India vs England 2022

প্রথম ছয় ওভারেই ঠিক হয়ে গেল ভাগ্য

ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ দল ঘোষণা করার পরের দিনই গল্‌ফ খেলতে গিয়ে পা ভেঙে ছিটকে যায় জনি বেয়ারস্টো। এর পরে ইংল্যান্ড দলে নিয়ে আসে অ্যালেক্স হেলসকে।

Advertisement

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২২ ০৭:০৬
Share:

ইংল্যান্ডকে ফাইনালে তোলার উল্লাস অধিনায়ক বাটলারের। ছবি সংগৃহীত।

সে দিন খবরটা শুনে মনে হয়েছিল, ইংল্যান্ডের কাছে বড় একটা দুঃসংবাদ। বৃহস্পতিবার অ্যাডিলেডে ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচটা দেখার পরে এখন বুঝতে পারছি, দুঃসংবাদটা আসলে ভারতের জন্য ছিল!

Advertisement

ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ দল ঘোষণা করার পরের দিনই গল্‌ফ খেলতে গিয়ে পা ভেঙে ছিটকে যায় জনি বেয়ারস্টো। এর পরে ইংল্যান্ড দলে নিয়ে আসে অ্যালেক্স হেলসকে। যে অইন মর্গ্যান জমানায় প্রায় তিন বছর জাতীয় দলের বাইরে ছিল। সেই হেলস (৪৭ বলে অপরাজিত ৮৬) এবং ‘জস দ্য বস্‌’ বাটলারের (৪৯ বলে অপরাজিত ৮০) দাপটে ১০ উইকেটে জিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালে চলে গেল ইংল্যান্ড। রবিবার মেলবোর্নে বাটলারদের প্রতিপক্ষ পাকিস্তান।

ভারতের এই হারকে নানা ভাবে বর্ণনা করা হচ্ছে। সত্যিই কী বলা যায় এই পরাজয়কে? লজ্জার না বিপর্যয়ের হার? এই হারের নেপথ্যে কয়েকটা কারণ উঠে আসছে।

Advertisement

সবার আগে থাকবে পাওয়ার প্লে-র ব্যাটিং। প্রথম ৬ ওভারে ভারত তুলেছিল এক উইকেটে ৩৮। ইংল্যান্ডের বোলাররা দারুণ ভাবে চাপে রেখে যায় ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের। সেখানে ইংল্যান্ড তুলে ফেলে বিনা উইকেটে ৬৩। ওই ২৫ রানের পার্থক্যটা ইংল্যান্ডের হাতে ম্যাচ তুলে দেয়। ৬ ওভারের পরে ইংল্যান্ডের আস্কিং রেট ছিল সাড়ে সাত মতো। ওরা ঝুঁকিহীন ক্রিকেট খেলে গেল। ইনিংসের শুরুতে আগ্রাসী ছিল বাটলার। তার পরে খেলা ধরে নেয় হেলস। ছোট স্কোয়ার বাউন্ডারির সুযোগ দারুণ ভাবে কাজে লাগায় এই ওপেনার। ভারতীয় বোলারদের অনায়সে স্কোয়ার লেগ-মিড উইকেট গ্যালারিতে ফেলে দিচ্ছিল। মারল সাতটা ছয়! বাটলার-হেলসকে থামানোর মতো কোনও অস্ত্র ছিল না রোহিতের হাতে।

এই ম্যাচের প্রত্যেকটা সেশনে ভারত হেরেছে ইংল্যান্ডের কাছে। একেবারে শেষের দিকে যখন হার্দিক পাণ্ড্যের ব্যাটে ঝড় উঠেছিল, তখন তাও একটু লড়াইয়ে ফিরেছিল। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হল না।

ভারতীয় দল নির্বাচন নিয়েও প্রশ্ন থাকবে। এই উইকেটে যুজ়বেন্দ্র চহালের মতো এক জন লেগস্পিনার কেন বাইরে থাকবে? ভারত দুই ফিঙ্গার স্পিনারকে খেলালো। অক্ষর পটেল এবং আর অশ্বিন। দু’জনেই শোচনীয় ব্যর্থ। টিভিতে শুনছিলাম, সুনীল গাওস্কর থেকে ইরফান পাঠান— চহালের না খেলা নিয়ে সবাই প্রশ্ন তুলেছে।

এই ম্যাচে নেতৃত্ব দেওয়ার ব্যাপারেও রোহিতের চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিল বাটলার। ইংল্যান্ড অধিনায়ক দু’জন লেগস্পিনারকে দারুণ ভাবে কাজে লাগিয়েছে। আদিল রশিদ এবং লিয়াম লিভিংস্টোন। দু’জনে সাত ওভারে দিল মাত্র ৪১ রান। এর মধ্যে রশিদ আবার তুলে নিল ভারতের সবচেয়ে দামি উইকেট— সূর্যকুমার যাদবকে। যখন ভারতের ডান হাতি ব্যাটসম্যানরা ব্যাট করছে, তখনই রশিদ আর লিভিংস্টোনকে কাজে লাগাল বাটলার। বিরাট কোহলি ওদের সে ভাবে আক্রমণ করতে পারল না। সূর্য আক্রমণ করার চেষ্টা করলেও রশিদের লেগস্পিনে বড় শট খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে বসল।

এ বার আসা যাক ভারতীয় স্পিনারদের কথায়। অক্ষর এবং অশ্বিন মিলে ৬ ওভারে দিল ৫৭ রান। শর্ট স্কোয়ার বাউন্ডারি কাজে লাগিয়ে স্পিনারদের মেরে দিল হেলস আর বাটলার। রোহিতের বোলিং পরিবর্তন নিয়েও প্রশ্ন থাকবে। সাদা বল প্রথম কয়েক ওভার সুইং করে। প্রথম ৬ ওভারের মধ্যে ভারতের ছন্দে থাকা বাঁ-হাতি পেসার আরশদীপ সিংহকে কেন একটা মাত্র ওভার দেওয়া হল, এটাও বুঝতে পারছি না। পাওয়ার প্লে-তে নতুন বলের সুইংকে কাজে লাগিয়ে এই বিশ্বকাপে উইকেট পাচ্ছে আরশদীপ। ওকে আর একটা ওভার দেওয়া যেতেই পারত। বদলে দেখলাম, যার আত্মবিশ্বাস এখন তলানিতে ঠেকেছে, সেই অক্ষরকে পাওয়ার প্লে-তে নিয়ে এল রোহিত!

পুরো বিশ্বকাপেই ভারতের ওপেনিং জুটির ব্যর্থতা চাপে ফেলে দিয়েছে দলকে।সব মিলিয়ে আরও একটা আইসিসি প্রতিযোগিতা থেকে শূন্য হাতেই ফিরতে হচ্ছে ভারতকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন