সোমবারের ম্যাচে হাসিখুশি শ্রেয়স। ছবি: পিটিআই।
তখন পঞ্জাবের ইনিংস ১২তম ওভার চলছে। ক্যামেরা ধরল তাঁকে। ডাগআউট থেকে একটু এগিয়ে এসে, বাউন্ডারির দড়ির বাইরে ব্যাট দিয়ে বল নাচাচ্ছেন। দেখে মনে হচ্ছিল, তাঁর থেকে সুখী মানুষ আর কেউ নেই। হবে না-ই বা কেন, মাঠে তখন দাপট দেখাচ্ছেন প্রিয়াংশ আর্য এবং জশ ইংলিস। ম্যাচ প্রায় মুঠোয়। তা-ই সেই মুহূর্তে পঞ্জাবের অধিনায়ক শ্রেয়স আয়ার সুখী হবেন না তো আর কে হবে!
সোমবার আগে ব্যাট করে মুম্বই তোলে ১৮৪/৭। সূর্যকুমার যাদবের অর্ধশতরান বাদে আর কারও বলার মতো অবদান নেই। জবাবে পঞ্জাব সেই রান তুলে নিল ১৮.৩ ওভারে, সাত উইকেট বাকি থাকতেই। সেই সঙ্গে প্রথম দুইয়ে থাকাও নিশ্চিত করে নিল। অর্থাৎ, তারা খেলবে প্রথম কোয়ালিফায়ার। সেই ম্যাচ জিতলে ১১ বছর পর উঠবে ফাইনালে। শ্রেয়স হবে প্রথম অধিনায়ক, যিনি পর পর দু’বছর দু’টি আলাদা দলকে ফাইনালে তুলবেন।
যে ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে আইপিএলের প্লে-অফের যোগ্যতা অর্জন করেছিল মুম্বই, লিগ পর্বের শেষ ম্যাচে তাদের মধ্যে সেই লড়াই দেখা গেল না। টসে হেরে আগে ব্যাট করতে নামলেও, স্কোরবোর্ডে যে বড় রান তোলা দরকার এটা সূর্যকুমার ছাড়া বাকিরা ভুলে গিয়েছিলেন। ফলে ক্রিজ়ে টিকে থাকার মতো পরিণতবোধটুকু দেখা গেল না কারও মধ্যে।
ওপেন করতে নেমে রায়ান রিকেলটন শুরুটা করেছিলেন আগ্রাসী ভাবে। তুলনায় রোহিত শর্মা খেলছিলেন একটু ধীরগতিতে। পাওয়ার প্লে-র সুবিধা কাজে লাগাতে গেলে দু’জনকেই দ্রুতগতিতে রান তুলতে হয়। সেখানে রোহিত ধীরে খেলায় চাপ পড়ে রিকেলটনের উপরে। ২৭ রানে ফিরে যান তিনি।
তিনে নেমে সূর্যকুমার আগ্রাসী খেলা শুরু করার পরেও একটু গুটিয়ে ছিলেন রোহিত। বল খেলতে সময় নিচ্ছিলেন। ফলে শট মারার ক্ষেত্রে সেই সতেজ ভাব লক্ষ্য করা যায়নি। ২১ বলে ২৪ করে তিনিও ফিরলেন সাজঘরে।
সূর্যকুমারের ব্যাটে-বলে ঠিকঠাক হচ্ছিল। কিন্তু তাঁকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য মিডল অর্ডারে অন্তত একজনের টিকে থাকা দরকার ছিল। সেটাই কেউ পারলেন না। তিলক বর্মা (১) এবং উইল জ্যাকস (১৭) টিকতে পারেননি। একটু সঙ্গ দেওয়ার চেষ্টা করেন হার্দিক পাণ্ড্য (২৬)। শূন্য রানে জীবন পাওয়ার পর দু’টি চার এবং দু’টি ছয় মেরে সূর্যের উপর চাপ কমানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু ২৬ রানে ফিরতে হয় তাঁকে।
এক সময় মনে হচ্ছিল, মুম্বই টেনেটুনে ১৫০ পার করলেন। সেখান থেকে তারা যে স্কোরে পৌঁছেছে তার নেপথ্যে বিজয়কুমার বিশাখের একটা ওভার। সেই ওভারে নমন ধীর দু’টি ছক্কা মারেন বিশাখকে। সূর্য মারেন দু’টি চার। ওভারে ২৩ রান ওঠে। তবে পরের ওভারে তা পুষিয়ে দেন অর্শদীপ সিংহ। মাত্র তিন রান দেওয়ার পাশাপাশি নমন এবং সূর্যকে সাজঘরে ফিরিয়ে দেন।
১৮৫ তাড়া করতে নেমে শুরুটা খুব ভাল হয়নি পঞ্জাবের। প্রথম ওভারে ট্রেন্ট বোল্টকে প্রিয়াংশ দু’টি চার মারলেও, দ্বিতীয় ওভারে দীপক চহরের একটি বলেও রান নিতে পারেননি প্রভসিমরন সিংহ। চতুর্থ ওভারে প্রভসিমরনের ক্যাচ ফেলেন অশ্বনী কুমার। পরের ওভারে তিনিই জসপ্রীত বুমরাহের বলে ক্যাচ নিয়ে ফেরান পঞ্জাব ব্যাটারকে।
পঞ্জাবকে চাপে ফেলে উল্লসিত হয়ে পড়েছিল মুম্বই। সেই উৎসব থামিয়ে দেন ইংলিস এবং প্রিয়াংশ। চাপের মুখে অন্যতম সেরা ইনিংস খেললেন প্রিয়াংশ। দুই ক্রিকেটারই ঠিক করেছিলেন, অকারণে ঝুঁকির রাস্তায় হাঁটবেন না। লক্ষ্যমাত্রা বিরাট না হওয়ার কারণে সেই বিলাসিতা করার জায়গাটাও তাঁদের কাছে ছিল। তাই মারার বলে মেরেছেন, না হলে জোর দিয়েছেন খুচরো রান নেওয়ার দিকে।
তবু প্রতি ওভারে একটি করে চার-ছয় আসছিলই। মুম্বই বোলারেরাও নিয়ন্ত্রণ রেখে বল করতে পারেননি। তার খেসারত দিতে হয়েছে। একমাত্র বুমরাহ বাদে কাউকেই রান আটকানোর জন্য বাড়তি দায়িত্ব নিতে দেখা গেল না। হার্দিককে ছয় মেরে ১২তম ওভারে নিজের অর্ধশতরান পূরণ করেন প্রিয়াংশ। তার দু’বল আগেই পঞ্চাশের কোঠা পেরিয়ে গিয়েছিলেন ইংলিস।
১৫তম ওভারে মিচেল স্যান্টনার প্রিয়াংশকে ফেরালেও লাভ হয়নি। তত ক্ষণে জয়ের গন্ধ পেয়ে গিয়েছিল পঞ্জাব। কেটে গিয়েছিল চাপও। ১৮তম ওভারে ইংলিশ (৭৩) ফিরলেও অসুবিধা হয়নি পঞ্জাবের।