেকেই জয়ের ব্যাপারে এগিয়ে রেখেছিলেন, সেই অস্ট্রেলিয়াই হেরে গেল ওভাল টেস্টের পঞ্চম দিনে এসে। ৩৮৪ রান তাড়া করতে নেমে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস শেষ ৩৩৪ রানে। হার ৪৯ রানে। সিরিজ় শেষ হল ২-২ ব্যবধানে। অ্যাশেজ় ধরে রাখাই বড় প্রাপ্তি অস্ট্রেলিয়ার কাছে। বৃষ্টি এসে বাগড়া না দিলে চতুর্থ টেস্টেও হার কার্যত নিশ্চিত ছিল অস্ট্রেলিয়ার। বরং এই সিরিজ়ে ইংল্যান্ডই বঞ্চিত হল ৩-২ জয় থেকে।

Advertisement

পঞ্চম দিনে ইংল্যান্ডের নায়ক হয়ে উঠলেন ক্রিস ওকস। চারটি উইকেট নিলেন তিনি। শুরুতে দুই ওপেনারকে ফেরানো এবং মাঝের সারির ব্যাটারদের ধাক্কা দেওয়ার কাজটা করলেন তিনিই। স্টুয়ার্ট ব্রড এবং জেমস অ্যান্ডারসন যেখানে শুরুর দিকে নিষ্প্রভ ছিলেন, সেখানে দলকে জেতানোর ভার নিজের কাঁধে তুলে নিলেন এই ইংরেজ বোলার। যোগ্য সঙ্গত দিলেন মইন আলি। কিন্তু পরের দিকে এসে মঞ্চ কেড়ে নিলেন ব্রড। এটাই ছিল তাঁর শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। অস্ট্রেলিয়ার শেষ দুটি উইকেট তুললেন তিনিই। তা-ও এমন একটা সময়ে, যখন অ্যালেক্স ক্যারে এবং টড মার্ফি মরিয়া হয়ে ক্রিজ কামড়ে পড়েছিলেন। দুই ব্যাটারকেই অফ স্টাম্পের বাইরে ক্রমাগত বল করে লোভ দেখিয়ে আউট করলেন তিনি। তার মধ্যেও পঞ্চম দিনে চোয়ালচাপা লড়াই দেখা গিয়েছিল স্টিভ স্মিথ এবং ট্রেভিস হেডের মধ্যে। কিন্তু মুহূর্তের অসতর্কতায় দু’জনেই উইকেট হারালেন।

চতুর্থ দিন বৃষ্টির কারণে প্রায় দু’টি সেশন ভেস্তে গিয়েছিল বৃষ্টিতে। পঞ্চম দিনও খেলা দেরিতে শুরু হওয়ার ইঙ্গিত ছিল। খুব বেশি দেরি হয়নি। ম্যাচ শুরুর আগে সামান্য বৃষ্টির কারণে ১০ মিনিট দেরিতে খেলা শুরু হয়। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটারদের কাছে কোনও ভাবেই কাজটা সহজ ছিল না। একে তো আকাশে মেঘ। তার উপর হাওয়ায় বল সুইংও করছিল। সেই সুইংয়ের সামনে ধরা পড়লেন দুই ওপেনার। আগের দিন ক্রিজে জমে গিয়েছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার এবং উসমান খোয়াজা। এ দিন কয়েক বলের ব্যবধানে ফিরে যান দু’জনেই।

Advertisement

ব্রড বা জেমস অ্যান্ডারসন নয়, অস্ট্রেলিয়াকে শুরুতেই জোড়া ধাক্কা দেন ক্রিস ওকস। গুড লেংথে তাঁর বলে খোঁচা মেরে উইকেটকিপার জনি বেয়ারস্টোর হাতে ক্যাচ দেন ওয়ার্নার। প্রিয় শিকার ওয়ার্নারকে জীবনের শেষ টেস্টে আউট করা অধরাই থাকল ব্রডের কাছে। নিজের দ্বিতীয় ওভারেই খোয়াজাকে তুলে নেন ওকস। ফুল লেংথে বল ফ্লিক করতে গিয়েছিলেন। বল প্যাডে লাগে। রিভিউ নিয়েও লাভ হয়নি।

দ্বিতীয় ইনিংসেও খোঁচা দিয়ে আউট হলেন মার্নাস লাবুশেন। ক্রিজে মোটামুটি জমে গিয়েছিলেন স্মিথের সঙ্গে। রানও খারাপ উঠছিল না। মুহূর্তের ভুলে আউট। মার্ক উডের বলে তাঁর ক্যাচ নেন জাক ক্রলি। তিনটি উইকেট হারিয়ে তখন অস্ট্রেলিয়া বেশ কেঁপে গিয়েছে। কিন্তু ভয় কাটালেন স্মিথ এবং ট্রেভিস হেড। মধ্যাহ্নভোজ পর্যন্ত ইংরেজ বোলারদের অনায়াসে সামলে দিলেন তাঁরা। দেখে মনে হচ্ছিল, এই জুটিই টেস্ট জেতাতে পারে অস্ট্রেলিয়াকে।

মধ্যাহ্নভোজের বিরতি শেষ হওয়ার ঠিক পরেই বৃষ্টি নামে লন্ডনে। স্মিথরা ক্রিজ পর্যন্ত পৌঁছেও গিয়েছিলেন। কিন্তু একটিও বল হয়নি। সাজঘরে ফেরেন। সেই সেশনটি বৃষ্টিতে ভেস্তেই যায়। একটু আগে চা-বিরতি নেওয়া হয়।

চা-বিরতির পরে খেলা শুরু হলে দেখা যায় রোদ। ইংল্যান্ডে রোদ উঠলে সাধারণত ব্যাট করা সহজ হয়ে যায়। কিন্তু ইংরেজ বোলারদের সামনে আচমকাই অস্ট্রেলিয়ার অসহায় অবস্থাটা প্রকট হয়ে দেখা দিল। হেডকে দিয়ে পতনের শুরু। বেশ খেলছিলেন। আচমকাই মইন আলির একটি বলে সামনে এগিয়ে খেলতে গেলেন। ব্যাটের কানায় লেগে প্রথম স্লিপে ক্যাচ জো রুটের হাতে।

৩৯ রানের মাথায় স্টোকস ক্যাচ ধরলেও সে বার প্রাণ ফিরে পেয়েছিলেন স্মিথ। কিন্তু দ্বিতীয় বার আর সুযোগ পেলেন না। ক্রিজে জমে গিয়েও উইকেট খোয়ালেন। চতুর্থ স্টাম্পে বল করেছিলেন ওকস। এত ক্ষণ পর্যন্ত সেই ধরনের বল ছেড়ে দিচ্ছিলেন স্মিথ। এই বলে খোঁচা দিয়েই। স্লিপে ক্রলির হাতে ক্যাচ জমা পড়ার আগেই হতাশ হয়ে পড়লেন অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন অধিনায়ক।

অস্ট্রেলিয়ার শেষ আশা বেঁচে ছিল মার্শের ব্যাটে। কিন্তু স্মিথ ফিরতেই তাঁরও ধৈর্যচ্যুতি হল। মইন আলির যে বলে আউট হলেন, সেটি সামনে এগিয়ে এসে রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে আটকে দেওয়া যেত। কিন্তু মার্শ কাট করতে গেলেন। তাঁর ব্যাটে লাগার পর প্যাড এবং বুকে লেগে তা জমা পড়ল উইকেটকিপার বেয়ারস্টোর হাতে।

শেষের দিকের ব্যাটারদের পক্ষে সম্ভব ছিল না একশোর বেশি রান সেই অবস্থাতেও তাড়া করে জেতা। স্বাভাবিক ভাবেই তা হয়নি। তবু একটা লড়াই দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন টড মার্ফি। কিন্তু তাঁকে ক্রমাগত অফ স্টাম্পের বাইরে বল করে লোভ দেখিয়ে খোঁচা দেওয়ালেন ব্রড। একই কায়দায় আউট ক্যারেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন