(বাঁ দিকে) আকাশদীপ ও অরুণ লাল (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
২০২৪ সালের মার্চে ভারতীয় ক্রিকেটে প্রবেশ আকাশদীপের। টেস্ট অভিষেকের পরেই তিনি ফোন করেছিলেন তাঁর ‘গুরু’ অরুণ লালকে। নিয়েছিলেন তাঁর আশীর্বাদ। সেই আকাশদীপ এজবাস্টনে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১০ উইকেট নিয়ে নজর কেড়েছেন। তিনি এখন তারকা। কিন্তু তাঁর এই সাফল্য আরও পাঁচ বছর আগে আসতে পারত বলে মনে করেন অরুণ। ছাত্রের কৃতিত্ব নিয়ে কথা বললেন আনন্দবাজার ডট কম-এর কাছে।
২০১৯-২০ মরসুমে বাংলার রঞ্জি দলে সুযোগ পান আকাশ। অভিজ্ঞ অশোক ডিন্ডার জায়গায় নেওয়া হয়েছিল তাঁকে। আকাশের পাশে তখন মুকেশ কুমার ও ঈশান পোড়েল। অনভিজ্ঞ এই পেস আক্রমণ বাংলাকে তুলেছিল রঞ্জির ফাইনালে। প্রথম বার দেখেই অরুণ বুঝে গিয়েছিলেন, আকাশ লম্বা রেসের ঘোড়া। তিনি বললেন, “আকাশ খুব প্রতিভাবান। প্রচণ্ড পরিশ্রম করতে পারে। ওকে যখন আমি প্রথম দেখি, তখনই বুঝেছিলাম, এ ভারতের হয়ে খেলবে। কিন্তু আমার খুব দুঃখ হচ্ছে যে এই দিনটা আসতে ওর পাঁচ বছর লেগে গেল। সেই সময়ই ও ভারতীয় দলে খেলার জন্য তৈরি ছিল।”
প্রত্যেক পেসারের আলাদা শক্তি থাকে। কেউ বাউন্স বেশি করাতে পারেন। আবার কারও বলে সুইং বেশি। কেউ আবার গতির সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ রেখে সফল হন। আকাশের শক্তিটা ঠিক কী? অরুণের কথায়, “ওর সিম পজিশন। যে ভাবে সিমে ফেলে ও বল ভিতরের দিকে ঢোকাতে পারে, তা এক কথায় অসাধারণ। ওর বলের গতি আছে। টানা এক গতিতে বল করতে পারে। লম্বা স্পেল করতে পারে। লাল বলের ক্রিকেটে ও আদর্শ বোলার।”
পাশাপাশি আকাশদীপের আরও এক গুণের কথা জানিয়েছেন অরুণ। কোনও দিন অভিযোগ করেন না তিনি। পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেন। সব সময় মুখে হাসি লেগে থাকে। অরুণ বললেন, “ওকে দল থেকে বাদ দিয়ে দাও। কোনও অভিযোগ করবে না। ওকে যেখানে ইচ্ছা থাকতে দাও। কিছু বলবে না। প্রথম বছর ও ইডেনের ডর্মিটরিতে থাকত। আমি পরে গিয়ে দেখেছি ওখানকার কী খারাপ অবস্থা। ওখানে থাকা অসম্ভব। কিন্তু কোনও দিন আমাকে এসে আকাশ অভিযোগ করেনি। ও শুধু মন দিয়ে খেলেছে।”
শুরুতে অবশ্য আকাশের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখতে পেয়েছিলেন অরুণ। তিনি চেষ্টা করেছেন, সেই সমস্যা মেটাতে। তাতে অনেকটা সফলও হয়েছেন। অরুণ বললেন, “ওর সমস্যাটা ছিল, ও কত প্রতিভাবান তা নিজেই জানত না। আত্মবিশ্বাস ছিল না। খালি ভাবত, ও পারবে না। ওকে আমি সেই আত্মবিশ্বাস দেওয়ার চেষ্টা করেছি। ধীরে ধীরে ও আরও পরিণত হয়েছে।” তাঁর জীবনে অরুণের কী ভূমিকা তা জানিয়েছেন আকাশও। একটা সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “অরুণ স্যর আমার জন্য অনেক কিছু করেছেন। একটা সময় ছিল যখন আমার নিজের উপরই বিশ্বাস ছিল না। উনি আমার থেকে বেশি আমার উপর ভরসা করেছেন। আমাকে মনোবল জুগিয়েছেন। টেস্ট অভিষেকের পর যখন ওঁকে ফোন করেছিলাম, উনি বলেছিলেন, ‘আমি জানতাম তুমি ভারতের হয়ে খেলবে। পাঁচ বছর আগেই বলেছিলাম।’ এই রকম ভাবে কে পাশে দাঁড়ায়।” সেই ভরসার দাম দিচ্ছেন আকাশ।
বিহারের সাসারাম থেকে এসে বাংলার ক্রিকেটে নিজের জায়গা তৈরি করেছেন আকাশদীপ। অরুণ জানিয়েছেন, নিজেকে নিজেই তৈরি করেছেন আকাশ। তিনি বললেন, “ওর গ্রামের পাশে পাহাড় আছে। সেখানে ও দৌড়ে উঠত। আবার দৌড়ে নামত। সেই সব ভিডিয়ো আমাকে পাঠাত। এ ভাবেই ও নিজেকে তৈরি করেছে। সেই জন্য বাকিদের থেকে ওর ফিটনেস এতটা ভাল।”
এজবাস্টনের সাফল্যের পর আকাশের মুখে উঠে এসেছে তাঁর পরিবারের কথা। কী ভাবে বাড়িতে কাউকে না বলে প্রথম ক্রিকেট খেলতে গিয়েছিলেন। ক্যানসার আক্রান্ত দিদির কথাও জানিয়েছেন তিনি। উৎসর্গ করেছেন নিজের জয়। অরুণ জানেন আকাশের লড়াইয়ের কথা। তিনি বললেন, “ও পরিশ্রম করে নিজের জায়গা তৈরি করেছে। খেলার পাশাপাশি পরিবারের কথা সবসময় ভাবে। আসলে ছেলেটা বড্ড ভাল।”
দেশের হয়ে ৮টা টেস্টে ২৫ উইকেট নিয়েছেন আকাশদীপ। তার মধ্যে এজবাস্টনেই এসেছে ১০ উইকেট। তবে এখনও আকাশ নিজের সেরা ছন্দে নেই বলেই মনে করেন অরুণ। তিনি বললেন, “ওর কেরিয়ার তো সবে শুরু হয়েছে। এখনও অনেক পথ বাকি। ও ভারতের হয়ে অনেক দিন খেলবে। ওর সেরাটা আসা এখনও বেশি।” ছাত্রকে নিয়ে এখনও স্বপ্ন দেখছেন অরুণ। যাঁকে নিজের হাতে ধরে বাংলার ক্রিকেটে এনেছিলেন, তাঁর সাফল্য উপভোগ করছেন তিনি।