ম্যাচের আগের দিন পিচ পরীক্ষা পন্থের। ছবি: পিটিআই।
সীমিত ওভারের ম্যাচ হয়েছে। মেয়েদের বিশ্বকাপের ম্যাচ হয়েছে। শনিবার গুয়াহাটির বর্ষাপারা স্টেডিয়ামে প্রথম বার হতে চলেছে টেস্ট ম্যাচ। স্বাভাবিক ভাবেই স্থানীয় ক্রিকেটপ্রেমী মানুষের কাছে গর্বের দিন। তবে প্রথম বার ভারতের উত্তর-পূর্বের কোনও রাজ্যে টেস্ট হতে চলার আগে যাবতীয় আলোচনা কেবল পিচ নিয়েই। ইডেন গার্ডেন্সে যে কাণ্ড করে এসেছে ভারতীয় দল, তাতে গুয়াহাটিতে নাটকের কমতি থাকবে, এমনটা মনে করছেন না কেউই।
ঘরের মাঠে ভারতের দাপট শেষ হয়েছে গত বছর নিউ জ়িল্যান্ডের কাছে চুনকাম হয়ে। দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুয়াহাটিতে হারাতে না পারলে সিরিজ় তো হারতে হবেই, দেশের মাটিতে আরও এক বার চুনকাম হতে হবে ভারতকে। অর্থাৎ সম্মানও যাবে। কোচ গৌতম গম্ভীর এবং সাপোর্ট স্টাফদের চাকরি নিয়ে ভয় না থাকলেও, চুনকাম হলে সেই কলঙ্ক মুছতে অনেক সময় লাগতে পারে। একাধিক আইসিসি ট্রফি জিতে সেই ক্ষতে প্রলেপ লাগাতে হতে পারে।
একে মরণ-বাঁচন ম্যাচ। তার উপর পাওয়া যাবে না অধিনায়ক শুভমন গিলকেই। ঘাড়ের চোটের জন্য তিনি মুম্বই চলে যাচ্ছেন। অবশ্য তাঁকে গুয়াহাটিতে খেলতে দেখা যাবে, এমন আশা করাই হয়নি। আনন্দবাজার ডট কম একাধিক বার লিখেছিল সে কথা। শুভমনের চোট যে এখনই সারবে না, এটা চিকিৎসকেরাও বুঝে গিয়েছিলেন। তাই আগে থেকেই ঋষভ পন্থকে অধিনায়ক হিসাবে তৈরি রাখার পরিকল্পনা শুরু হয়েছিল।
নিউ জ়িল্যান্ডের হয়ে খেলতে নেমে ভারতকে বিপদে ফেলেছিলেন অজাজ পটেল এবং মিচেল স্যান্টনার। ইডেন টেস্টে সাইমন হারমার, কেশব মহারাজেরা ভারতের দর্পচূর্ণ করেছেন। যা অবস্থা, তাতে গুয়াহাটিতেও ঘূর্ণি পিচ বানালে ভারতের কপালে আরও বিপদ নাচছে। চোটের জন্য হারমারকে নিয়ে সংশয় তৈরি হলেও তিনি খেলবেন। যতই কাগিসো রাবাডা না থাকুন, ভারতকে বিপদে ফেলার জন্য লুনগি এনগিডি রয়েছেন।
২০১৮-য় এই গুয়াহাটিতেই জাতীয় দলের হয়ে এক দিনের ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল পন্থের। শনিবার সেই মাঠেই তিনি টস করতে নামবেন ভারতের ৩৮তম টেস্ট অধিনায়ক হিসাবে। পন্থের কাছেও বড় পরীক্ষা। অতীতে কেবল একটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন। লাল বলে অধিনায়কত্বের অভিজ্ঞতা প্রায় নেই-ই। সাত বছর আগে দিল্লিকে রঞ্জি ট্রফির ফাইনালে তুলেছিলেন। হেরেছিলেন বিদর্ভের কাছে।
তার উপর ইডেন টেস্টের তৃতীয় দিনে তাঁর নেওয়া সিদ্ধান্তও আতশকাচের তলায়। দক্ষিণ আফ্রিকার তিন উইকেট বাকি থাকতেও জসপ্রীত বুমরাহ, মহম্মদ সিরাজদের দিয়ে বল করাননি। টেম্বা বাভুমা এবং করবিন বশ ভারতীয় স্পিনারদের অনায়াসে খেলে জুটি গড়ে দেন। শেষ পর্যন্ত ওই জুটির কাছেই হারে ভারত। পন্থ যতই নিজের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করুন, ক্রিকেটীয় যুক্তি উল্টো কথাই বলছে।
বর্ষাপারা স্টেডিয়াম রয়েছে অসম ক্রিকেট সংস্থার অধীনে। এই সংস্থারই প্রতিনিধি বোর্ড সচিব দেবজিৎ শইকীয়া। ফলে এই ম্যাচ তাঁর কাছে মেয়ের বিয়ে দেওয়ার মতোই। বোর্ড সভাপতি নিশ্চয়ই চাইবেন না প্রথম টেস্ট ম্যাচেই লজ্জার শিকার হোক তাঁর ঘরের মাঠ। ফলে এমন পিচ বানানো হয়েছে যেখানে সুবিধা পাবে দুই দলই। ইডেনের মতো প্রথম দিন থেকে ঘূর্ণি বর্ষাপারায় থাকছে না। ব্যাটার-বোলার উভয়েই সুবিধা পাবেন। এখন দেখার, শেষ মুহূর্তে নাটকীয় কোনও বদল হয় কি না।
১. একটা ম্যাচের জন্য নেতৃত্ব পাওয়াটা ভাল বিষয় নয়। তবে এই সম্মান দেওয়ার জন্য আমি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) কাছে কৃতজ্ঞ। অনেক সময় আপনি বড় কোনও বিষয় নিয়ে ভাবতে পারেন। তাতে লাভ কিছু হয় না। আমিও এটা নিয়ে বেশি ভাবতে চাই না। প্রথম টেস্টটা আমাদের ভাল যায়নি। এই ম্যাচটা জেতার জন্য আমাদের যা যা করা প্রয়োজন, তা আমাদের করতে হবে।
২. আমরা সকলে জানি কী করে ক্রিকেট খেলতে হয়। মাঠে কেমন আচরণ করতে হয়। শেষ টেস্টটা আমরা ভাল খেলতে পারিনি। কিন্তু আমাদের সামনে দিকে তাকাতে হবে। সামনে এগোতে হবে। গুয়াহাটিতে জেতার জন্য যা যা করা প্রয়োজন, আমাদের করতে হবে। আমরা শুধু জয় নিয়েই ভাবতে চাইছি।
৩. আমাদের মধ্যে প্রচুর আলোচনা হয়। আগের টেস্টে আমাদের মনে হয়েছিল, বেশি স্পিনার খেলালে লাভ হবে। এক জন বাড়তি জোরে বোলার খেলানোর সুযোগ সব সময় থাকে। আবার অন্য কেউ উইকেট পেলে মানুষ প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন। অধিনায়কদের কাছে এটা একটা চ্যালেঞ্জ। প্রশ্নের মুখে পড়তেই হয়। কিন্তু অভিজ্ঞতা, বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হয়। মাঠে বোলারদের পাশে থাকতে হয় অধিনায়ককে।
১. কাগিসো দ্বিতীয় টেস্টে খেলতে পারবে না। লুনগি এনগিডিকে খেলানোর ইচ্ছা অবশ্যই রয়েছে। তাই জন্যই ওকে এখানে ডাকা হয়েছে। ও জানে নতুন বলে কী করতে পারে। যদি সকালের দিকে পিচের সাহায্য পায় তা হলে নিঃসন্দেহে লুনগি আমাদের প্রধান অস্ত্র হবে। তবে সকালেই সিদ্ধান্ত নিতে চাই। দলে যে-ই আসুক না কেন, সকলের সমর্থন পায়।
২. পিচ অনেক তাজা লাগছে। কলকাতার তুলনায় এই পিচে অনেক বেশি ধারাবাহিকতা দেখা যাবে। পুরোপুরি উপমহাদেশীয় পিচ। প্রথম দু’দিন ব্যাট করা যাবে। তার পরে স্পিনারদের ঘূর্ণি দেখা যাবে।
৩. ছেলেরা দুর্দান্ত মেজাজে আছে। প্রথম টেস্টে যে ভাবে খেলেছিলাম সে ভাবেই খেলব। গুয়াহাটিতে প্রথম টেস্ট খেলতে পারব ভেবে উত্তেজিত। নিশ্চিত ভাবে উত্তেজক একটা টেস্ট হবে। সকলে সে দিকেই তাকিয়ে আছে।