শুভমনের (বাঁ দিকে) সঙ্গে উচ্ছ্বাস কুলদীপের। ছবি: পিটিআই।
প্রথম টেস্টের ফয়সালা হয়েছিল আড়াই দিনে। দ্বিতীয় টেস্টে তা হল না। বরং পঞ্চম দিনে গড়াতে চলেছে দিল্লি টেস্ট। চতুর্থ দিনের মধ্যে খেলা শেষ করে দেওয়ার সুযোগ ছিল ভারতের কাছে। তবে যশস্বী জয়সওয়াল শুরুতেই আউট হয়ে যাওয়ায় ঝুঁকি নিল না ভারতীয় দল। ধীরেসুস্থে রান তুলল। চতুর্থ দিনের শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের স্কোর ৬৩/১। পঞ্চম দিনে ৫৮ রান তুললেই জিতে যাবে ভারত।
এ দিন ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের দ্বিতীয় ইনিংস শেষ হয় ৩৯০ রানে। শতরান করেন জন ক্যাম্পবেল। শেষ বার ২০০২ সালে ভারতের মাটিতে শতরান করেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের কোনও ওপেনার। কলকাতার মাঠে ওয়েভেল হাইন্ডসের শতরানের ২৩ বছর পর দিল্লির মাঠে সেই কীর্তি করে দেখান ক্যাম্পবেল। তাঁকে সঙ্গ দেন শাই হোপ। তিনিও শতরান করেন। এই দুই ব্যাটারের ইনিংসে লড়াই করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়। ইনিংসে হার বাঁচিয়েছে তারা। যদিও টেস্টে হার এড়ানো কঠিন তাদের পক্ষে।
প্রথম ইনিংসে বড় রান করলেও দ্বিতীয় ইনিংসে তা করে দেখাতে পারলেন না যশস্বী। জিততে গেলে ভারতের সামনে লক্ষ্য ছিল ১২১ রানের। যশস্বী শুরু থেকেই আগ্রাসী খেলে ম্যাচ দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করছিলেন। তাঁর সেই উদ্দেশ্য সফল হয়নি। দ্বিতীয় ওভারেই ফিরে যান তিনি। জোমেল ওয়ারিকানের বলে লং অনের উপর দিয়ে ছয় মারার চেষ্টা করেছিলেন। ক্যাচ ধরেন অ্যান্ডারসন ফিলিপ। দিনের বাকি সময়ে তাড়াহুড়ো করার কোনও চেষ্টা করেননি কেএল রাহুল (অপরাজিত ২৫) এবং সাই সুদর্শন (অপরাজিত ৩০)।
২ উইকেটে ১৭২ রান থেকে চতুর্থ দিনের খেলা শুরু করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়। তৃতীয় দিনের শেষ সেশনেই দেখা যাচ্ছিল, দিল্লির পিচ থেকে কোনও সুবিধা পাচ্ছেন না বোলারেরা। সেই ছবি চতুর্থ দিনও দেখা গেল। জসপ্রীত বুমরাহ, মহম্মদ সিরাজেরা সবরকম চেষ্টা করলেন। কিন্তু উইকেট তুলতে পারছিলেন না। দুই ক্যারিবীয় ব্যাটার ক্যাম্পবেল ও হোপ ধীরেসুস্থে দলের রান এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন।
দলের তিন স্পিনারকেও আক্রমণে আনেন ভারত অধিনায়ক শুভমন গিল। তাতেও কিছু হচ্ছিল না। মাঝে মাঝে রবীন্দ্র জাডেজার বল দুই ব্যাটারকে কিছুটা সমস্যায় ফেলছিল। ছক্কা মেরে শতরান করেন ক্যাম্পবেল। টেস্টে এটি তাঁর প্রথম শতরান। ভাল দেখাচ্ছিল এই বাঁহাতি ব্যাটারকে। জাডেজার বলে তাঁর ক্যাচ ফেলেন ধ্রুব জুরেল। যদিও পরের বলেই রিভার্স সুইপ মারতে গিয়ে ১১৫ রানের মাথায় আউট হন ক্যাম্পবেল। তৃতীয় উইকেটে ১৭৭ রানের জুটি বাঁধেন তাঁরা।
ক্যাম্পবেল ফিরলেও খেলার ধরন বদলায়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজ়। এ বার হোপের সঙ্গে জুটি বাঁধেন অধিনায়ক রস্টন চেজ়। কুলদীপ প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট নিলেও দ্বিতীয় ইনিংসে ১৫ ওভার বল করেও উইকেট পাননি। শেষ ১৮ টেস্ট ইনিংসে প্রথম বার ১৩ ওভারের বেশি বল করেও উইকেট পেলেন না তিনি। পিচ এতটাই মন্থর যে ব্যাটারেরা সময় পাচ্ছেন। ফলে উইকেট তুলতে পারছেন না বোলারেরা।
মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পর শতরান করলেন হোপও। শেষ ২০১৭ সালে টেস্টে শতরান করেছিলেন তিনি। আট বছর পর আবার তিন অঙ্কে পৌঁছোলেন। ৫১ বছর পর ভারতের মাটিতে এক ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের দুই ব্যাটার শতরান করলেন।
এই পিচে খেলায় ফিরতে হলে কিছুটা ভাগ্যের সঙ্গও দরকার ছিল ভারতের। সেটাই হল। শতরানের পর সিরাজের একটি বলে প্লেড-অন হলেন হোপ। বল কিছুটা নিচু হল। ফলে শট খেলতে সমস্যা হল তাঁর। ১০৩ রানে আউট হলেন তিনি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের নীচের সারির ব্যাটারেরা যে কুলদীপের বল বুঝতে পারছেন না তা এই ইনিংসেও দেখা গেল। যে কুলদীপ প্রথম ১৫ ওভার উইকেট পাননি, সেই তিনিই পর পর ৩ উইকেট নিলেন। অধিনায়ক চেজ় ফেরেন ৪০ রানে। শেষ উইকেটে লড়াই করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়। ৭৯ রান তোলে তারা। অর্ধশতরান করেন জাস্টিন গ্রিভস (অপরাজিত ৫০)। তবে ৩২ রানে জেডেন সিলস ফিরতেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের ইনিংস শেষ হয়ে যায়।