বিশাখাপত্তনমে অর্ধশতরানের পর জেমাইমা রদ্রিগেজ়। ছবি: এক্স।
এক দিনের বিশ্বকাপ জেতার পর মাঠে নেমে ভারতের মহিলা দল কেমন খেলে সে দিকে নজর ছিল সকলের। বিশাখাপত্তনমে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ হাসতে হাসতে জিতল ভারত। প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১২১ রান করেছিল শ্রীলঙ্কা। ৩২ বল বাকি থাকতে ৮ উইকেটে জিতল ভারত। বিয়ে ভাঙার ১৪ দিন পর মাঠে নেমে ছন্দ পেলেন না স্মৃতি মন্ধানা। ২৫ বলে ২৫ রান করেন তিনি। তবে বিশ্বকাপের ছন্দেই রয়েছেন জেমাইমা রদ্রিগেজ়। তাঁর অর্ধশতরানে ম্যাচ জিতল ভারত। পাঁচ ম্যাচে সিরিজ়ে ১-০ এগিয়ে গেলেন হরমনপ্রীত কৌরেরা।
খেলা শুরুর আগে থেকেই মন্ধানার দিকে ক্যামেরা তাক করেছিল। তিনি অনুশীলন করছিলেন এক মনে। খেলা শুরুর আগে সতীর্থদের সঙ্গে হাসিমুখেও দেখা গেল তাঁকে। খুনসুটিও করলেন। কিন্তু খেলতে নামার পর মাঝেমধ্যেই উধাও হয়ে যাচ্ছিল হাসি। দেখে মনে হচ্ছিল, মনের মধ্যে কোথাও ব্যক্তিগত জীবনের ধাক্কা কাঁটার মতো বিঁধছে।
ভারতের ফিল্ডিংয়ের সময়ও মন্ধানাকে খুব একটা সপ্রতিভ দেখায়নি। ফিল্ডিং মিস করেন। ক্যাচও ছাড়েন। তাঁর হাতে লেগে বল বাউন্ডারির বাইরে চলে যায়। পরে ওপেন করতে নেমে শুরুতে সমস্যা হচ্ছিল মন্ধানার। ঠিকমতো টাইমিং হচ্ছিল না। কয়েকটি বল ব্যাটের কানায় লাগে। যে বলে তিনি চোখ বন্ধ করে অফ সাইডে চার মারেন, সেই বলই সোজা ফিল্ডারের কাছে যাচ্ছিল।
চামারি আটাপাট্টুর এক ওভারে দু’টি চার মারেন মন্ধানা। সেখানেই স্ট্রাইক রেটে কিছুটা বাড়ে। নইলে এক সময় বলের থেকে রান ছিল কম। তিনটি চার মারলেও ১০০-র বেশি স্ট্রাইক রেটে রান করতে পারেননি মন্ধানা। ইনোকা রণবীরার বলে কভারের উপর দিয়ে ছক্কা মারতে গিয়ে নীলাক্ষী ডি’সিলভার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ভারতের সহ-অধিনায়ক।
তবে তার মধ্যেই একটি নজির গড়েন মন্ধানা। মহিলাদের আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দ্বিতীয় ব্যাটার হিসাবে ৪০০০ রান করলেন তিনি। শীর্ষে রয়েছেন নিউ জ়িল্যান্ডের সুজ়ি বেটস। তবে সুজ়ির থেকে কম বলে ৪০০০ রানের মাইলফলকে পৌঁছেছেন তিনি।
মন্ধানার পাশাপাশি ব্যর্থ ভারতের আর এক ওপেনার শেফালি বর্মাও। ১২২ রান তাড়া করতে নেমে ৯ রান করে আউট হন তিনি। দুই ওপেনার ছন্দ না পেলেও প্রথম বল থেকে ছন্দে দেখায় জেমাইমাকে। শুরু থেকেই স্কোরবোর্ড সচল রাখেন তিনি। দৌড়ে রান নিচ্ছিলেন। খারাপ বল পেলে চার মারছিলেন। মন্ধানা আউট হওয়ার পর রান তোলার গতি বাড়ান জেমাইমা। শ্রীলঙ্কার কোনও বোলার তাঁকে সমস্যায় ফেলতে পারেননি।
শিশির পড়ায় ভারতের ব্যাটারদের কাজটা আরও সহজ হয়ে যায়। অর্ধশতরান করেন জেমাইমা। শেষ পর্যন্ত টিকে থাকেন তিনি। জয়সূচক রানও আসে তাঁর ব্যাট থেকেই। ১৪.৪ ওভারে ম্যাচ জিতে যায় ভারত। জেমাইমা ৪৪ বলে ৬৯ রান করে অপরাজিত থাকেন। ১০টি চার মারেন তিনি। তাঁকে সঙ্গ দেন অধিনায়ক হরমনপ্রীত। ১৫ রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি।
এই ম্যাচে ভারতের জার্সিতে অভিষেক হয়েছে বৈষ্ণবী শর্মার। চলতি বছর মহিলাদের অনূর্ধ্ব-১৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছে ভারত। সেই প্রতিযোগিতায় ভারতের হয়ে ৬ ম্যাচে ১৭ উইকেট নিয়েছিলেন এই বাঁহাতি স্পিনার। ছ’মাস পরেই ভারতের মহিলা দল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে নামবে। তার আগে তরুণ প্রতিভাদের দেখে নিতে চাইছেন কোচ অমল মজুমদার। তাই বৈষ্ণবীকে সুযোগ দিয়েছেন তিনি।
ভারতীয় বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সামনে কোনও সময়ই মনে হয়নি শ্রীলঙ্কা বড় রান করতে পারবে। এক দিনের বিশ্বকাপে নজরকাড়া ক্রান্তি গৌড় তাদের প্রথম ধাক্কা দেন। আউট করেন অধিনায়ক চামারিকে। ছোট ফরম্যাটে এটি ক্রান্তির প্রথম উইকেট। সেই ধাক্কা থেকে আর ফিরতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। ভাল বল করেছেন বৈষ্ণবী। উইকেট না পেলেও ৪ ওভারে মাত্র ১৬ রান দিয়েছেন তিনি। অরুন্ধতী রেড্ডি, শ্রীচরণী, দীপ্তি শর্মাদের সামনে হাত খুলে খেলতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। ফলে ১২১ রানে শেষ হয়ে যায় তাদের ইনিংস।
এই জয়ের মধ্যেই ভারতকে সামান্য চিন্তায় রাখবে ফিল্ডিং। তিনটি ক্যাচ পড়েছে ম্যাচে। শ্রীচরণী একাই ছাড়েন দু’টি সহজ ক্যাচ। একটি ক্যাচ ছাড়েন মন্ধানা। নইলে হয়তো আরও কম রান তাড়া করতে হত ভারতকে।