ভারতীয় ক্রিকেটারদের উচ্ছ্বাস। ছবি: পিটিআই।
প্রথম বারের মতো বিশ্বকাপ জিতে নিল ভারত। আউট হলেন নাদিন ডি ক্লার্ক। তার সঙ্গে সঙ্গেই রচনা হল ইতিহাস। ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে এক বিরল দিন রচিত হল ডিওয়াই পাটিল স্টেডিয়ামে।
ডি ক্লার্ক ওভারের শেষ বলে দ্রুত রান নিতে গিয়েছিলেন। দৌড় শেষ করার আগেই আউট করে দিলেন রিচা। বিশ্বজয়ের থেকে এক উইকেট দূরে ভারত।
এক ওভারে তাঁর দুটি উইকেট হয়তো বিশ্বকাপটাই এনে দিল ভারতকে। প্রথমে আউট করলেন উলভার্টকে। তুলে মেরেছিলেন উলভার্ট। তৃতীয় বারের চেষ্টায় ক্যাচ নিলেন আমনজ্যোৎ। তার দু’বল পরেই আর এক বিধ্বংসী ব্যাটার ক্লো ট্রায়নকেও তুলে নিলেন দীপ্তি। চার উইকেট হল তাঁর। তিনিই কি ম্যাচের সেরা?
বিশ্বের প্রথম মহিলা ক্রিকেটার হিসাবে সেমিফাইনাল এবং ফাইনালে শতরান লরা উলভার্টের।
দীপ্তির ফ্লাইটেড বল সামনের পায়ে খেলতে গিয়েছিলেন ডার্কসেন। বুঝতে না পেরে বোল্ড হয়ে গেলেন ডার্কসেন। বড় ধাক্কা দিল ভারত।
ফাইনালের মতো ম্যাচে ক্যাচ ছেড়ে দিলে কি আর জেতা যায়? ডার্কসেনকে ফিরিয়ে দেওয়ার সুযোগ ছিল। হাতের ক্যাচ ফেলে দিলেন দীপ্তি। নিচু হতেই অনেকটা সময় নিয়ে নিলেন।
শিশির পড়ছে। ফলে বল গ্রিপ করা শক্তি। এ বারই ভারতীয় স্পিনারদের আসল পরীক্ষা। যারা মানসিক ভাবে ভাল জায়গায় থাকবে তারাই জিতবে।
হয়তো বল হাতে ঠিক করে ধরতে পারছেন না। নিয়ন্ত্রণও রাখতে পারছেন না। এক ওভারে ১৭ রান দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার রান রেট আগের জায়গায় এনে দিলেন। একটি নো বল থেকে ছয়, পরের ফ্রি হিট থেকেও ছয় খেলেন। খারাপ বোলিং।
প্রচুর বল খেলছিলেন জাফটা। রান পাচ্ছিলেন না। মরিয়া হয়ে মারতে গিয়ে উইকেট দিলেন তিনি। নিলেন দীপ্তি।
দক্ষিণ আফ্রিকাকে জোড়া ধাক্কা দিলেন শেফালি। অপরিচিত স্পিনারের বল খেলতে সমস্যা হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটারদের। সুনে লুসের পর অভিজ্ঞ মারিজ়ান কাপও তাঁর বলে আউট হলেন। ভাল ক্যাচ ধরলেন রিচা ঘোষ। রিভিউ নষ্ট করলেও উইকেটের পিছনে ভাল দেখাল তাঁকে।
বিশেষজ্ঞ বোলারেরা উইকেট তুলতে না পারায় ফাটকা খেলেছিলেন হরমনপ্রীত কৌর। শেফালি বর্মাকে বল দেন তিনি। পার্ট-টাইম স্পিনার হওয়ায় শেফালির বলে মারার চেষ্টা করেন সুনে লুস। সেটা করতে গিয়ে উইকেট দিয়ে আসেন তিনি। এক দিনের কেরিয়ারে এর আগে মাত্র ১৪ ওভার বল করেছিলেন শেফালি। সেই বোলারই ভারতকে ম্যাচে ফেরালেন।
প্রতি ওভারে পাঁচটি ভাল করলে একটি খারাপ বল করছেন বোলারেরা। সেই সুযোগ নিচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তারা প্রতি ওভারে অন্তত একটি করে চার মারার চেষ্টা করছে। রানের গতিও তাতে বজায় থাকছে।
শ্রী চরণীর বল খেলতে অসুবিধা হচ্ছে প্রোটিয়াদের। ফলে বাঁ হাতি স্পিনার হিসাবে রাধা যাদবও সাফল্য পেতে পারেন। এমনকি হরমনপ্রীত কৌরেরও উচিত দরকারের সময় কয়েকটি ওভার হাত ঘোরানো। স্পিনারেরা এখনও পর্যন্ত ভালই সাফল্য পাচ্ছেন।
চরণীর বল খেলতে না পেরে এলবিডব্লিউ হলেন বশ। তবে এখানেই থামলে চলবে না ভারতের বোলারদের। চাপ আরও বাড়াতে হবে তাঁদের। দক্ষিণ আফ্রিকার আরও কয়েকটি উইকেট তুলতে হবে।
রেণুকার বল অফে ঠেলে রান নিতে গিয়েছিলেন ব্রিটস। আমনজ্যোতের থ্রোয়ে রান আউট হলেন তিনি। কোণাকুণি দৌড়তে গিয়ে রান আউট হলেন ব্রিটস। সোজা দৌড়লে হয়তো ঢুকে যেতে পারতেন।
স্টেডিয়ামে থাকলে এই মুহূর্তে মাইকের ঘোষণা ছাড়া আর কিছুই শুনতে পাবেন না। কারণ ভারতীয় বোলারেরা একটি উইকেটও ফেলতে পারেননি। উল্টে রান হজম করেই যাচ্ছেন। সুনিধি চৌহানের গান থামার পর আর আনন্দের কোনও ঘটনা ঘটেনি। আমনজ্যোতকে পর পর দুটি চার মেরে চাপ আরও বাড়াচ্ছেন উলভার্ট।
বিশ্বকাপে প্রথম ছয় খেলেন রেণুকা। ব্রিটস তাঁর বল সোজা উড়িয়ে দিলেন। রেণুকাকে চেষ্টা করতে হবে ব্যাটের থেকে একটু দূরে বল ফেলার। পাশাপাশি আরও বেশি অফকাটার দেওয়ার।
তৃতীয় ওভারেই একটি রিভিউ নষ্ট করল ভারত। রেণুকার বল লেগেছিল ব্রিটসের পায়ে। আম্পায়ার আউট দেননি। রিচার কথায় রিভিউ নেয় ভারত। দেখা গেল বল উইকেটের বাইরে দিয়ে যাচ্ছিল। আর কবে শিখবে ভারত? তারা বিশ্বকাপে ১৫টি রিভিউ নিয়ে ১০টিতেই অসফল হয়েছে।
শেষ দুই ওভারে একেবারেই ভাল খেলতে পারল না ভারত। যেখানে চার-ছয় মারার কথা, সেখানে এক-দু’রানের উপরেই ভরসা করতে হল। ফলে তিনশো যেখানে হেসেখেলে উঠে যাবে মনে হচ্ছিল, সেখানে ২৯৮ রানেই আটকে গেল ভারত। এ বার দায়িত্ব বোলারদের উপর।