(বাঁ দিকে) হরমনপ্রীত কৌর এবং স্মৃতি মন্ধানা (ডান দিকে)। ছবি : এক্স।
দু’বার এক দিনের বিশ্বকাপ ফাইনালে উঠেও ট্রফি জেতা হয়নি ভারতীয় মহিলা দলের। এ বার ঘরের মাঠে সেই বাধা অতিক্রম করতে চান হরমনপ্রীত কৌর, স্মৃতি মন্ধানারা। সোমবার মুম্বইয়ে বিশ্বকাপ ট্রফি উন্মোচন অনুষ্ঠানে এসে দেশের জন্য নিজেদের উজাড় করে দেওয়ার বার্তা দিলেন মহিলা দলের অধিনায়ক এবং সহ-অধিনায়ক।
হরমনপ্রীত বলেন, ‘‘দেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা এত দিন অপেক্ষা করে রয়েছেন। আমরা এবার সব বাধা অতিক্রম করতে চাই। বিশ্বকাপ সব সময়ই আলাদা। সেটা ঘরের মাঠে, নিজেদের সমর্থকদের সামনে হলে তো কথাই নেই। দেশের জন্য সব সময় সেরাটা দেওয়াই লক্ষ্য থাকে আমাদের।’’ বিশ্বকাপের আগে ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ভারতের সিরিজ় রয়েছে। এ নিয়ে হরমনপ্রীত বলেছেন, ‘‘অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে খেলা সব সময় কঠিন। ওই সিরিজ়েই বুঝতে পারব, আমরা ঠিক কোথায় আছি। শক্তি-দুর্বলতা সম্পর্কে ধারণা তৈরি হয়ে যাবে। তা ছাড়া এই ধরনের সিরিজ় আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে। আমরা এখন থেকেই প্রচুর পরিশ্রম করছি।’’ ২০০৫ এবং ২০১৭ সালে দু’বার ভারতের মহিলা ক্রিকেট দল এক দিনের বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছিল। দু’বারই রানার্স হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। তাই এ বার আর সমর্থকদের নিরাশ করতে চান না মহিলা দলের অধিনায়ক।
ভারতীয় দলের পারফরম্যান্স আশাবাদী করতে পারে সমর্থকদের। ২০২৫ সালে ১১টা এক দিনের ম্যাচ খেলে ৯টাই জিতেছেন হরমনপ্রীতেরা। আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৩-০ ব্যবধানে জয়, শ্রীলঙ্কা-দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ত্রিদেশীয় সিরিজ় জয় এবং ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ় জয়। হরমনপ্রীত বলেছেন, ‘‘আমরা আত্মবিশ্বাসের অভাব নেই। গত দু’বছর প্রচুর ক্রিকেট আমরা খেলেছি। সেটাই আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে। যে রকম সাহসী ক্রিকেট খেলছি, সে ভাবেই খেলে যেতে চাই। আশা করব আমরা সেটা পারব। সাহসী ক্রিকেট খেলার মানসিকতা নিয়েই বিশ্বকাপ খেলব।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজ় জয় আমাদের অবাক করেনি। কারণ নিজেদের প্রস্তুতি সম্পর্কে ধারণা ছিল। যে কোনও সিরিজ় বা প্রতিযোগিতা জেতার আত্মবিশ্বাস আমাদের ছিল। কিন্তু সেই জয়টা কী ভাবে আসতে পারে, তা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছিলাম। নিজেদের ক্রিকেটে কী করে আরও উন্নত করতে পারি, তা নিয়ে কথা বলেছিলাম আমরা। ইংল্যান্ডকে হারানোর পরও আমাদের মনে হয়নি, আমরা দারুণ কিছু করে ফেলেছি। কারণ আমরা বার বার এ ভাবে জিততে চাই।’’
প্রায় একই কথা শোনা গিয়েছে মন্ধানার মুখেও। ভারতীয় দলের সহ-অধিনায়ক বলেছেন, ‘‘আমরা যে ভাবে অনুশীলন এবং পরিশ্রম করছি তার ফলাফল পেয়েছি। আশা করি, বিশ্বকাপেও আমরা সুফল পাব। ইংল্যান্ড সফরে গিয়ে গত দেড় মাসে অনেক কিছু নতুন ভাবে উপলব্ধি করেছি। মাঠের বাইরেও আমরা এখন দুর্দান্ত একটা দল হয়ে উঠেছি। সবাই নির্দিষ্ট লক্ষ্যে দিনরাত পরিশ্রম করে চলেছি।’’ নিজেকে নিয়েও আত্মবিশ্বাসী মন্ধানা। তিনি বলেছেন, ‘‘গত দু’তিন বছরে মানসিকতার হয়তো খুব পরিবর্তন হয়নি। তবে পরিশ্রমের পদ্ধতিতে কিছু পরিবর্তন হয়েছে। নিজের খেলা নিয়ে আমার মধ্যে কোনও দ্বিধা নেই। এটার একটা ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে। আমার প্রথম কাজ যতটা সম্ভব ভাল খেলা। দলের সকলেই সেটা মনে করে। আমাদের কাছে অনেক ধারণা এখন পরিষ্কার হয়েছে। ফলে মাথা ঠান্ডা রেখে সকলে প্রস্তুতি নিতে পারছি। পরিশ্রম করছি।’’
সোমবার মুম্বইয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় দলের আর এক সদস্য জেমাইমা রদ্রিগেজও। তিনিও আগামী বিশ্বকাপে ভাল ফল নিয়ে আত্মবিশ্বাসী। উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থার (আইসিসি) চেয়ারম্যান জয় শাহ, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) সচিব দেবজিৎ শইকিয়া, ভারতীয় মহিলা দলের প্রাক্তন অধিনায়ক মিতালি রাজ। মহিলা দলকে উৎসাহ দিতে উপস্থিত ছিলেন ২০০৭ এবং ২০১১ বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম নায়ক যুবরাজ সিংহ। উল্লেখ্য, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে মহিলাদের এক দিনের বিশ্বকাপ।