T20 World Cup 2022

আইপিএল শুরু হতেই শেষ ভারতের ট্রফির গৌরব, ‘রান্নাঘরেই’ কি লুকিয়ে রয়েছে রোগের উৎস

দেশে শেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এসেছিল ২০০৭ সালে। সেটাই ছিল ক্রিকেটের ক্ষুদ্র সংস্করণের বিশ্বকাপের প্রথম বছর। তার পর থেকে আইপিএল শুরু হল। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আর জেতা হল না ভারতের।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২২ ১৩:২৮
Share:

আইপিএলে পাঁচ বার ট্রফি জিতেছেন রোহিত, ব্যর্থ হলেন বিশ্বকাপে। —ফাইল চিত্র

ভারতীয় ক্রিকেটের রান্নাঘর বলা হয় ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ বা আইপিএলকে। নির্বাচকরা সব সময় নিজমুখে স্বীকার না করলেও ২০০৮ সালে শুরু হওয়া এই টি-টোয়েন্টি লিগের উপর নির্ভর করেই তৈরি হয় ভারতীয় দল। উঠে আসেন যশপ্রীত বুমরা, হার্দিক পাণ্ড্যর মতো ম্যাচ জেতানো ক্রিকেটার। আইপিএলে পাঁচ বার ট্রফিজয়ী রোহিত শর্মাকে দেশের অধিনায়ক করা হয়। ভারতীয় ক্রিকেটকে হ্যামলিনের বাঁশির মতো চালনা করে আইপিএল। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে আইপিএল শুরু হওয়ার পর থেকে ভারত আর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতেনি।

Advertisement

দেশে শেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এসেছিল ২০০৭ সালে। সেটাই ছিল ক্রিকেটের ক্ষুদ্র সংস্করণের বিশ্বকাপের প্রথম বছর। লম্বা চুলের মহেন্দ্র সিংহ ধোনির নেতৃত্বে বিশ্বের উপর রাজত্ব করেছিল ভারত। যুবরাজ সিংহের ছয় ছক্কার মতো সে বার মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল গোটা বিশ্বকে। ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে জায়গা করে নিল টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট। ভারতীয় বাজারে চলে এল আইপিএল। এখন বোর্ডের আয়ের অন্যতম বড় উৎস সেই লিগ।

‘হীরক রাজার দেশে’ ছবির একটি সংলাপ মনে পড়ে যায়, “ভর পেট নাও খাই, রাজকর দেওয়া চাই।” অথচ নির্বাচকরা বার বার বলে থাকেন, ক্রিকেটারের মান বোঝার জন্য রঞ্জি ট্রফিই মানদণ্ড। ভারতীয় কোচ রাহুল দ্রাবিড় যে ঘরোয়া লিগ সম্পর্কে বলেন, “বিদেশের টি-টোয়েন্টি লিগগুলো যে সময় হয় তখন ভারতে ঘরোয়া ক্রিকেটের ভরা মরসুম। টেস্টের সূচি থাকে। সবাই বিদেশে খেলতে চলে গেলে রঞ্জি ট্রফি-সহ ঘরোয়া প্রতিযোগিতাগুলো শেষ করা যাবে না। টেস্ট সিরিজ়গুলো খেলা কঠিন হবে। ওগুলো উঠেই যাবে। অনেক ক্রিকেটার হয়তো বিদেশে খেলতে ইচ্ছুক। অনেকে এটা বলেন। কিন্তু সেটা করলে আমাদের পরিণতি ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের মতো হয়ে যেতে পারে। চাইব আমাদের ক্রিকেটাররা গুরুত্ব দিয়ে টেস্ট ক্রিকেট খেলুক। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।”

Advertisement

ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১০ উইকেটে হারের পর ভারতীয় দল। ছবি: পিটিআই

দ্রাবিড় যে লিগকে গুরুত্ব দিচ্ছেন, বোর্ড সেটাকে কতটা গুরুত্ব দেয় বোঝা গিয়েছিল করোনার সময়ই। কোভিডের জন্য রঞ্জি আয়োজন করতে না পারলেও আইপিএল ঠিক হয়। আইপিএল আয়োজন করার জন্য দুবাই চলে গিয়েছিল বোর্ড। কিন্তু ঘরের মাঠে রঞ্জি আয়োজন করা যায়নি। টাকা দিয়ে ক্রিকেটারদের আর্থিক ক্ষতি সামলে দিয়েছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, জয় শাহরা। কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেটের ক্ষতি? সেটা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গিয়েছে।

২০০৮ সালে আইপিএল শুরু হওয়ার পর থেকে ভারতের সেরা ক্রিকেটাররা বিভিন্ন দলের মুখ হয়ে উঠেছেন। একাধিক ক্রিকেটার নজর কেড়েছেন। জাতীয় দলের নির্বাচকরা আড়াই মাসের আইপিএল দেখেই বেছে নিয়েছেন বরুণ চক্রবর্তীর মতো ক্রিকেটারদের। কলকাতা নাইট রাইডার্সের ‘বিস্ময়’ স্পিনারকে গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলানো হয়েছিল। তিনি ব্যাটারদের কতটা ‘বিস্মিত’ করেছিলেন সেটা নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল। তিনটি ম্যাচ খেলে তিনি দিয়েছিলেন ৭১ রান কিন্তু একটি উইকেটও নিতে পারেননি। সেখানেই থমকে যায় তাঁর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। বিশ্বকাপের পর আর ফিরেও তাকানো হয়নি বরুণের দিকে।

আইপিএলে ভাল খেললেই ভারতীয় দলের জার্সি পরার উদাহরণ রয়েছে একাধিক। তাতে যেমন বুমরা, হার্দিকদের পাওয়া গিয়েছে, তেমনই এমন অনেক ক্রিকেটার ভারতীয় দলের হয়ে খেলে গিয়েছেন যাঁদের রঞ্জিতেও অনেক সময় প্রথম একাদশে দেখা যায় না।

পাকিস্তানের প্রাক্তন অধিনায়ক ওয়াসিম আক্রম বলেন, “সবাই ভেবেছিল আইপিএল পার্থক্য গড়ে দেবে ভারত এবং অন্য দলগুলোর মধ্যে। আইপিএল শুরু হয় ২০০৮ সালে। ভারত বিশ্বকাপ জিতেছিল তার আগে, ২০০৭ সালে। তার পর ভারত আর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতেনি। ২০১১ সালে ওরা বিশ্বকাপ জেতে, কিন্তু সেটা ৫০ ওভারের ক্রিকেটে।”

২০০৭ সালে বিশ্বকাপ জেতার পর ভারতের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পারফরম্যান্স কেমন? ২০০৯, ২০১০ এবং ২০১২ সালে সুপার ৮ থেকেই বিদায় নেয় ভারত। ২০১৪ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠলেও শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে হেরে যায় ভারত। ২০১৬ সালে ঘরের মাঠে সেমিফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে হেরে বিদায় নেয় ভারত। এর পর বিভিন্ন কারণে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হয়নি। গত বছর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ১০ উইকেটে হারের লজ্জা মাথায় নিতে হয়েছিল বিরাট কোহলিদের। সেই সঙ্গে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেয় ভারত। এক বছরের মধ্যে সাফল্য বলতে সেমিফাইনালে ওঠাটুকুই।

ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে হেরে রোহিত বলেন, “‘নক আউট পর্বে চাপ সামলানোই আসল। এই বিষয়টা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির উপর নির্ভর করে। চাপ সামলানোর বিষয়টা কাউকে শেখানো যায় না। চাপ নিয়ে খেলা দলের ছেলেদের কাছে নতুন নয়। আইপিএলের প্লে অফ ম্যাচ যখন খেলে তখনও প্রচুর চাপ থাকে। দলের সকলেই চাপ সামলাতে অভ্যস্ত। আসলে সেমিফাইনালে আমাদের বোলিং আক্রমণের শুরুটাই ঠিকঠাক হয়নি। সে সময় আমরা একটু স্নায়ুর চাপে ছিলাম।” আইপিএলের প্লে অফের চাপ কী তা হলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের চাপ সামলানোর অভ্যেস তৈরি করতে ব্যর্থ হচ্ছে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন