শতরানের পর লোকেশ রাহুলের নতুন ধরনের উচ্ছ্বাস। ছবি: এক্স।
এক বছরে বদলে গিয়েছে লোকেশ রাহুলের জীবন। গত অক্টোবরে ক্রিকেটপ্রেমীদের একাংশ ধরে নিয়েছিলেন, রাহুলের ক্রিকেটজীবন শেষ। অথচ বছর ঘুরতে না ঘুরতেই বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মাহীন ভারতীয় দলের অন্যতম ভরসা হয়ে উঠেছেন কর্নাটকের ব্যাটার। ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের বিরুদ্ধে শতরানের পর নতুন ধরনের উচ্ছ্বাসও প্রকাশ করলেন!
একের পর এক ব্যর্থতা অনিশ্চিত করে তুলে ছিল রাহুলের ক্রিকেট ভবিষ্যৎ। সাদা বলের ক্রিকেট বা লাল বলের— সাফল্য ধরা দিচ্ছিল না রাহুলের ব্যাটে। প্রথমে ভারতের টেস্ট দলের প্রথম একাদশ থেকে বাদ পড়েন। তার পর এক দিনের দলের প্রথম একাদশেও জায়গা হারান। সে সময় আইপিএলে লখনউ সুপার জায়ান্ট অধিনায়কের ক্রিকেট ভবিষ্যৎ নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল। প্রথমত, লখনউ কর্ণধার সঞ্জীব গোয়েন্কার সঙ্গে দূরত্ব এবং আইপিএল ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন। দ্বিতীয়ত, ফর্ম হারিয়ে ভারতীয় দলের প্রথম একাদশেরও বাইরে ছিটকে যাওয়া।
ভারতীয় ব্যাটারদের মধ্যে রাহুল অন্যতম সেরা। টেকনিক্যাল দিক থেকেও অন্যতম সেরা। জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ওপেনিং থেকে ছয়-সাত নম্বর, ব্যাটিং অর্ডারের যে কোনও জায়গায় ব্যাট করতে পারেন। রান করতে পারেন। পাশাপাশি উইকেটরক্ষক হিসাবেও দক্ষ। ২০২৩ সালের এক দিনের বিশ্বকাপ ঋষভ পন্থের অনুপস্থিতিতে তিনি সামলেছিলেন উইকেটরক্ষকের দায়িত্ব। স্বভাবতই রাহুলকে নিয়ে কিছুটা উদ্বিগ্ন ছিল ক্রিকেটমহলের একাংশ।
অথচ বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ভারতীয় দলের ভরসা হয়ে উঠেছেন তিনি। কোহলি, রোহিতহীন দলে তিনিই অভিজ্ঞতম। নেতৃত্বের দায়িত্ব নিতে চাননি। সাধারণ ক্রিকেটার হিসাবে খেলছেন। নিজের ব্যাটিং নিয়ে পরিশ্রম করেছেন। কঠোর অনুশীলন করেছেন। ফিটনেস আরও ভাল করেছেন। রানে ফেরার সব রকম চেষ্টা করেছেন। ফলও পাচ্ছেন। যখন রাহুলকে ভারতীয় দলের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, ঠিক তখনই চওড়া হয়ে উঠছে তাঁর ব্যাট। দলকে ভরসা দিচ্ছেন। রোহিতের অবসরের পর ওপেনিং নিয়ে শুভমন গিলদের চিন্তা দূর করেছেন। পাশাপাশি, তাঁর অভিজ্ঞতাও সমৃদ্ধ করছে দলকে।
শুক্রবার টেস্ট ক্রিকেটে নিজের ১১তম শতরান করলেন রাহুল। দেশের মাঠে এটি তাঁর দ্বিতীয় শতরান। ২০১৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর চেন্নাইয়ে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দেশের মাটিতে প্রথম টেস্ট শতরান করেছিলেন রাহুল। সেই ইনিংসে করেন ১৯৯ রান। তার পর দীর্ঘ ৮ বছর ৯ মাসের বেশি সময় দেশের মাঠে কোনও টেস্টে শতরান করতে পারেননি। সব মিলিয়ে ৩২১১ দিন পর দেশের মাটিতে টেস্ট শতরান করলেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, শেষ ছয় টেস্টে এটি তাঁর তৃতীয় শতরান। ইংল্যান্ড সফরে পাঁচ টেস্টে ৫৩.২০ গড়ে করেছিলেন ৫৩২ রান। তার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসেই শতরান করলেন।
রাহুলই এখন ভারতের এক নম্বর টেস্ট ব্যাটার। এক দিনের ক্রিকেটে তিনি এখন দেশের এক নম্বর উইকেটরক্ষক। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থার (আইসিসি) ক্রমতালিকায় ক্রমশ এগোচ্ছেন ধারাবাহিক পারফরম্যান্স করে। অহমদাবাদে শতরানের পর তাঁর নতুন উচ্ছ্বাসের ধরন হয়তো সেই আস্থা না রাখতে পারার জবাব। সব মিলিয়ে এক বছরের ব্যবধানে বাতিল থেকে ভরসা হয়ে উঠেছেন ৩৩ বছরের ক্রিকেটার। নিজেকে নতুন করে প্রমাণ করার তাগিদই বদলে দিয়েছে তাঁকে।