শুভমন গিল (বাঁ দিকে) ও অভিষেক শর্মা। ছবি: পিটিআই।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ১৭২ রান তাড়া করতে নেমে ভারতের ওপেনিং জুটিতে ওঠে ১০৫ রান। মাত্র ৫৯ বলে। সেখানেই খেলার ফয়সালা হয়ে যায়। সুপার ফোরের ম্যাচে পাকিস্তানকে হারানোর নেপথ্যে রয়েছে অভিষেক শর্মা ও শুভমন গিলের ওপেনিং জুটি। কী ভাবে এত ভাল বোঝাপড়া তাঁদের? ম্যাচ শেষে তা ফাঁস করলেন অভিষেক।
ম্যাচের সেরা হয়েছেন অভিষেক। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান শেষে অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদবের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় অভিষেককে। মাঠের ধারে দাঁড়িয়ে কথা বলেন দু’জনে। সেই ভিডিয়ো প্রকাশ করেছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। সেখানেই অভিষেক ও শুভমনের বোঝাপড়া নিয়ে প্রশ্ন করেন সূর্য। তিনি বলেন, “একটু আগেই আমি বললাম যে, তোমরা আগুন ও বরফের জুটি। একই রাজ্যের হয়ে খেলো। তোমাদের মধ্যে কী কথা হয়? কারণ, সাজঘরে বসে তো আমরা খুব উপভোগ করি।”
জবাবে অভিষেক টেনে আনেন পুরনো কথা। স্কুল স্তর থেকে একসঙ্গে খেলছেন তাঁরা। অভিষেক বলেন, “আমরা অনূর্ধ্ব-১২ খেলার সময় যা কথা বলতাম, এখনও তাই বলি। আমাদের বন্ধুত্ব এতটাই গভীর। আমরা দু’জন দু’জনকে খুব ভাল ভাবে চিনি। আমি জানি ও কখন শট মারবে। ও জানে আমি কখন শট মারতে পারি। চোখের ইশারাতেই আমাদের কথা হয়ে যায়।”
দীর্ঘ দিন একসঙ্গে খেললেও দু’জনের খেলার ধরন একটু আলাদা। শুভমন বড় শট মারার পাশাপাশি দৌড়েও প্রচুর রান নেন। উল্টো দিকে অভিষেক চার-ছক্কা ছাড়া কিছু বোঝেন না। কিন্তু শুভমনের জন্য অনেক দৌড়তে হয় তাঁকে। তাতে কি সমস্যা হয় তাঁর? অধিনায়কের এই প্রশ্নের জবাবে অভিষেক বলেন, “আমি ওকে বলেছি আগে থেকে আমাকে ইশারায় বলে দিতে। কারণ, ওকে দেখে বোঝা যায় না কখন হালকা হাতে খেলে দৌড়ে রান নেবে। এটা ওর গুণ। আমি ওর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দৌড়ানোর চেষ্টা করছি।”
ব্যাটের পাশাপাশি স্পিন বলও করেন অভিষেক। কিন্তু এশিয়া কাপে খুব একটা বল করতে দেখা যায়নি তাঁকে। সামনের ম্যাচগুলিতে কি দেখা যাবে? সূর্যের এই প্রশ্নের জবাবে তাঁর কোর্টেই বল ঠেলে দিয়েছেন অভিষেক। তিনি বলেন, “নিজের বোলিংয়ের প্রতি আমার বিশ্বাস আছে। অধিনায়কেরও আমার উপর বিশ্বাস আছে। এ বার সিদ্ধান্ত অধিনায়কের হাতে।” তা শুনে সূর্য এ দিক ও দিক তাকিয়ে বলেন, “দাঁড়াও খুঁজে দেখি অধিনায়ক কোথায়?” তখন অভিষেক বলেন, “অধিনায়ক কাছেই আছে। আর তার আমার উপর বিশ্বাসও আছে।”
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে শতরান করার সুযোগ ছিল অভিষেকের। কিন্তু দলের জন্য খেলেছেন তিনি। বড় শট মারতে গিয়ে উইকেট দিয়ে এসেছেন। সূর্য প্রশ্ন করেন, একটু কি সময় অভিষেক নিতে পারতেন না? জবাবে ব্যাটার বলেন, “বাবার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। তুমি যেমন বললে, একটু ধীরে খেলতে পারতে। আমার বাবাও টেলিভিশনের সামনে বসে সেটাই নিশ্চয় বলেছে। কিন্তু আমার খেলার ধরনটাই এ রকম। আরও একটু লম্বা ইনিংস হয়তো খেলতে পারতাম।”
পাকিস্তান ম্যাচে দুবাইয়ের গ্যালারিতে ছিল অভিষেকের পরিবার। কাছের মানুষদের সামনে দলকে জেতানোর অনুভূতিই আলাদা। এই জয়ের জন্য পরিবারকেও কৃতিত্ব দিয়েছেন অভিষেক। তিনি বলেন, “ওরা আমার জন্য পয়া। ওরা যখনই আসে আমি ভাল খেলি। আমরা একপেশে ম্যাচ জিতি। এ দিনও একপেশে জিতেছি। পরিবারের সামনে এ রকম খেলতে পারলে খুব ভাল লাগে।” পাশাপাশি অধিনায়ক সূর্য ও কোচ গৌতম গম্ভীরের কথাও বলেছেন অভিষেক। তাঁর কথায়, “একটা কথা বলতে চাই। এ ভাবে খেলার জন্য কোচ ও অধিনায়কের ভূমিকা খুব বেশি ( সে কথা শুনে নিজেই নিজের পিঠ চাপড়ান সূর্য)। আমরা অনুশীলনও সে ভাবেই করেছি। কোচ ও অধিনায়ক আমার উপর ভরসা রেখেছে। আমরা একটা দল হিসাবে খেলেছি।”
প্রতি বার অর্ধশতরান বা শতরান করলে ডান হাতের আঙুল দিয়ে ইংরেজ ‘এল’ অক্ষর দেখিয়ে উল্লাস করেন অভিষেক। কেন তিনি ওই উল্লাস করেন তার কারণ জানতে চেয়েছেন সূর্য। জবাবে অভিষেক বলেন, “এল মানে ‘লাভ’, অর্থাৎ ভালবাসা। এটা পরিবার ও দর্শকদের প্রতি আমার ভালবাসা। আইপিএলেও সেটাই দেখিয়েছি। এখন দেশের জার্সিতেও দেখাছি। এটা দেশের মানুষের প্রতি আমার ভালবাসা।”