Women's ODI World Cup 2025

অসাধ্যসাধন! জেমাইমা-হরমনের ব্যাটে বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারত, সেমিতে অসিদের ৫ উইকেটে হারিয়ে রবিতে বিশ্বজয়ের অপেক্ষা

ভারতের সামনে কঠিন লক্ষ্য দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ৩৩৯ রান করা সহজ ছিল না। সেটাই করে দেখালেন জেমাইমা রদ্রিগেজ় ও অধিনায়ক হরমনপ্রীত কৌর।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২৫ ২২:৪২
Share:

জয়ের হাসি হরমনপ্রীত কৌর (বাঁ দিকে) ও জেমাইমা রদ্রিগেজ়ের। ছবি: পিটিআই।

অসাধ্যসাধন করল ভারত। সাত বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে ৫ উইকেটে হারিয়ে মহিলাদের বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠলেন হরমনপ্রীত কৌরেরা। নবি মুম্বইয়ের মাঠে প্রথমে ব্যাট করে ৩৩৮ রান করেছিল অস্ট্রেলিয়া। জেমাইমা রদ্রিগেজ়ের ১২৭ ও অধিনায়ক হরমনপ্রীত কৌরের ৮৯ রানে ভর করে সেই রান তাড়া করে জিতল ভারত। এক দিনের ক্রিকেটে এটি ভারতের সর্বাধিক রান তাড়া করে জয়। রবিবার ফাইনালে ভারতের সামনে দক্ষিণ আফ্রিকা। অর্থাৎ, এক দিনের বিশ্বকাপে এ বার পাওয়া যাবে এক নতুন চ্যাম্পিয়ন।

Advertisement

২০১৭ সালের বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে শেষ বার হেরেছিল অস্ট্রেলিয়া। এই ভারতের কাছেই। তার পর থেকে আর এক দিনের বিশ্বকাপে হারেনি তারা। আট বছর পর সেই ভারতের কাছেই হারল অস্ট্রেলিয়া। হিলিদের জয়রথ থামালেন হরমনপ্রীতেরা।

নবি মুম্বইয়ে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন অ্যালিসা হিলি। অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক চেয়েছিলেন, বড় রান বোর্ডে তুলতে। কিন্তু তিনি বেশি ক্ষণ টিকতে পারেননি। এক বার তাঁর সহজ ক্যাচ ছাড়েন হরমনপ্রীত। তার পরেও মাত্র ৫ রানে ক্রান্তি গৌড়ের বলে আউট হন হিলি। অপর ওপেনার ফিবি লিচফিল্ড প্রথম বল থেকেই আক্রমণাত্মক খেলছিলেন। পাওয়ার প্লে কাজে লাগান তিনি। লিচফিল্ডকে সঙ্গ দেন এলিস পেরি। দু’জনে মিলে দ্রুত রান করছিলেন। দুই ব্যাটারের মধ্যে ১৫৫ রানের জুটি হয়।

Advertisement

শতরান করেন লিচফিল্ড। বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে তাঁর ঝোড়ো ইনিংস চাপ বাড়াচ্ছিল ভারতের উপর। সেই জুটি ভাঙেন আমনজ্যোৎ কৌর। ১১৯ রানের মাথায় লিচফিল্ডকে আউট করেন তিনি। সেই জুটি ভাঙার পর কিছুটা চাপে পড়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। ভারতের স্পিনারেরা নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেন। অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটারেরা হাত খুলতে না পারায় পর পর উইকেট পড়তে থাকে। পেরি করেন ৭৭ রান। বেথ মুনি ২৪ রানে আউট হন। অ্যানাবেল সাদারল্যান্ড (৩) ও তাহিলা ম্যাকগ্রা (১২) রান পাননি।

একটা সময় দেখে মনে হচ্ছিল, ৩০০ রান করতে সমস্যা হবে অস্ট্রেলিয়ার। কিন্তু অভিজ্ঞ অ্যাশলি গার্ডনার তখনও ক্রিজ়ে ছিলেন। চলতি বিশ্বকাপে জোড়া শতরান করেছেন তিনি। সেই ছন্দ দেখা গেল এই ম্যাচেও। ৪৫ বলে ৬৩ রানের ইনিংস খেললেন গার্ডনার। তবে তাঁকে বাকিরা সঙ্গ দিতে পারেননি। ফলে পুরো ৫০ ওভার খেলতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। ৪৯.৫ ওভারে ৩৩৮ রানে অল আউট হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। ভারতের বোলারদের মধ্যে শ্রী চরণী ও দীপ্তি শর্মা ২ করে উইকেট নেন। ১ করে উইকেট নেন ক্রান্তি, আমনজ্যোৎ ও রাধা যাদব।

৩৩৯ রান তাড়া করা সহজ ছিল না। বিশেষ করে যেখানে ফর্মে থাকা প্রতিকা রাওয়ালকে এই ম্যাচে পায়নি ভারত। হঠাৎ করে বিশ্বকাপের দলে ঢুকে ওপেন করতে নামতে হয় শেফালি বর্মাকে। ফলে দায়িত্ব বেশি ছিল স্মৃতি মন্ধানার। শেফালি দুটো চার মারলেও বেশি ক্ষণ টিকে থাকেননি। ১০ রান কিম গার্থের বলে আউট হন তিনি। মন্ধানা ভাল খেলছিলেন। কিন্তু ২৪ রানের মাথায় লেগ সাইডের বল মারতে গিয়ে আউট হন তিনি। আম্পায়ার প্রথমে আউট দেননি। রিভিউ নেয় অস্ট্রেলিয়া। সিদ্ধান্ত বদলাতে হয়।

মন্ধানা আউট হওয়ার পর মনে হচ্ছিল, আরও এক বার বিশ্বকাপ থেকে ব্যর্থ হয়েই ফিরতে হবে ভারতকে। কিন্তু অন্য পরিকল্পনা ছিল জেমাইমা ও হরমনপ্রীতের। শুরুতে কয়েকটি ওভার ধরে খেলেন তাঁরা। ধীরে ধীরে হাত খোলা শুরু করেন। বেশি আক্রমণাত্মক দেখাচ্ছিল জেমাইমাকে। পাওয়ার প্লে কাজে লাগিয়ে প্রতি ওভারে চার মারছিলেন তিনি। ফলে ২ উইকেট পড়লেও ভারতের রান তোলার গতি কমেনি।

জেমাইমা ও হরমনপ্রীত জানতেন, শিশির পড়ছে। ফলে বোলারদের বল গ্রিপ করতে সমস্যা হচ্ছিল। বিশেষ করে আলানা কিং নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়লেন। তার ফয়দা তুলল ভারত। অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের রান তোলার গতি প্রায় সমান ছিল। দুই ব্যাটারই শতরানের দিকে এগোচ্ছিলেন। কিন্তু ৮৯ রানের মাথায় সাদারল্যান্ডের বলে বড় শট মারতে গিয়ে আউট হন হরমন। অধিনায়ক আউট হওয়ায় জেমাইমা ঠিক করে নেন, শেষ পর্যন্ত তিনি টিকে থাকবেন। সেটাই করলেন এই মিডল অর্ডার ব্যাটার। চলতি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে শূন্য রানে আউট হয়েছিল জেমাইমা। রান পেয়ে বাদও পড়েছিলেন এক ম্যাচে। সেই জেমাইমা শতরান করে ভারতকে ফাইনালে তুললেন।

হরমনপ্রীত আউট হওয়ার পর জেমাইমার সঙ্গে জুটি বাঁধেন দীপ্তি। ভাল খেলছিলেন তিনি। মাঝে একটা সময় জেমাইমা বড় শট খেলতে পারছিলেন না। সেই সময় দীপ্তি দায়িত্ব দেন। কিন্তু ২৪ রানের মাথায় রান আউট হন তিনি। ছ’নম্বরে নেমে বাংলার রিচা ঘোষও প্রথম বল থেকে বড় শট মারতে শুরু করেন। দু’টি চার ও দু’টি ছক্কা মারেন তিনি। দেখে মনে হচ্ছিল, দ্রুত খেলা শেষ করার চেষ্টা করছেন তিনি। সেটা করতে গিয়ে ১৬ বলে ২৬ রান করে আউট হন রিচা। তত ক্ষণে অবশ্য ভারত জয়ের কাছে পৌঁছে গিয়েছে।

এই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া ফিল্ডিং ভাল করলেও তিনটি ক্যাচ পড়ল। তার মধ্যে জেমাইমার দু’টি সহজ ক্যাচ ফেললেন হিলি ও ম্যাকগ্রা। সেই ছবি বুঝিয়ে দিচ্ছিল, দিনটা অস্ট্রেলিয়ার নয়। নইলে এই ভুল হলুদ জার্সিধারিদের কাছ থেকে দেখা যায় না। তার খেসারত দিতে হল হিলিদের। ১.৩ ওভারে ব্যাট করতে নেমেছিলেন জেমাইমা। প্রায় ৫০ ওভার খেললেন তিনি। দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়লেন। বুঝিয়ে দিলেন, এ বারের বিশ্বকাপ ‘আন্ডারডগ’ হয়ে খেলতে নামেনি ভারত। আর বাকি মাত্র এক ম্যাচ। এখন থেকেই বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখা শুরু করে দিয়েছেন ভারতীয় সমর্থকেরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement