সূর্যকুমার যাদব। ছবি: পিটিআই।
পাকিস্তানকে হারাতে ১৬ ওভারও লাগল না। ছেলেখেলা করে জিতল ভারত। ৭ উইকেটের এই জয়ে ব্যাট হাতে নায়ক অভিষেক শর্মা ও সূর্যকুমার যাদব। অভিষেক শুরুর ভিত গড়লেন। শেষ করলেন সূর্য। ৪৭ রান করে অপরাজিত থাকলেন তিনি। অধিনায়কের ইনিংস খেললেন সূর্য।
পাকিস্তানের খেলা দেখে মনে হচ্ছে কোন ক্রিকেটারকে কোথায় খেলাতে হবে সেটা বুঝতে ভুল করেছে তারা। পাকিস্তানের হয়ে সবচেয়ে ভাল ব্যাট করেছেন শাহিন আফ্রিদি। অথচ তাঁকে বোলার হিসাবে খেলাচ্ছে পাকিস্তান। আবার দলের ওপেনার সাইম বল হাতে ৩ উইকেট নিয়েছেন। তাঁদের ভূমিকা বদল করা উচিত। এমনটাই আলোচনা করছেন ধারাভাষ্যকারেরা।
দুবাইয়ের উইকেট বেশ মন্থর। গরমে পিচ ভাঙছে। ফলে স্পিনারদের বিরুদ্ধে খেলতে সমস্যা হচ্ছে। এই উইকেটে কী ভাবে খেলতে হয় তা পাক ব্যাটারদের শেখালেন ভারতীয় ব্যাটারেরা। পাকিস্তানের ব্যাটারেরা বল না দেখেই চালাচ্ছিলেন। শুধু বড় শটের উপর ভরসা রাখছিলেন। দৌড়ে রান নিচ্ছিলেন না। উল্টে ভারতের ব্যাটারেরা বল দেখে খেললেন। খারাপ বলে বড় শট মারলেন। ভাল বলকে সম্মান করলেন। দৌড়ে রান নিলেন। ফলে প্রতি ওভারে রান হল। পাকিস্তানের ব্যাটারদের এই শিক্ষা নিতে হবে। নইলে প্রতি ম্যাচে এই ছবিই দেখা যাবে।
ভারতের রান ১০ ওভারে ৮৮। বাকি ৬০ বলে করতে হবে ৪০ রান। প্রশ্ন হচ্ছে, আর ক’ওভার লাগবে খেলা শেষ করতে? আনন্দবাজার ডট কম-এর ক্রীড়া দফতরে সেই প্রশ্নই উঠছে। কেউ বলছেন, আর চার ওভারে খেলা শেষ হয়ে যাবে। কারও মতে, তাড়াহুড়ো করার দরকার নেই। এমনই পাঁচ-ছয় ওভারের বেশি লাগবে না। এখন দেখার, কাদের কথা সত্যি হয়।
মাঠের বাইরে গ্যালারিতেও চলছে আরও এক লড়াই। সেখানেও এগিয়ে ভারত। খেলা যত গড়াচ্ছে তত ‘ভারত মাতা কি জয়’ ধ্বনিতে মুখরিত হচ্ছে গ্যালারি। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, এই লড়াই ভারতীয় ক্রিকেটার ও সমর্থকদের কাছে যুদ্ধের থেকে কম নয়।
পাওয়ার প্লে-র মধ্যে যতটা বেশি সম্ভব চালিয়ে খেলার চেষ্টা করেন তিনি। এ দিনও তাই করলেন অভিষেক শর্মা। আয়ুবকে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন ফাহিম আশরফের হাতে। করলেন ১৩ বলে ৩১। রান বেশি না হলেও, নিজের কাজটা করে দিয়েছেন তিনি। ইতিমধ্যেই পাকিস্তান বেশ চাপে পড়ে গিয়েছে ভারতের রান রেট দেখে।
দু’টি চার মেরেছিলেন। তৃতীয় বলেও ক্রিজ় ছেড়ে বার হন। কিন্তু শরীরের ভারসাম্য রাখতে পারেননি শুভমন গিল। সময়ের মধ্যে ক্রিজ়ে ঢুকতে পারেননি তিনি। সাইম আয়ুবের বলে স্টাম্প আউট হয়ে ফিরলেন ভারতের সহ-অধিনায়ক। অপর প্রান্তে অবশ্য নিজের মেজাজে খেলছেন অভিষেক।
আমিরশাহির বিরুদ্ধে রান তাড়া করতে নেমে প্রথম বলে ছক্কা মেরেছিলেন অভিষেক। পরের বলে মেরেছিলেন চার। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হল উল্টো। প্রথম বলে চার ও পরের বলে ছক্কা মারলেন। দাঁড়িয়ে দেখলেন শাহিন আফ্রিদি। সাজঘর থেকে তৈরি হয়ে এসেছেন অভিষেক। প্রথম ওভারেই তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন ভারত কী ভাবে রান তাড়া করতে চাইছে।
এত ভাল জায়গায় থেকেও পাকিস্তানকে অল আউট করতে পারল না ভারত। এতে হতাশ হবেন সূর্যকুমার যাদবেরা। ঝোড়ো ইনিংস খেললেন শাহিন আফ্রিদি। শেষ তিন ওভারে চারটি ছক্কা মারলেন তিনি। ১৬ বলে ৩৩ রান করে অপরাজিত থাকলেন। তাঁর ব্যাটেই ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১২৭ রান করল পাকিস্তান।
আগের ম্যাচে আমিরশাহির বিরুদ্ধেও সবচেয়ে বেশি রান দিয়েছিলেন বুমরাহ। পাকিস্তানের বিরুদ্ধেও রান খরচ করছেন তিনি। বিশেষ করে পাকিস্তানের নীচের সারির ব্যাটারেরা তাঁর বিরুদ্ধে বড় শট খেলেছেন। যা সচরাচর দেখা যায় না। যদিও স্পেলের শেষ বলে উইকেট নিয়েছেন তিনি। হার্দিকও খারাপ বল করলেন। শেষ ওভারে তাঁকে দু’টি ছক্কা মারলেন শাহিন। সবচেয়ে বেশি রান দিয়েছেন তিনি। দুই পেসার আরও একটু ভাল বল করলে পাকিস্তানের ইনিংস আরও কম রানে শেষ হত।
ভাল বল করলেও ভারতের প্রথম একাদশে নিয়মিত জায়গা পান না। এশিয়া কাপকে তাই জবাবের মঞ্চ হিসাবে দেখছেন কুলদীপ। আমিরশাহির বিরুদ্ধে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নিলেন ৩ উইকেট। পাকিস্তানের হয়ে ওপেন করতে নেমে টেস্ট খেলছিলেন সাহিবজ়াদা ফারহান। অবশেষে ৪০ রান করে আউট হলেন তিনি। কুলদীপের বলের কূলকিনারা পাচ্ছেন না পাক ব্যাটারেরা।
কুলদীপের বল সামনে এগিয়ে এসে খেলতে গিয়েছিলেন মহম্মদ নওয়াজ়। কিন্তু গুগলি ধরতেই পারেননি। আম্পায়ার মাসুদুর রহমানের আঙুল উঠে গেল। নওয়াজ় রিভিউ নিলেও লাভ হল না। শূন্য রানে ফিরলেন নওয়াজ়। প্রশ্ন উঠছে, পাকিস্তান ১০০ পেরোবে তো?
হাসান নওয়াজ়ের লোপ্পা ক্যাচ এসেছিল বুকের কাছে। কুলদীপ লাফিয়ে ধরতে গিয়ে সেই ক্যাচ ফেলে দিলেন। গ্যালারিতে তখন ভারতীয় সমর্থকদের হা হুতাশ। একই অবস্থা আনন্দবাজার ডট কম-এর দফতরেও। তবে কুলদীপকে পরের বলেই সুযোগ দিলেন হাসান। সুইপ করে চালাতে গিয়ে বল উঠে গেল আকাশে। ক্যাচ ধরলেন অক্ষর।
বরুণ চক্রবর্তী ও অক্ষর পটেলের বল কোন দিকে ঘুরবে বুঝতেই পারছিলেন না সলমন। বাধ্য হয়ে সুইপ মারতে যান। স্পিন বুঝতে না পারলে সুইপ খেলারই চেষ্টা করেন ব্যাটারেরা। তাতে শেষরক্ষা হল না। ১২ বলে ৩ রান করে আউট সলমন। ৪৯ রানে পাকিস্তান চতুর্থ উইকেট হারাল। শেষ তিন ওভারে মাত্র ৫ রান করেছে পাকিস্তান। পড়েছে ২ উইকেট। বোঝাই যাচ্ছে ভারতের স্পিন আক্রমণের সামনে ল্যাজেগোবরে অবস্থা পাকিস্তানের।
এই পাক দলে সেরা ভরসা ফখর জ়মান। ভারতের বিরুদ্ধে বড় রান করতে হলে তাঁকে ক্রিজ়ে থাকতে হত। কিন্তু অক্ষর পটেলের বলে বড় শট মারতে গিয়ে আউট হলেন তিনি। ভারতীয় স্পিনারদের সামনে হতভম্ব দেখাচ্ছে পাক ব্যাটারদের। কোন দিকে বল ঘুরবে, বুঝতেই পারছেন না তাঁরা। বাকিরা কত দূর টানতে পারবেন, তা নিয়ে জোর আলোচনা আনন্দবাজার ডট কম-এর ক্রীড়া দফতরে।
সাহিবজ়াদা ফারহান ১৯ ও ফখর জ়মান ১৬ রানে খেলছেন। পাওয়ার প্লে-র মধ্যেই তিন ওভার বল করে ফেলেছেন বুমরাহ। এ বার স্পিন আক্রমণের দিকে ঝুঁকবে ভারত। মাঝের ওভার করবেন দলের তিন স্পিনার। সঙ্গে রয়েছেন শিবম দুবে।
দুই উইকেট পড়ার পর পাকিস্তানকে ম্যাচে ফেরাচ্ছেন ফখর জ়মান ও সাহিবজ়াদা ফারহান। তাঁরা জুটি গড়া শুরু করেছেন। মাঝেমধ্যেই বড় শট খেলছেন। বুদ্ধি করে খেলছেন দুই ব্যাটার। তাঁদের খেলা দেখে হাসি ফুটেছে পাকিস্তানের সমর্থকদের মুখে। এত ক্ষণ চুপ করে বসেছিলেন তাঁরা। এ বার তাঁদেরও চিৎকার শোনা যাচ্ছে দুবাইয়ের মাঠে।
আমিরশাহির থেকেও কম রানে কি পাকিস্তানকে অল আউট করে দেবে ভারত? খেলা কি ১০টার মধ্যে শেষ হয়ে যাবে? সেই আলোচনাই হচ্ছে আনন্দবাজার ডট কম-এর ক্রীড়া দফতরে। পাকিস্তানের খেলা দেখে কারও মনে হচ্ছে না, পুরো ২০ ওভার ব্যাট করতে পারবে তারা।
বুমরাহের বলে ফখর জ়মানকেও আউট দিয়েছিলেন আম্পায়ার। রিভিউ নিয়ে বাঁচেন ফখর। হাঁপ ছেড়ে বাঁচেন পাক সমর্থকেরা। বুকে হাত দিয়ে বসেছিলেন তাঁরা। তৃতীয় আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের পর কিছুটা থিতু হলেন তাঁরা। কিন্তু মুখের হাসি উড়ে গিয়েছে পাক সমর্থকদের।