মাঠ ছাড়ছেন শুভমন গিল। ছবি: সমাজমাধ্যম।
ঘাড় এবং মেরুদণ্ডের সমস্যায় হাসপাতালে ভর্তি করানো হল ভারতের অধিনায়ক শুভমন গিলকে। শনিবার দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে অ্যাম্বুল্যান্সে করে মাঠ থেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ দক্ষিণ কলকাতার উডল্যান্ডস হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। অবস্থা যা তাতে প্রথম টেস্টে শুভমনের আর খেলার সম্ভাবনা কার্যত নেই।
বোর্ড সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার ঘুম থেকে ওঠার পরেই শুভমন ঘাড়ে ব্যথা অনুভব করেন। তার জন্য তিনি ব্যথা কমানোর ওষুধ খান। তাতেও লাভ হয়নি। ব্যাট করতে নামার আগেও তিনি ব্যথা কমানোর ওষুধ খেয়েছিলেন। নিজের তৃতীয় বলে সাইমন হারমারকে স্লগ সুইপ মারতে গিয়ে ঘাড়ে আবার ব্যথা শুরু হয় শুভমনের। সঙ্গে সঙ্গে মাঠে চলে আসেন ফিজিয়ো। পরীক্ষা করার পর শুভমনকে মাঠের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। মাত্র তিন বল ক্রিজ়ে ছিলেন শুভমন। সমস্যা এতটাই যে ঘাড় ঘোরাতেই পারছেন না শুভমন। মেরুদণ্ডেও সমস্যা রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর এমআরআই হয় শুভমনের। সেখানেও ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়ার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। এক বছর আগে এমনই একটি চোট পেয়েছিলেন শুভমন। তখনও এমআরআই করানো হয়েছিল। তখনকার এবং এখনকার এমআরআই-এর ফলাফলের মধ্যে মিল রয়েছে।
চিকিৎসকদের দাবি, শুভমনের বয়স যেহেতু ২৬ বছর, তাই তাঁর মধ্যে সহ্যশক্তি বেশি। চিকিৎসার পরিভাষায় একে ‘পেন থ্রেসহোল্ড’ বলে। কিন্তু এ বারের ব্যথা এতটাই যে শুভমন তা সহ্য করতে পারছেন না। ফলে চিকিৎসকেরা তাঁকে হোটেলে দলের সঙ্গে রাখতে চাননি। শনিবার রাতটা হাসপাতালেই থাকতে হবে শুভমনকে। ভারতীয় দল পরিচালন সমিতি তা মেনে নিয়েছে। এর পর তাঁর কী চিকিৎসা হবে সেটা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এ রকম গুজব রটেছে যে, সিএবি-তে শুরুতে চিকিৎসক পাওয়া যায়নি। শুভমন নাকি শনিবার খেলা শুরুর বেশ কিছুক্ষণ আগে ইডেনে চলে আসেন। তিনি এবং ভারতীয় দল চেয়েছিল, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে। ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট ঠিক করেছিল, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অনুমতি দিলে তবেই শুভমনকে নামানো হবে। কিন্তু সেই সময় ইডেনে কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছিলেন না বলে জানা গিয়েছে। সূত্রের খবর, এতে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট ক্ষুব্ধ ও অসন্তুষ্ট।
সিএবি-র বক্তব্য, শুভমন অনেক আগেই চলে আসায় চিকিৎসককে পাননি। চিকিৎসকের যে সময়ে ইডেনে আসার কথা ছিল, তিনি সেই সময়ই এসেছিলেন। তারপর আর সেই চিকিৎসকের সঙ্গে ভারতীয় দল কোনও যোগাযোগ করেনি।
চা বিরতির আগে নাকি শুভমনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু বোর্ডের চিকিৎসক চার্লস মিনজ় বিষয়টি হালকা ভাবে নিয়েছিলেন। পরে দেখা যায় বিষয়টি গুরুতর।
যা অবস্থা, তাতে ইডেন টেস্টে শুভমনের খেলার সম্ভাবনা কার্যত নেই। বোর্ড সূত্রে খবর, তাঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হলে গুয়াহাটি টেস্টেও হয়তো খেলতে পারবেন না।
শুভমন মাঠ ছাড়ার পর দুপুর ১২.৪১ মিনিটে বিসিসিআই বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, ‘‘শুভমন গিলের ঘাড় শক্ত হয়ে গিয়েছে। দলের মেডিক্যাল টিম ওর পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে। আবার মাঠে নামতে পারবে কি না, তা নির্ভর করবে ওর পরিস্থিতির উন্নতির উপর।’’
ভারতের ইনিংসের ৩৫তম ওভারে ওয়াশিংটন সুন্দর আউট হওয়ার পর চার নম্বরে ব্যাট করতে নেমেছিলেন শুভমন। সেই ওভারেই ঘাড়ে টান লাগায় মাঠ ছাড়েন তিনি। দলের সব উইকেট পড়ার পরও ব্যাট করতে নামতে পারেননি। সাজঘরে ফেরার পর ‘নেক কলার’ পরানো হয়েছিল শুভমনকে। ‘আইস প্যাক’ও দেওয়া হচ্ছিল।
ম্যাচের পর বোলিং কোচ মর্নি মর্কেল জানিয়েছিলেন, শোয়ার দোষের কারণে ঘাড় শক্ত হয়ে গিয়ে থাকতে পারে শুভমনের। মর্কেলের কথায়, “কী করে ওর ঘাড় শক্ত হয়ে গেল সেটা আগে আমাদের বুঝতে হবে। হয়তো শোয়ার দোষে হয়েছে। শারীরিক ধকলের মতো ব্যাপার নেই। শুভমন ফিট। নিজের খেয়াল ভালই রাখে। আজ সকালে দুর্ভাগ্যবশত ঘাড় শক্ত অবস্থাতেই ঘুম থেকে উঠেছে। সারা দিন ধরেই সেটা ছিল।”