India VS England Test Series

দেড়খানা বোলার, জঘন্য ফিল্ডিংয়ে সাত ক্যাচ হাতছাড়া, ৩৭১ রানও বাঁচাতে পারল না ভারত! ইংল্যান্ডের কাছে হেরে শুরু অধিনায়ক শুভমনের

হেডিংলেতে হতাশ করল ভারতের বোলিং। পাল্লা দিয়ে খারাপ হল ফিল্ডিং। গোটা ম্যাচে পড়ল সাতটা ক্যাচ। তার খেসারত দিতে হল ভারতকে। হেরে সিরিজ় শুরু হল অধিনায়ক শুভমন গিলের।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২৫ ২২:৫৮
Share:

হতাশ শুভমন গিল। মঙ্গলবার হেডিংলেতে। ছবি: রয়টার্স।

মঙ্গলবার রাতে কি ঘুম আসবে শুভমন গিলের? পঞ্চম দিনের খেলা শুরুর আগে আশা ছিল, ভারত হয়তো এই ম্যাচ জিতবে। কারণ, টেস্টের পঞ্চম দিন যে কোনও দলের পক্ষেই ৩৫০ রান তাড়া করা কঠিন। পাশাপাশি সকাল থেকেই আকাশ ছিল মেঘলা। এই পরিবেশে বোলারদের দাপট দেখানোর কথা। কিন্তু কোথায় কী? বদলে ইংল্যান্ড শেখাল, কী ভাবে ঝুঁকি না নিয়েও ৩৭১ রান তাড়া করা যায়। কী ভাবে প্রতিপক্ষের সেরা অস্ত্রকে ভোঁতা করে দেওয়া যায়। ইংরেজ ব্যাটারদের দাপটে মুখের হাসি মিলিয়ে গেল শুভমনের। হার দিয়ে অধিনায়কের ইনিংস শুরু করলেন তিনি। হেডিংলেতে ভারতকে ৫ উইকেটে হারিয়ে সিরিজ়ে ১-০ এগিয়ে গেলেন বেন স্টোকসেরা। কথায় বলে, সকাল বুঝিয়ে দেয় সারা দিনটা কেমন যাবে। ভারতের শুরুটা ভয় ধরাচ্ছে সমর্থকদের মনে। এখনও চারটে টেস্ট বাকি। প্রথম টেস্টে হারের ধাক্কা কাটিয়ে ফেরা কঠিন শুভমনদের।

Advertisement

ইংল্যান্ডে রওনা হওয়ার আগে কোচ গৌতম গম্ভীর বলেছিলেন, সেরা দল নিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। এই যদি সেরা দলের নমুনা হয়, তা হলে খারাপ দল কোনটা? চারটে ব্যাটার (যশস্বী, শুভমন, রাহুল ও পন্থ) আর দেড়খানা বোলার (বুমরাহ ও জাডেজা) নিয়ে আর যা-ই হোক, টেস্ট ম্যাচ জেতা যায় না। সিরিজ় তো অনেক দূরের কথা।

ক্রিকেট বিশেষজ্ঞেরা বলছিলেন, হেডিংলেতে ইংল্যান্ডকে হারানোর সবচেয়ে ভাল সুযোগ ভারতের কাছে। তার প্রধান কারণ ইংল্যান্ডের বোলিং আক্রমণ। মার্ক উড, জফ্রা আর্চার, ওলি স্টোন, গাস অ্যাটকিনসন— অর্থাৎ, প্রথম দলের চার পেসার ছাড়া নেমেছিল ইংল্যান্ড। ক্রিস ওকসকে তিন বছর পর ফিরিয়ে আনতে হয়েছিল। সঙ্গে অনভিজ্ঞ ব্রাইডন কার্স ও জশ টং। তাঁদের বিরুদ্ধে ভারতের চার ব্যাটার ছাড়া বাকিরা হিমশিম খেলেন। দুই ইনিংসে শতরান করে শুরুটা ভাল করেছেন ঋষভ পন্থ। লোকেশ রাহুল, শুভমন গিল ও যশস্বী জয়সওয়ালও একটা করে শতরান করেছেন। কিন্তু বাকিরা? বেন স্টোকসের বল খেলতে গিয়ে যে ভাবে তাঁরা লেজেগোবরে হলেন, তাতে আর্চারেরা ফিরে এলে কী হবে?

Advertisement

সাই সুদর্শন এখনও টেস্টের জন্য তৈরি নন। শট খেলার লোভ সামলাতে পারেন না। লোভ দেখিয়েই দুই ইনিংসে তাঁকে আউট করলেন স্টোকস। করুণ নায়ার আট বছর পর ফিরেছেন। তাঁকে আর একটু সময় দিতে হবে। আর ভারতের অলরাউন্ডারদের কথা যত কম বলা যায় তত ভাল। রবীন্দ্র জাডেজা, শার্দূল ঠাকুরদের দেখে মনে হচ্ছে, ব্যাটে ধরতেই ভুলে গিয়েছেন। দুই ইনিংসেই ভারতের লোয়ার অর্ডার হতাশ করেছে। প্রথম ইনিংসে ৪১ রানে পড়েছে শেষ ৭ উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে শেষ ৬ উইকেট পড়েছে ৩১ রানে। সেই কারণেই দুই ইনিংস মিলিয়ে পাঁচটা শতরানের পরেও হারতে হয়েছে ভারতকে। ব্যাটিংয়ের এই রোগ সারাতে না পারলে পরের টেস্টেও ফেরা মুশকিল।

তবু চার জন ব্যাটার তো ভাল খেলেছেন, বোলারদের হাল আরও খারাপ। চোট সারিয়ে ফেরা জসপ্রীত বুমরাহ বাদে বাকি পেসারদের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। একা বুমরাহ কী করবেন? প্রতি ইনিংসে তাঁর উপরেই শুধু ভরসা করলে তো হবে না। মহম্মদ সিরাজ মাঝেমাঝে দুর্দান্ত কয়েকটা বল করলেও বেশির ভাগ সময়ে লেংথ খুঁজে পাচ্ছেন না। প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ দুই ইনিংস মিলিয়ে ৫টা উইকেট নিলেও ওভার প্রতি সাড়ে ৬ রান দিয়েছেন। এক দিনের ক্রিকেটেও যে ইকোনমি রেট অপরাধ। বুমরাহ এক দিকে চাপ রাখলেও প্রসিদ্ধ-সিরাজ জুটি ইংল্যান্ডকে দেদার রান দিয়েছে। আর শার্দূলের কথা যত কম বলা যায় তত ভাল। প্রথম ইনিংসে মাত্র ৬ ওভার বল করেছেন। দ্বিতীয় ইনিংসে জোড়া উইকেট তুলে ভারতকে খেলায় ফেরালেও তাতে তাঁর কোনও কৃতিত্ব নেই। দুটো উইকেটই তিনি পেয়েছেন ভাগ্যের জোরে। ইংল্যান্ডের পিচে স্পিনারদের বিশেষ কিছু করার থাকে না। জাডেজা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন বটে। কিন্তু একটা বুমরাহ ও অর্ধেক জাডেজায় তো আর ম্যাচ জেতা যায় না।

ভারতের হারের সবচেয়ে বড় দায় ফিল্ডারদের। এত খারাপ ফিল্ডিং শেষ বার তাদের কবে করতে দেখা গিয়েছিল মনে পড়ছে না। গোটা ম্যাচে সাতটা ক্যাচ পড়েছে। তার মধ্যে একাই যশস্বী চারটে ছেড়েছেন। দুটো ক্যাচ ছেড়েছেন পন্থ। একটা জাডেজা। যশস্বীর চারটে ক্যাচের জন্য ১৬৬ রান খেসারত দিতে হয়েছে ভারতকে। পাল্লা দিয়ে খারাপ হয়েছে ভারতের ফিল্ডিং। সহজ চার গলেছে। এক রানের জায়গায় দু’রান হয়েছে। তার ফলে ইংরেজ ব্যাটারদের উপর চাপ কমে গিয়েছে। শেষ পাঁচ ওভারে একটা টেস্টে ভারত এত ক্যাচ ছাড়েনি। ভারতের ফিল্ডিং কোচ টি দিলীপকে নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। প্রতিটা ম্যাচের পরে সেরা ফিল্ডারকে পদক দেন তিনি। এ বার হয়তো খারাপ ফিল্ডিংয়ের জন্য তাঁকে ফিল্ডারদের জরিমানা করতে হবে। তবে যদি এই রোগ সারে।

হেডিংলের এই উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য খুব একটা কঠিন নয়। উইকেটে পড়ে থাকলে রান আসবে। চারটে ইনিংসেই সেটা দেখা গিয়েছে। এর আগে দেশের মাটিতে চতুর্থ ইনিংসে ইংল্যান্ড সর্বাধিক ৩৭৮ রান তাড়া করে জিতেছিল। ২০২২ সালে ভারতের বিরুদ্ধে বার্মিংহ্যামে। সেই ভারতের বিরুদ্ধেই তারা ৩৭১ রান তাড়া করল। এই মাঠে এটা ইংল্যান্ডের সর্বাধিক রান তাড়া করে জয়। আর সেই জয়ের নায়ক বেন ডাকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে ১৭০ বলে ১৪৯ রানের যে ইনিংস তিনি খেললেন তা শিক্ষনীয়। তাড়াহুড়ো করেননি। ঝুঁকি নেননি। আবার মারার বল ছাড়েননি। ইংল্যান্ডের দুই ওপেনার ডাকেট ও জ্যাক ক্রলির ১৮৮ রানের জুটি ইংল্যান্ডের জয়ের ভিত গড়ে দিল। বুমরাহকে সামলে দিলেন তাঁরা। দুই ব্যাটার জানতেন, বাকিদের বলে হাত খুলে খেলতে পারবেন। তাই বুমরাহের বলে ঝুঁকি নেননি। একটা সময়ের পর বুমরাহও রান দিলেন। তার মধ্যেই ৯৭ রানের মাথায় ডাকেটের ক্যাচ ছাড়লেন যশস্বী। নইলে ছবিটা হয়তো আলাদা হত।

প্রশ্ন উঠতে বাধ্য অধিনায়ক শুভমনের নেতৃত্ব নিয়েও। দেখে মনে হল না, প্ল্যান বি, সি রয়েছে তাঁর কাছে। একই গতে বল করিয়ে গেলেন। প্রসিদ্ধ রান দিচ্ছেন দেখেও তাঁকে সরালেন না। রানের গতি কম থাকলে হয়তো এই ম্যাচ ড্র হতে পারত। শার্দূল নতুন বলে উইকেট নিতে পারেন। তাঁকে প্রথম ইনিংসে নতুন বল দিলেনই না শুভমন। প্রশ্ন উঠল তাঁর ফিল্ডিং সাজানো নিয়েও। রান বাঁচাবেন, না উইকেট তুলবেন, সেই ধন্দ কাটিয়ে উঠতে পারলেন না। টেস্ট ক্রিকেটে অধিনায়কত্ব যে কতটা কঠিন তা হয়তো বুঝতে পারলেন শুভমন। পরের টেস্ট শুরু হতে এখনও আট দিন বাকি। তার মধ্যেই সব প্রশ্নের জবাব খুঁজতে হবে তাঁকে। নইলে আরও খারাপ দিন অপেক্ষা করে রয়েছে তাঁর সামনে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement