ভারতীয় ক্রিকেট দল। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
এশিয়া কাপের ইতিহাসে প্রথম বার ফাইনালে পাকিস্তানের মুখোমুখি হতে চলেছে ভারত। রবিবার এই ম্যাচের গুরুত্ব তাই আলাদা। প্রতিযোগিতার প্রথম দু’টি ম্যাচে সলমন আঘার দলকে সহজে হারিয়েছেন সূর্যকুমার যাদবেরা। ভারতীয় শিবির নিঃসন্দেহে আত্মবিশ্বাসী এবং শক্তিশালী। তবে দুর্বলতাও রয়েছে। যে সুযোগ কাজে লাগাতে পারে পাকিস্তান।
ভারতীয় দলের শক্তি
১) ওপেনিং জুটি
অভিষেক শর্মা এবং শুভমন গিলের ওপেনিং জুটি ভাল ফর্মে রয়েছে। দু’জনেই আগ্রাসী মেজাজে শুরু করছেন। প্রতিপক্ষ দলের বোলারদের থিতু হওয়ার সুযোগ দিচ্ছেন না। বিশেষ করে অভিষেককে অপ্রতিরোধ্য দেখাচ্ছে। ছোট বয়স থেকে একসঙ্গে খেলছেন দু’জনে। তাঁদের বোঝাপড়া বেশ ভাল। এশিয়া কাপের ভারতীয় দলের অন্যতম শক্তি এই ওপেনিং জুটি।
২) ব্যাটিং
ভারতীয় দলের ব্যাটিং অর্ডার বেশ বড়। আট নম্বরে ব্যাট করতে নামেন অক্ষর পটেল। অক্ষর বোলিং অলরাউন্ডার হলেও ম্যাচ জেতাতে পারেন ব্যাট হাতে। অভিষেক-শুভমন ওপেনিং জুটির পর একে একে ২২ গজে আসেন সূর্যকুমার যাদব, তিলক বর্মা, সঞ্জু স্যামসন, শিবম দুবে, হার্দিক পাণ্ড্য। সকলেই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের উপযোগী ব্যাটিং করতে পারেন। যে কেউ ম্যাচ জেতাতে পারেন। সূর্যকুমারের দলের অন্যতম শক্তি ব্যাটিং।
৩) জসপ্রীত বুমরাহ
বিশ্বের অন্যতম সেরা জোরে বোলার। এশিয়া কাপে ধারাবাহিকতার খানিকটা অভাব দেখা গেলেও বুমরাহকে সব দলই সমীহ করে। চার ওভারেই ম্যাচের রং বদলে দিতে পারেন। রান তোলার গতি রুখতে পারেন। যে কোনও সময় উইকেট তুলে নিতে পারেন। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞেরা বলেন, বুমরাহের মতো বোলার যে কোনও দলের সম্পদ। এশিয়া কাপ ফাইনালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের অন্যতম শক্তি বুমরাহ।
৪) অলরাউন্ডার
এশিয়া কাপে ভারতের প্রথম একাদশে থাকছেন চার জন অলরাউন্ডার। অক্ষরের মতো হার্দিকও ব্যাট বা বল হাতে ম্যাচ বের করে নিতে পারেন। বোলার হিসাবে শিবম এবং অভিষেকও এশিয়া কাপে ভরসা দিচ্ছেন অধিনায়ককে। অলরাউন্ডার বেশি থাকায় দলের ব্যাটিং গভীরতা যেমন থাকছে, তেমনই বোলিং আক্রমণের ক্ষেত্রে সূর্যকুমারের হাতে বিকল্প থাকছে বেশি। পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সহজ হচ্ছে। ভারতীয় দলের এটাও একটি শক্তির জায়গা।
৫) স্পিন আক্রমণ
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ভারতীয় দলের স্পিন বোলিং আক্রমণ বিশ্বের অন্যতম সেরা। বিশেষ করে এশিয়ার স্পিন সহায়ক উইকেটে। কুলদীপ যাদব, বরুণ চক্রবর্তীর সঙ্গে রয়েছেন অক্ষর। কুলদীপের বল খেলতে কম-বেশি সব দলই সমস্যায় পড়ছে। ২২ গজের অন্য প্রান্ত থেকে চাপ বাড়াচ্ছেন বরুণ এবং অক্ষর। দুবাইয়ের গরম, স্পিন সহায়ক মন্থর পিচ কুলদীপেরা কাজে লাগাচ্ছেন ভাল ভাবে। শিশিরের সমস্যা না থাকায় রাতের দিকেও বল গ্রিপ করতে সমস্যা হচ্ছে না তাঁদের। স্পিন বল করে উইকেট তুলতে পারেন অভিষেকও। স্পিন বোলিং আক্রমণ নিঃসন্দেহে ভারতীয় দলের অন্যতম শক্তি। যদিও শ্রীলঙ্কা ম্যাচের পর ভারতীয় স্পিনারদের নিয়েও কিছুটা উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। কুলদীপ, বরুণ, অক্ষর মিলে শুক্রবার ১১ ওভার বল করেছেন। সম্মিলিত ভাবে ৯৪ রান খরচ করে ২ উইকেট নিয়েছেন তাঁরা। ফাইনালেও স্পিনারেরা এমন পারফর্ম করলে সমস্যায় পড়তে পারে ভারতীয় শিবির।
ভারতীয় দলের দুর্বলতা
১) সূর্যকুমার যাদব
অধিনায়ক ফর্মে নেই। কোনও ম্যাচেই তাঁকে চেনা মেজাজে ব্যাট করতে দেখা যাচ্ছে না। বড় শট নিতে পারছেন না। ব্যাটিয়ের সময় আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি দেখা যাচ্ছে খানিকটা। ব্যাটিং অর্ডারের তিন বা চার নম্বরে নামছেন তিনি। ফাইনালে দ্রুত ভারতের এক বা দু’উইকেট পড়ে গেলে চাপ তৈরি হবে। ফর্মে না থাকা সূর্যকুমার সেই চাপ কতটা সামলাতে পারবেন, তা নিয়ে কিছুটা হলেও সংশয় থাকছে।
২) ফিল্ডিং
এশিয়া কাপে ভারতীয় দলের সবচেয়ে খারাপ পারফরম্যান্স ফিল্ডিংয়ে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ম্যাচ পর্যন্ত ১২টি ক্যাচ ফেলেছেন ভারতীয়েরা। তার মধ্যে কয়েকটি সহজ ক্যাচ ফস্কানোও রয়েছে। আর কোনও দল এত ক্যাচ ফেলেনি। ক্যাচ ধরার ক্ষেত্রে এশিয়া কাপে ভারতীয় দলের সাফল্য ৬৭.৫ শতাংশ। যা হংকংয়ের চেয়েও খারাপ। সাধারণ ফিল্ডিংয়ে ক্ষেত্রেও বেশ কিছু ভুলভ্রান্তি দেখা যাচ্ছে। এশিয়া কাপ ফাইনালে ফিল্ডিংয়ের দুর্বলতা ভারতীয় দলের বিপক্ষে যেতে পারে।