IPL 2025

আইপিএল ফাইনাল ক্রিকেটারদের জবাবের মঞ্চ, কোচেদেরও! আঠারোর স্পর্ধায় মঙ্গলবার ইতিহাস তৈরির সুযোগ বিরাট-শ্রেয়সদের

অনেক অপ্রাপ্তি, বঞ্চনা, অবহেলা, উপেক্ষার জবাব লেখা থাকবে এ বারের আইপিএল ট্রফির গায়ে। ইতিহাস কিন্তু মনে রাখবে শুধুই চ্যাম্পিয়নকে। ১৮-র আইপিএল পাবে নতুন ‘সাবালক’।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০২৫ ০৮:০৬
Share:

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

আইপিএল ফাইনাল নিয়ে নতুন করে উন্মাদনা ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে। নতুন চ্যাম্পিয়ন পাবে ১৮-য় পা দেওয়া প্রতিযোগিতা। এর আগে তিন বার ফাইনালে উঠেও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। পঞ্জাব কিংসও এক বার রানার্স হয়েছে। ফাইনালে যারা আঠারোর স্পর্ধা দেখাতে পারবে, তারাই ট্রফি জিতবে।

Advertisement

পঞ্জাব কিংস

গত বছর কলকাতা নাইট রাইডার্সের অধিনায়ক হিসাবে আইপিএল জিতেছেন শ্রেয়স আয়ার। এ বার তিনিই পঞ্জাবের অধিনায়ক। আইপিএল ফাইনালের চাপ কেমন, তিনি জানেন। প্রথম থেকেই দলকে প্লে-অফের দৌড়ে রেখেছিলেন শ্রেয়স। ধারাবাহিক ভাবে ভাল পারফর্ম করেছেন তাঁরা। দলে ভারসাম্য রয়েছে। শ্রেয়স ছাড়া সেই অর্থে বড় নাম নেই দলে। কিছুটা অর্শদীপ সিংহ এবং যুজবেন্দ্র চহল। দলে ‘তারকা’ দ্বন্দ্ব নেই। শ্রেয়সের নেতৃত্বাধীন দলকে সুখী পরিবারের মতো দেখিয়েছে আগাগোড়া। টানা জিততে থাকা মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠা পঞ্জাব শিবির আত্মবিশ্বাসী থাকবে নিশ্চিত। সতর্কও থাকবে। কারণ প্রথম কোয়ালিফায়ারে বেঙ্গালুরুর কাছেই হারতে হয়েছিল তাদের। মঙ্গলবারের ফাইনালে শ্রেয়সদের জন্য এটাই সবচেয়ে বড় ইতিবাচক দিক হতে পারে। ১০ বছর পর ট্রফি দিয়েও কেকেআর কর্তৃপক্ষের মন জিততে না পারা অধিনায়ক শ্রেয়সও নিজেকে প্রমাণ করার চেষ্টা করবেন আর একবার। টেস্ট দলে জায়গা না পাওয়ার জবাব দেওয়ারও চেষ্টা করবেন। আইপিএল ফাইনালের থেকে ভাল মঞ্চ আর কী হতে পারে উপেক্ষার জবাব দেওয়ার জন্য?

Advertisement

রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু

পঞ্জাবের ঠিক বিপরীত ছবি বেঙ্গালুরু শিবিরে। বিরাট কোহলি, জশ হেজ়লউড, ফিল সল্টের মতো ‘তারকা’ রয়েছেন। তবু নেতৃত্বে রজত পাটিদার। তিনি খেলতে না পারলে অধিনায়ক জিতেশ শর্মা। তাঁদের নেতৃত্বে খেলছেন চাপমুক্ত কোহলিরা। প্রয়োজনে পরামর্শ দিচ্ছেন ‘জুনিয়র’ নেতাদের। কিন্তু তাঁদের সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করছেন না। কোনও কিছু চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন না। চাপমুক্ত থাকতে পারছেন পাটিদার বা জিতেশও। বেঙ্গালুরুর সব ব্যাটারই ফর্মে রয়েছেন। ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন বোলারেরাও। পঞ্জাবকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠা বেঙ্গালুরুর ক্রিকেটারেরাও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ফাইনাল খেলতে নামবেন। ফাইনালে বেঙ্গালুরুর সবচেয়ে সুবিধা হল, কারও প্রমাণ করার কিছু নেই।

দুই চরিত্র

এক, কোহলি। কোহলি আদতে পঞ্জাবি। কিন্তু তাঁর জন্ম, বেড়ে ওঠা দিল্লিতে। আইপিএলে তিনি আবার বেঙ্গালুরুর। ২০০৮ সাল থেকেই। তবু এখনও আইপিএল জেতার স্বপ্ন সফল হয়নি তাঁর। দুটো বিশ্বকাপ, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আছে তাঁর ঘরে। ১৮ নম্বর জার্সি পরে আইপিএল ট্রফি থাকবে না? ক্রিকেটজীবনের শেষ প্রান্তে চলে আসা ভারতের প্রাক্তন অধিনায়কের হাতে ট্রফি দেখতে চান ক্রিকেটপ্রেমীদের একটা বড় অংশও।

দুই, শ্রেয়স। তাঁর বাবা কেরলের, মা কর্নাটকের। দক্ষিণ ভারতীয় পরিবার। শ্রেয়সের জন্ম, বড় হওয়া মুম্বইয়ে। আইপিএলে আবার তিনি মুম্বইয়ের নন। কখনও দিল্লির, কখনও কলকাতার, কখনও পঞ্জাবের। কলেজজীবন থেকেই ট্রফি জেতা তাঁর অভ্যাস। প্রবীণ আমরের ছাত্রকে জুনিয়র পর্যায়ে তুলনা করা হত বীরেন্দ্র সহবাগের সঙ্গে। গ্র্যাজুয়েশন করার সময় মুম্বইয়ের রামনিরঞ্জন আনন্দীলাল পোদ্দার কলেজ অফ কমার্স অ্যান্ড ইকোনমিক্সের অধিনায়ক ছিলেন শ্রেয়স। দু’বছরে ছ’টি ট্রফি জিতেছিলেন। আইপিএলেও অধিনায়ক হিসাবে দিল্লি, কলকাতার পর পঞ্জাবকেও ফাইনালে তুললেন। এমন নজির দ্বিতীয় কারও নেই।

দুই বিতাড়িত কোচ

দু’দলের সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছেন দুই বিতাড়িত কোচ। দিল্লি ক্যাপিটালস রাখেনি রিকি পন্টিংকে। লখনউ সুপার জায়ান্টস রাখেনি অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারকে। নির্মম পেশাদার ক্রিকেট। সাফল্য দিতে পারেননি। চাকরিও বাঁচাতে পারেননি দু’জনে। তাঁদের কোচিং দক্ষতায় আস্থা রাখতে পারেননি দিল্লি এবং লখনউ কর্তৃপক্ষ। তা বলে বেকারও থাকেননি তাঁরা। দীর্ঘ দিন সাফল্যের সঙ্গে সর্বোচ্চ স্তরে কোচিং করানো ফ্লাওয়ারকে দায়িত্ব দেন বেঙ্গালুরু কর্তৃপক্ষ। পন্টিংকে পঞ্জাব। এ বারের আইপিএল ফাইনাল তাঁদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। পেশাদার ক্রিকেটে হাতেকলমে শেখানোর কিছু থাকে না। আসল কাজ রণকৌশল তৈরি, প্রতিপক্ষের ওজন বুঝে প্রথম একাদশ নির্বাচন এবং দলের সকলকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া। এ পর্যন্ত দু’জনেই নিজেদের দায়িত্বে সফল। আধুনিক ক্রিকেট জনতার কাছে পন্টিং পরিচিত, জনপ্রিয়। ফ্লাওয়ার ততটা নন। বরং ভিন্ন চরিত্রের। জ়িম্বাবোয়ের প্রাক্তন অধিনায়কের অস্ট্রেলীয় কৌলীন্যও নেই। চুপচাপ থাকেন। প্রয়োজন না হলে সাংবাদমাধ্যমের সামনে আসেন না। সব বিষয়ে কথা বলেন না। কিন্তু নিজের দায়িত্ব পালন করেন ১০০ শতাংশ পেশাদারিত্বের সঙ্গে। পন্টিং অবশ্য ফাইনালের আগে সুযোগ বুঝে খোঁচা দিয়েছেন গৌতম গম্ভীরকে। তিনি বলেছেন, “টেস্ট দলে যারা সুযোগ পেয়েছে তারা সবাই হয় প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট বা আইপিএলে ভাল খেলেছে। বাকিরা যা করেছে শ্রেয়সও ঠিক সেটাই করেছে। তবু সুযোগ পায়নি। আমি হতাশ। কিন্তু শ্রেয়স হতাশ নয়। হয়তো সেই কারণেই প্লে-অফের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে শ্রেয়স বাকিদের থেকে একটু বেশিই মরিয়া হয়েছিল।” চতুর পন্টিং তাঁর অধিনায়কের আঘাতের জায়গাটা আরও খুঁচিয়ে দিয়েছেন। যাতে তিনি ফাইনাল থেকেই ওষুধ খুঁজে নেন। দু’জনের দলই ফাইনালে। ব্যর্থ বলা যাবে না। তবু ট্রফিটা ভীষণ প্রয়োজন দুই কোচের। অনাস্থার জবাব দেওয়ার জন্য।

ফাইনালেও বৃষ্টির সম্ভাবনা?

বৃষ্টির আশঙ্কায় কলকাতা থেকে আইপিএলের দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার এবং ফাইনাল অহমদাবাদে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)। অনেক আগে নেওয়া সেই সিদ্ধান্তে মুখ পুড়েছে বোর্ডকর্তাদের। রবিবার মুম্বই ইন্ডিয়ান্স এবং পঞ্জাব কিংসের দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার বৃষ্টির জন্য রাত ৯.৪৫ মিনিটের আগে শুরু করা যায়নি। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী মঙ্গলবার ফাইনালের দিনও বৃষ্টি হতে পারে অহমদাবাদে। সারা দিনই আংশিক মেঘাচ্ছন্ন থাকবে আকাশ। হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বিকাল এবং সন্ধ্যার দিকে। তাই আইপিএল ফাইনাল নিয়েও আশঙ্কা একটা থাকছেই।

খেলা সম্ভব না হলে কী হবে?

বৃষ্টির কথা মাথায় রেখে ১২০ মিনিট অতিরিক্ত সময় রাখা হয়েছে ম্যাচ শেষ করার জন্য। মঙ্গলবার কোনও ভাবেই খেলা সম্ভব না হলে রয়েছে রিজার্ভ ডে। একমাত্র ফাইনালের জন্যই বাড়তি একটি দিন বরাদ্দ রেখেছে বিসিসিআই। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, বুধবার অহমদাবাদে বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। যা আশায় রাখবে দু’দলকে। তবে দ্বিতীয় দিনও বৃষ্টির জন্য খেলা সম্ভব না হলে সুবিধা পাবে লিগ পর্বে এগিয়ে থাকা দল। সেই হিসাবে এগিয়ে থাকবে পঞ্জাব কিংস। পয়েন্ট তালিকায় শ্রেয়স আয়ারেরা ছিলেন শীর্ষে। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ছিল দ্বিতীয় স্থানে। তাই ট্রফি যাবে পঞ্জাবে।

আইপিএল ফাইনালে নানা রং থাকে প্রতি বারই। এ বারও আশা-আশঙ্কার সব রং প্রস্তুত। সতীর্থদের নিয়ে ক্যানভাস সাজাবেন কোহলি-শ্রেয়সেরা। তাঁদের লড়াই দেখতে নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে হাজির থাকবেন তিন বাহিনীর প্রধানেরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement