Women's ODI World Cup 2025

ভারতকন‍্যারা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন! ঘরের মাঠে শেফালি, দীপ্তিদের দাপট, দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে শাপমুক্তি হরমনপ্রীত বাহিনীর

অবশেষে আমাদের মেয়েরাও ক্রিকেটে বিশ্বজয়ী। ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারালেন হরমনপ্রীত কৌরেরা। ব্যাটে-বলে নজর কাড়লেন শেফালি বর্মা ও দীপ্তি শর্মা।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২৫ ০০:০১
Share:

বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে ভারতীয় ক্রিকেটারদের উল্লাস। ছবি: রয়টার্স।

যত ক্ষণ লরা উলভার্ট ক্রিজ়ে ছিলেন, তত ক্ষণ স্বস্তি পাচ্ছিলেন না হরমনপ্রীত কৌর। সেমিফাইনালের পর ফাইনালেও শতরান করলেন উলভার্ট। কিন্তু দলকে জেতাতে পারলেন না তিনি। অবশেষে তৃতীয় বারের চেষ্টায় শাপমুক্তি ভারতের। ঘরের মাঠে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হল তারা। ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৫২ রানে হারাল ভারত। প্রথমে ব্যাট করে ভারত ৭ উইকেট হারিয়ে ২৯৮ রান করেন। জবাবে ৪৫.৩ ওভারে ২৪৬ রানে অল আউট হয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ব্যাটে-বলে নজর কাড়লেন শেফালি বর্মা ও দীপ্তি শর্মা। এই দুই ক্রিকেটারের দাপটে ট্রফি তুললেন হরমনপ্রীতেরা।

Advertisement

রবিবার ফাইনাল শুরুর আগে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি হচ্ছিল। ফলে খেলা শুরু হতে দু’ঘণ্টা দেরি হয়। বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে টস জিতলে যে কোনও অধিনায়ক চোখ বন্ধ করে বল করার সিদ্ধান্ত নেন। উলভার্ট সেটাই করলেন। গোটা প্রতিযোগিতায় একমাত্র বাংলাদেশ বাদে কোনও ম্যাচে টস জিততে পারলেন না হরমনপ্রীত। তাতে অবশ্য ভারতের খেলার ভাগ্য বদলাল না।

প্রতিকা রাওয়াল চোটে ছিটকে যাওয়ায় সেমিফাইনালের আগে দলে নেওয়া হয়েছিল শেফালি বর্মাকে। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে রান না পেলেও ফাইনালে নিজের জাত চেনালেন শেফালি। প্রথম বল থেকে বড় শট খেলা শুরু করলেন তিনি। শেফালি আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করায় স্মৃতি মন্ধানা সময় পান। দু’জনে মিলে ভাল শুরু দেন দলকে।

Advertisement

শতরানের জুটি করেন ভারতের দুই ওপেনার। ওভার প্রতি ৬ রান করে হচ্ছিল। শেফালি ৪৯ বলে অর্ধশতরান করেন। ২১ বছর ২৭৮ দিন বয়সে বিশ্বকাপ ফাইনালে অর্ধশতরান করলেন শেফালি। পুরুষ ও মহিলাদের ক্রিকেট মিলিয়ে বিশ্বকাপ ফাইনালে সর্বকনিষ্ঠ ওপেনার হিসাবে শতরান করলেন তিনি। পুরুষদের ক্রিকেটে এত দিন এই রেকর্ড ছিল বীরেন্দ্র সহবাগের দখলে। ২০০৩ সালের বিশ্বকাপে ২৪ বছর ১৫৪ দিন বয়সে অর্ধশতরান করেছিলেন তিনি। শেফালি নিজের আদর্শ মনে করেন সহবাগকে। তাঁর খেলার ধরন অনেকটা সহবাগের মতোই। শুরু থেকে বড় শট খেলতে পারেন। যত ক্ষণ মাঠে থাকেন, তাঁকে থামানো যায় না। সেই গুরুকেই ছাপিয়ে গেলেন শেফালি। পুরুষ ও মহিলা মিলিয়ে এক দিনের বিশ্বকাপে কোনও ভারতীয় ওপেনার হিসাবেও সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেললেন শেফালি।

আগের ম্যাচে আড়াআড়ি শট খেলতে গিয়ে আউট হয়েছিলেন শেফালি। এই ম্যাচে নিজের ব্যাটিংয়ে কিছুটা বদল করেন তিনি। অনেক বেশি সোজা ব্যাটে খেলতে শুরু করেন। ফলে বল ব্যাটে ভাল ভাবে আসছিল। ১০০-র বেশি স্ট্রাইক রেটে খেলেন তিনি। অর্ধশতরান হাতছাড়া হয় মন্ধানার। ৪৫ রানে আউট হন তিনি। একটা সময় পরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন শেফালিও। পায়ে ক্র্যাম্প ধরছিল। ফলে বাধ্য হয়ে বড় শট মারার চেষ্টা করতে গিয়ে আউট হন। ৭৮ বলে ৮৭ রান করেন তিনি।

আগের ম্যাচে দুই নায়ক জেমাইমা রদ্রিগেজ় ও অধিনায়ক হরমনপ্রীত এই ম্যাচে রান পাননি। দক্ষিণ আফ্রিকার স্পিনারদের সামনে হাত খুলতে পারছিলেন না তাঁরা। জেমাইমা ২৪ ও হরমনপ্রীত ২০ রানে আউট হন। ভারতের ইনিংস সামলান দীপ্তি ও রিচা ঘোষ। দীপ্তি সময় নিচ্ছিলেন। রিচা নিজের স্বাভাবিক খেলা খেললেন। লম্বা লম্বা ছক্কা মারলেন। মাঝে একটা সময় ভারতের রান রেট কমে গিয়েছিল। রিচা সেই রান রেট আবার বাড়িয়ে দেন। ২৪ বলে ৩৪ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। দীপ্তি ৫৮ রান করেন। ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৯৮ রান করে ভারত।

দেখে মনে হচ্ছিল, অন্তত ৩০ রান কম হয়েছে। ডিওয়াই পাতিল স্টেডিয়ামে রান তাড়া করা তুলনামূলক ভাবে সহজ। বিশেষ করে শিশির পড়ায় বোলারদের কাজ আরও কঠিন হয়ে যায়। যে ভাবে দক্ষিণ আফ্রিকার দুই ওপেনার উলভার্ট ও তাজ়মিন ব্রিটস রানা তাড়া শুরু করেছিলেন, মনে হচ্ছিল সেটাই বাস্তব হতে চলেছে।

ভারতকে খেলায় ফেরাল ফিল্ডিং। এ বারের বিশ্বকাপে এর আগে পর্যন্ত ভারতের ফিল্ডিংয়ের সমালোচনা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সেমিফাইনালেও ক্যাচ পড়েছে। ফাইনালেও ক্যাচ পড়ল। কিন্তু ভারতের গ্রাউন্ড ফিল্ডিং এই ম্যাচে দুর্দান্ত হল। প্রতিটি রান বাঁচানোর জন্য নিজেদের ১০০ শতাংশ দিলেন হরমনপ্রীতেরা। ডাইভ দিতে ভয় পেলেন না কেউ। সেই ফিল্ডিংই দক্ষিণ আফ্রিকার ওপেনিং জুটি ভাঙল। সরাসরি থ্রোয়ে ২৩ রানের মাথায় ব্রিটসকে রান আউট করলেন আমনজ্যোৎ কৌর। রান পাননি আনেকে বশ (০)।

এক দিকে ছিলেন উলভার্ট। অর্ধশতরান করে খেলছিলেন তিনি। তৃতীয় উইকেটে সুনে লুসের সঙ্গে জুটি বাঁধেন অধিনায়ক। সেই জুটি ভয়ঙ্কর দেখাচ্ছিল। ঠিক তখনই ফাটকা খেললেন হরমনপ্রীত। তিনি বল তুলে দিলেন শেফালির হাতে। এর আগে এক দিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মোট ১৪ ওভার বল করেছিলেন শেফালি। সেই শেফালিই ভারতকে খেলায় ফেরান। প্রথম ওভারেই সুনে লুসকে ফেরান তিনি। নিজে বল করে নিজেই ক্যাচ ধরেন।

পরের ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকাকে আরও বড় ধাক্কা দেন শেফালি। মারিজ়ান কাপকে আউট করেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার রান তাড়া করার ক্ষেত্রে কাপের বড় ভূমিকা ছিল। সেই কাপকে ফিরিয়ে খেলার রাশ ভারতের হাতে এনে দেন তিনি। শেফালির সঙ্গে বল হাতে জুটি বাঁধলেন দীপ্তি। দু’জনে মিলে দক্ষিণ আফ্রিকার মিডল অর্ডারকে চাপে রাখলেন। ভাল বল করলেন ভারতের আর এক স্পিনার শ্রী চরণীও।

আনেরি ডের্কসেনের সঙ্গে জুটি বেঁধেছিলেন উলভার্ট। শতরান করেন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক। কিন্তু জরুরি রান রেট ক্রমাগত বাড়ছিল। ফলে ঝুকি নেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। ৩৫ রানে ডের্কসেনকে আউট করলেন দীপ্তি। তার পরেই সবচেয়ে বড় উইকেট নিলেন তিনি। ১০১ রানের মাথায় ছক্কা মারতে গিয়ে আউট হলেন উলভার্ট। ক্যাচ ধরতে গিয়ে বল হাত থেকে ছিটকে গিয়েছিল আমনজ্যোতের। শরীরের ভারসাম্য হারালেও বল তালুবন্দি করেন তিনি।

উলভার্ট আউট হওয়ার পরেও আশা ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার। গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ক্লোয়ি ট্রিয়ন ও নাদিন ডি ক্লার্কের জুটি ভারতকে হারিয়েছিল। এই ম্যাচে তা হল না। দু’জনকেই ফেরালেন দীপ্তি। বিশ্বকাপ ফাইনালে অর্ধশতরানের পাশাপাশি ৩৯ রানে ৫ উইকেট নিলেন তিনি। ম্যাচের শেষ ক্যাচ ধরলেন হরমনপ্রীত। অধিনায়কের ক্যাচে বিশ্বজয় করল ভারত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement